মিয়ানমারে সংঘাত: এপারে আসা ব্যবসায়ীদের মুখে ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা

fec-image

মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলের রাখাইন রাজ্য ঘিরে চলা জান্তাবিরোধী সংঘাত বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় পার হয়েছে এ সংঘাতময় পরিস্থিত।

এত দিনে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই কতদূর এগিয়েছে– সেটি এখন বড় প্রশ্ন। আরাকান অঞ্চলের একাংশে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত। এপারে অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার কয়েকটি এলাকা। কিছুদিন ধরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ কম পাওয়া যাচ্ছে, রাত গড়ালেই সংঘাত তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে, যা চলে ভোর পর্যন্ত– এমনটা জানিয়েছেন টেকনাফ সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সবশেষ সোমবার (১৮ মার্চ) রাত ১১টা থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসে। সংঘাতের শুরু থেকে গোলাগুলির আওয়াজ সব সময় শোনা যাচ্ছে। তবে আগের চেয়ে সোমবার রাতে এই আওয়াজ ছিল অনেক বেশি।

এ বিষয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারাবি নামাজ শেষ করে একটা দোকানে বসে আছি। হঠাৎ ওপার থেকে গুলি ও মর্টার শেলের বিকট আওয়াজ আসতে শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো আমাদের এখানে মাটি কেঁপে উঠেছে।’

সীমান্তের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক থেকে চলা সংঘাতে রাখাইনের উপ শহর মংডু, বুচিডং ও রাচিডং লন্ভডন্ড হয়ে পড়েছে। রাখাইন রাজ্যের রাজধানী ও বন্দর নগরী সিতওয়ের সঙ্গে এই তিন শহরের সরাসরি সড়ক ও নৌপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। শহরগুলোয় খাদ্যসামগ্রীসহ জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে– এ কারণে দিনের বেলায় সংঘাত সীমিত রেখে রাতে লড়ছে উভয় পক্ষ।

এ বিষয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘বেশকয়েক দিন ধরে মংডুর আশপাশের গ্রামগুলোতে দিনের বেলায় গোলাগুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি। তবে রাতে কয়েকটি গ্রামে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যেত। গত রাতে পর পর বিকট শব্দ, মর্টার শেল বিস্ফোরণ এপারের লোকজনকে ভাবিয়ে তুলেছে।’

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির সীমান্ত বাণিজ্য কার্যক্রম চলে রাখাইনের সিথুয়ে বন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে।

এপারে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর জানান, টানা দেড় মাসের বেশি ধরে মংডুর উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে গুলি, শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ ঘটছে। লন্ভডন্ড হয়ে পড়েছে মংডু উপশহরসহ উত্তর দিকের কুমিরখালী, বলিবাজার, নাকপুরা, নাইচাডং, কোয়াচিডং, কেয়ারিপ্রাং ও পেরাংপ্রুসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।

এদিকে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘রোজার মাসেও রাতে বিস্ফোরণের শব্দ এপারের লোকজনের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। শক্তিশালী গ্রেনেড ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, হাঙ্গরডেইল, কুলালপাড়া, অলিয়াবাদসহ বেশকটি গ্রাম। শিগগিরই যে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে, সে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।’

তবে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাতের তীব্রতার ব্যাপারে অবগত হয়ে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, সীমান্ত পরিস্থিতির পাশাপাশি রাখাইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের সবসময় তৎপর রাখা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন