মানুষ হিসেবে কি পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিরাপত্তার অধিকার নাই?

pathoker avimot

সাইফুল ইসলাম:
প্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশ রূপের ভান্ডার। আর এই রূপের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখানে আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে যেখানেই যাবেন দেখবেন শুধু সবুজ আর সবুজ। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে নিচের জলধারার দিকে তাকাতেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। পাহাড় বেয়ে স্বচ্ছ পানির ঝর্নাধারার এত সৌন্দর্য আর কোথাও পাবেন না। রাতের পার্বত্য চট্টগ্রাম আপনাকে নতুন একটি রূপের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। রাতে পাহাড়ের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছোট ছোট কুটির থেকে মিটিমিটি আলো দেখে আপনার মনে হবে আপনি সৌরজগতের হাজারো নক্ষত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন।আপনারা অনেকেই জানেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের কথা। এই সৌন্দর্য্ পার্বত্য চট্টগ্রামের শুধুই বাহ্যিক রূপ। এর অভ্যন্তরীণ রূপ সম্পূর্ণ বিপরীত।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে মূলত দুটি জাতি। বাঙ্গালী আর উপজাতি। আমরা সব সময় উপজাতিদের জীবন ধারা নিয়ে লিখে থাকি। তাই আপনারা জানেন উপজাতিদের কথা। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে, ওই উপজাতিদের তুলনায় বহুগুণ অবহেলিত ও মানবেতর জীবন যাপন করছে পার্বত্য বাঙ্গালীরা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মৌলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িকসহ প্রায় সকল মৌলিক অধিকার বঞ্চিত মানুষগুলোই হল পার্বত্য বাঙ্গালী। বাংলাদেশ ডিজিটাল হতে চললেও এই মানুষগুলোর জীবনে ডিজিটালাইজেশনের একটুও ছোঁয়া নেই। মান্ধাতার আমলের জমিদারী প্রথা তথা সার্কেল চীফ(রাজা), হেডম্যান, কারবারী, বাজার চৌধুরী ইত্যাদি প্রথার যাঁতাকলে পিষ্ঠ এ মানুষগুলোর জীবন আজ অতিষ্ঠ। তাছাড়া এখানে উপজাতিরা শুধু অত্যাচার করে, আর পার্বত্য বাঙ্গালীরা নির্বাক হয়ে সহ্য করে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশ সরকার সমতল থেকে বেশ কিছু বাঙ্গালী পরিবারকে নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে পুনর্বাসন করে। তখন থেকেই উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হত্যা করতে শুরু করে এসব অসহায় বাঙ্গালীদের। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত নিরীহ পার্বত্য বাঙ্গালীদের ওপর হত্যাকান্ড চালাতে থাকে এরা। একটা সময় পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমেও প্রচার হতো না। তাই অনেকেই জানতেও পারলো না সেই সব নির্মম ও নৃসংশ ঘটনা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ১৯৮৯ সালে তত্কালীন সরকার পাহাড়িদের অযৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে উপজাতিদের অগ্রাধিকার দিয়ে ঘোষণা করল স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন। কিন্তু উপজাতি সন্ত্রাসীরা অত্যাচার অব্যাহতই রাখল। পরে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির জন্য সন্ত্রাসীদের সাথে বাংলাদের সরকার একটি চুক্তি সাক্ষর করেন। চুক্তিটির নামকরণ করা হয় ‘শান্তি চুক্তি’। শান্তি চুক্তিটি ১৯৮৯ সালে ঘোষিত স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন থেকে অধিকতর মারাত্মক। ১৯৮৯ সালের স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন করে বাঙ্গালিদের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে তা বহাল রাখা হয়েছে এবং শুধু তাই নয় আরো ভয়াবহ ও অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে এই চুক্তির জন্য পার্বত্য বাঙ্গালীরা হারালো তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িকসহ প্রায় সকল প্রকার মৌলিক অধিকার।

এবার জেনে নেয়া যাক পার্বত্য বাঙ্গালীরা কী কী বঞ্চনার শিকার?

১। শিক্ষাক্ষেত্রে : দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতিদের জন্য ভর্তির কোটা নির্ধারিত আছে। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি, ডেন্টাল কলেজে ১টি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি, বিআইটি চট্টগ্রামে ২টি, রাজশাহীতে ২টি, কারিগরী বিদ্যালয় রাঙ্গামাটিতে ১০টি, কারিগরী বিদ্যালয়ে ৩০টি, চট্টগ্রামে ৫টি, ফেনীতে ৫টি, কুমিল্লায় ৫টি, সিলেটে ৫টি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি, কৃষি কলেজ ঢাকা ৩টি, প্যারা মেডিকেল কলেজ রাঙ্গামাটি ১০টি, মহিলা ক্যাডেট কলেজ ৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য বাঙ্গালী ছাত্র ছাত্রীদের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়। অথচ অনেক কম মেধাসম্পন্ন উপজাতি ছাত্রছাত্রীরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

অনেকেই হয়তো বলবেন, উপজাতিরা পাহাড়ে থাকে, ওদের শিক্ষার সুযোগ সুবিধা কম, তাই ওদের জন্য কোটা রাখা হয়েছে। তাহলে স্বাভাবিক কারণে এই প্রশ্নও তোলা যায় যে, পার্বত্য বাঙ্গালীরা কি একই পাহাড়ে বাস করছে না? পার্বত্য বাঙ্গালীদের কি শিক্ষার সুযোগ সুবিধা বেশি?

২। ব্যবসার ক্ষেত্রে : পার্বত্যাঞ্চলে ব্যাংক ঋণের বার্ষিক সুদ উপজাতিদের জন্য ৫%। অথচ বাঙ্গালিদের জন্য তা ১৬%। বাঙ্গালিদের আয়কর দিতে হয়। উপজাতিদের আয়কর দিতে হয় না। ঠিকাদারী, কাঠের পারমিটসহ সব ধরনের ব্যবসায় বাণিজ্যের সিংহভাগ উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ব্যয়ের বরাদ্দ দুই লক্ষ টাকার মধ্যে সেগুলোর ঠিকাদারী সম্পূর্ন উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত, দুই লক্ষ টাকার উর্ধ্বে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের ১০% উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত থাকে, বাকি ৯০% ঠিকাদারীতে তারা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দখল করে। অথচ এই রকম কোন সুবিধাই পার্বত্য বাঙ্গালীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

কেন উপজাতিদের এতো ছাড় ও অগ্রাধিকার?

একবার ঘুরে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। জরিপ করে দেখতে হবে না! এমনিতেই বুঝতে পারবেন। চোখের সামনে যত দিনমজুর, রিক্সাচালক, নৌকার মাঝি, কৃষক দেখবেন তার প্রায় ৯৮% পার্বত্য বাঙ্গালী। পক্ষান্তরে ওই দিনমজুরের মনিব, রিক্সাচালকের যাত্রী, নৌকার যাত্রীদের বেশিরভাগই উপজাতি। তাহলে বলুন কারা বেশী দরিদ্র? উপজাতিরা নাকি পার্বত্য বাঙ্গালীরা?

৩। চাকরী ক্ষেত্রে : জাতীয় চাকরীর ৫% উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। কোন কোন চাকরীর ক্ষেত্রে উপজাতিদের বয়সসীমা ৫ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা উচ্চতাও শিথিলযোগ্য। তাছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজাতিদের চাকরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাঙ্গালীদের বেলায় তা প্রযোজ্য নয়।
কেন এ বৈষম্য? পার্বত্য বাঙ্গালীদের চাকরীর প্রয়োজন নেই তাই? চাকরী কি শুধু উপজাতিদের প্রয়োজন? নাকি উপজাতিরা কাজে দক্ষ বেশী?

৪। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে : পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, আঞ্চলিক ও জেলা পারিষদের চেয়ারম্যান এবং উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান এমন গুরুত্বপূর্ণ সব পদেই সরকার কর্তৃক উপজাতিদের নিয়োগ করার ফলে, উপজাতিরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী।অন্যদিকে পার্বত্য বাঙ্গালিদের নিজ দেশে পরবাসীর মত জীবন যাপন করতে হচ্ছে। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সহ সকল ক্ষেত্রে পার্বত্য বাঙ্গালীরা বৈষম্যের শিকার। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। ২২ সদস্য বিশিষ্ট জেলা পরিষদে বাঙ্গালী সদস্য হল মাত্র ৭ জন। সুতরাং এই পরিষদ কার স্বার্থে কাজ করবে তা সহজেই অনুমেয়। উপজাতিদের মধ্য থেকে কেবল মন্ত্রীই নিয়োগ করা হয় না, বরং মন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ১৪ সদস্য বিশিষ্ট যে উপদেষ্টা কমিটি আছে তাতে মাত্র ৩ জন বাঙ্গালী সদস্য। পার্বত্য বাঙ্গালীদের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও বা সক্রিয় রাজনীতি করলেও কখনও মন্ত্রী, এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিংবা আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ন পদে আসতে পারে না।

তাহলে পার্বত্য বাঙ্গালীরা কি রাজনীতি করবে শুধু উপজাতিদের সহকারী পদে থাকার জন্য?

৫। বিচারের ক্ষেত্রে : ‘আইন সবার জন্য সমান’ এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য নয়। উপজাতিদের তিনটি সন্ত্রাসী সংগঠন দিন রাত অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজী, ধর্ষণ, চোরাচালানীসহ অনেক অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত থাকলেও কোন আইন তাদের স্পর্শ করতে পারে না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল বিগত এক-এগার সরকারের সময় যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ সব মন্ত্রী ও এমপিদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল তখনও উপজাতিরা ছিল বিচারের আওতামুক্ত। প্রকাশ্যে দিবালোকে উপজাতি সন্ত্রাসীরা দেশি বিদেশী অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলি করে কিন্তু আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেফতার করতে পারে না। ১৯৭৭ সালে থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী নিধনের উল্ল্যেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল, যার বিচার এখনও পার্বত্য বাঙ্গালিরা পায়নি-

৬ মে ১৯৭৭: আব্দুল কাদীরসহ পাঁচ সেনা সদস্যকে কর্তব্যরত অবস্থায় সাঙ্গু নদীতে হত্যা করে।
২৫ অক্টোবর ১৯৭৭: নায়েক আব্দুল গনি মিয়া, নায়েক আব্দুস সাত্তার, নায়েক আরিফ, সিপাহী আলী হোসেন, সিপাহী লুৎফর রহমান ও সিপাহী আব্দুল খালেক মোল্লাকে বান্দরবানে হত্যা করে।
২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯: সাঙ্গু নদীতে এক সেনাসদস্যকে হত্যা ও প্রচুর গোলাবরুদ লুট করে।
৫ জুলাই ১৯৭৯: দুই আনসার সদস্যকে অপহরণ করে কাপ্তাই নতুন বাজার থেকে।
১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯: নায়েক এসএম রুহুল আমীনকে হত্য করে দিঘীনালায়।
১৪ অক্টোবর ১৯৭৯: পাঁচ সেনা সদস্যকে হত্যা করে খাগড়াছড়িতে।
১৯ ডিসেম্বর ১৯৭৯: লংগদুতে রাতের আঁধারে কয়েকটি গ্রামে হামলা করে ২০ জন নিরীহ বাঙ্গালিকে হত্যা করে ও ৪০২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে আহত হয় প্রায় ৪০ জন বাঙ্গালী।
২৩ জানুয়ারী ১৯৮০: খাগড়াছড়িতে ৩জন সেনাসদস্যকে হত্যা করে। এতে আরো ৫ জন সেনাসদস্য আহত হয়।
২১ এপ্রিল ১৯৮০: ফালাউংপাড়া থেকে ১১নং রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ২০ জন সদস্যকে হত্যা করে প্রচুর গোলাবারুদ লুট করে।
১ মার্চ ১৯৮০: ঘন্টিছড়াতে মেজর মহসিন আলমসহ ২২ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করে।
২৫ মার্চ ১৯৮০: কাউখালীতে হামলা করে। এতে উভয় পক্ষের নিহত হয় ২৯ জন এবং আহত হয় প্রায় ১১ জন।
১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮০: কাউখালী, কচুখালী ও বেতছড়িতে হামলা চালিয়ে ৬ জন নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে হত্যা করে। এতে আহত হয় প্রায় ২৫ জন।
২৯ এপ্রিল ১৯৮৪: মাটিরাঙ্গায় গণহত্যা চালায়। এতে হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
৩১ মে ১৯৮৪: ভূষণছড়া ও বরকলে গণহত্যা চালায়। এতে নিহত ৮৮জন, অপহৃত ১৮জন, আহত ৩৩জন এবং প্রায় ২৬৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।
১৯ জুলাই ১৯৮৬: খাগড়াছড়িতে ১জন সেনাসদস্যকে হত্যা করে। আহত প্রায় ৭ জন।
২২ জুলাই ১৯৮৬: দিঘীনালায় সশস্ত্র হামলায় ২৪ জন নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে হত্যা করে। ৩২ জন বাঙ্গালী আহত হয়।
৭ আগস্ট ১৯৮৬: ২ জন আনসার সদস্যকে অপহরণ করে এবং পরে হত্যা করে।
২১ জুন ১৯৮৭: নাড়াইছড়ির অদূরে হামলা চালিয়ে সেনাসদস্য মোহন লাল, আব্দুর রাজ্জাক ও ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করে।
২৪ নভেম্বর ১৯৮৭: শিলছড়িতে ২ সেনাসদস্যকে হত্যা করে।
২৭ জানুয়ারী ১৯৮৯: বন বিভাগের কর্মকর্তা আবুল হোসেন, বজল আহমেদ ও মাহবুব আলমকে অপহরণ করে।
৪ মে ১৯৮৯: লংগদুতে হামলায় ১১ জন বাঙ্গালিকে হত্যা করে।
১৬ এপ্রিল ১৯৯০: নাইক্ষ্যংছড়ি ও বালিপাড়ায় ১৯ জন বাঙ্গালীকে গুলি করে হত্যা করে।
১০ জানুয়ারী ১৯৯২: খিরাম বন বিভাগের কার্যালয়ে হামলা করে এবং ৬ জনকে হত্যা করে।
২ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২: লংগদুতে চলন্ত লঞ্চে বোমা বিস্ফোরন করে ১৭ জন বাঙ্গালীকে হত্যা করে।
২৯ জুন ১৯৯২: রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি সড়কে দুজন সেনা সদস্যকে হত্যা করে।
১৪ জুন ১৯৯৫: ব্যাংক লুট করে ২০ সদস্যের একটি শান্তি বাহিনীর দল। ব্যাংকের দুই কর্মচারীকে অপহরণ করে।
৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬: পাকুয়াখালীতে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে ৩৫ জন নিরীহ বাঙ্গালী কাঠুরীয়াকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এছাড়া আরো অগনিত হত্যাকান্ড হয়েছে এবং আজো হচ্ছে যার বিচার হয়না। কেন এ সকল হত্যকান্ডের বিচার হয়নি? বাঙ্গালীরা আইনকে শ্রদ্ধা করে, এজন্যই কি বিচার পাবে না? আইন কি উপজাতিদের জন্য নয়?

৬। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে : পার্বত্য বাঙ্গালীদের প্রধান ব্যবসা হল কাঠের, বাঁশ, মাছের ব্যবসা, ঠিকাদারী ইত্যাদি। এই সব ব্যবসা করতে হলে উপজাতি সন্ত্রাসীদের নিয়মিত চাঁদা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে টোকেন নবায়ন করতে হয়। লাইসেন্স না থাকলে অপহরণ অথবা খুনের শিকার হতে হয় পার্বত্য বাঙ্গালিদের। তাছাড়া বিনা অপরাধেও পার্বত্য বাঙ্গালীদের অপহরণ করা হয়। সন্ত্রাসীরা মোটা অঙ্কের (৪০লাখ থেকে ৩কোটি) টাকার বিনিময়ে অপহৃত কিছু কিছু লোককে ফেরত দেয়। আবার মাঝে মাঝে টাকা নিয়েও ফেরত না দিয়ে হত্যা করে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও পার্বত্য বাঙ্গালীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উৎখাত করার ও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য মোবাইল অপারেটরদের প্রকৌশলী বা কর্মীরা আসলে উপজাতি সন্ত্রাসীরা তাদেরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
মানুষ হিসেবে কি পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিরাপত্তার অধিকার নাই?

৭। বাসস্থানের ক্ষেত্রে : প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে দেশের যেকোন স্থানে বসতি স্থাপন করার। কিন্তু উপজাতিরা চায় না যে সমতল থেকে কোন মানুষ এসে পার্বত্যাঞ্চলে বসতি স্থাপন করুক। তাই তারা শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য বাঙ্গালী উত্‍খাত করতে উঠেপরে লেগেছে। সরকারী বিভিন্ন মন্ত্রী বা কর্মকর্তারাও বাঙ্গালীদেরকে পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী মনে করছেন না। তারা বাঙ্গালীদেরকে রিফিউজি হিসেবে দেখছেন। তাই নিজ দেশে বাঙ্গালীরা আজ পরবাসী হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। প্রত্যেক সরকার পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের অধিকারকে জলাঞ্জলি দিয়ে উপজাতিদের অযৌক্তিক দাবী মেনে নিচ্ছে শুধু ভোটের আশায়। আর তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে বাঙ্গালী উত্ৎখাতের গোপন নীল নকশা ও ষড়যন্ত্র।

একবার ভেবে দেখেছেন, এতগুলো বাঙ্গালী সমতলে এসে থাকবে কোথায়? নিশ্চই কোন বস্তিতে বা রিফিউজি আশ্রমে। নিজের দেশে বাঙ্গালীরা রিফিউজি হয়ে থাকবে এই জন্য কি ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিল? আচ্ছা না হয় থাকল রিফিউজি হয়ে, কিন্তু জীবিকার জন্য কি করবে?

এতো সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরেও উপজাতীয়দের মন ভরেনি। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এই সব বাঙ্গালীদের উচ্ছেদ করে স্বাধীন “জুম্মুল্যান্ড” নামে একটি দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। বাঙ্গালীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে সেই চাঁদার টাকায় বাঙ্গালীদের মারার জন্য উন্নত অস্ত্র কিনছে। দেশ বিদেশে সুনাম অর্জনকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে বদনাম রটাচ্ছে।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? সমতলের লোকেরা পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিয়ে আর কত ভুল ধারণা পোষণ করবে? আজ সময় এসেছে পার্বত্য বাঙ্গালীদের পরবাসী জীবন সম্পর্কে সকল দেশবাসীর একটু সচেতন হওয়ার।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

3 Replies to “মানুষ হিসেবে কি পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিরাপত্তার অধিকার নাই?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন