মানিকছড়িতে বিষাক্ত তামাকের ছোবল!

তামাক চাষ

মানিকছড়ি প্রতিনিধিঃ

মানিকছড়ির তৃণমূলের আনাচে-কানাচে ফসলি জমিতে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাকের বাম্পার ফসল হয়েছে! ফলে এর প্রভাবে এলাকায় বাড়ছে শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সার রোগ। এ নিয়ে চিকিৎসক ও সচেতনমহল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও প্রশাসন একেবারেই নির্বিকার।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার তৃণমূলের লোকালয়ের কৃষি জমিতে এবার পুরোদমে ‘বিষবৃক্ষ’ তামাক চাষ করেছে কৃষকরা। এসব জমিতে পূর্বে প্রচুর শাক-সবজি ও ধান চাষ হলেও কতিপয় কৃষকদের অজ্ঞতায় দেশের প্রভাবশালী তামাক উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো দরিদ্র চাষাদের মাঝে দাঁদন হিসেবে অগ্রিম অর্থ বিতরণ করে তামাক চাষাবাদে উৎসাহ দিয়ে তা চাষ করাচ্ছে। ফলে অজ্ঞ কৃষকরা তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে না জেনে বসতবাড়ীর আশে-পাশে, নদীর চরে, কিংবা শাক-সবজির ক্ষেতে তামাক চাষ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত কৃষি ঋণ সুবিদা নিয়ে অনেকে ধান ও সবজি চাষ না করে তামাক চাষ করেছে!

উপজেলার কালাপানি, বাটনাতলী, ছদুরখীল, বাঞ্চারামপাড়া, তুলাবিল, হেডম্যানপাড়া,বড়বিল, যোগ্যাছোলার প্রত্যন্তাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, লোকালয়ের যে দিকে দু’চোখ যায় সেখানেই তামাকের বাম্পার ক্ষেত! কৃষকরা ব্যস্ত চুলা তৈরিতে।

ছদুরখীলের কৃষক রমজান আলী, সাইফুল, আবদুল আজিজ, গোরখানার কৃষক আবুল কালাম, নাছির, মো. সাইদুল ইসলাম, মো. মূছার সাথে কথা হলে তারা জানান, অধিক ফলন ও লাভের আশায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো থেকে ঋণ নিয়ে এবার তামাকের চাষ করেছি। এখন জমি থেকে পাতা তুলে চুলোয় তা পুড়াতে ব্যস্ত। তামাকের ক্ষতিকর দিক সমন্ধে তারা জানে না। প্রতিটি চুলায় ৭০ বেল তামাকপাতা এক সাথে পোড়াতে হয়। প্রতি বেলে ৪০ কেজি।

১ হেক্টর জমিতে কমপক্ষে ৭০ বেল পাতা হয়ে থাকে। আর এ পাতা পোড়াতে ৪ টন কাঠ প্রয়োজন হয়। এতে একদিকে যেমন তামাকের নিকোটিনে মানুষের শ্বাস-কষ্ট ও ক্যান্সার রোগ বাড়ছে অন্যদিকে বন সম্পদ হচ্ছে সাবার। আর তামাকের ১ নং পাতা ১৫০ টাকা হারে কেজি মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা পেয়ে থাকে। পাতা পোড়ানো শেষ হলে ট্রাকে ট্রাকে তা প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই সমতলে পাচার করা হয়। প্রকাশ্য এভাবে মানব দেহের ক্ষতিকর নিকোটিনের অবাধ চাষাবাদ হলেও প্রশাসন রয়েছে অন্ধকারে!

জানা গেছে, উপজেলার ১০/১২ হেক্টর জমিতে এবার ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো অগ্রিম ঋণ দিয়ে তামাক চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর ফিল্ড সুপারভাইজার মো. রাশেদ নিজেদের আড়াল করে জানান, আমরা কৃষকদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করে থাকি মাত্র! তা চাষে কাউকে উৎসাহিত করি না। তিনি আরো জানান, এবার কৃষকরা চাষ কম করেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.শফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বার বার তামাকের কূফল সম্পর্কে অবহিত করেও ক্ষান্ত করা যাচ্ছে না। চাষাদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে তামাক উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো দূর্গম লোকালয়ে চাষ অব্যাহত রাখছে। লোকালয়ে গিয়ে কৃষকদের বুঝিয়ে ও এ থেকে কৃষকদের সরানো যাচ্ছে না। এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম বলেন, এটি নিঃসন্দেহে দুঃসংবাদ! এর প্রভাবে এলাকায় শ্বাস-কষ্ঠ ও ক্যান্সার রোগি বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য শ্বাস কষ্টের রোগি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। অচিরেই যদি তামাকের চাষ রোধ করা না যায় তাহলে এ অঞ্চলের জন-জীবন হুমকির মূখে পড়বে! সকলের উচিত দ্রুত এর ক্ষতিকর প্রভাব সর্ম্পকে জনসচেতনা সৃষ্টি করা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সনজীদা শরমিন জানান, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। ফলে অতীতের চেয়ে তামাক চাষ অনেক কমে এসেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন