মিয়ানমারে গোলাবর্ষণ অব্যাহত, সীমান্তের ৩ গ্রাম জনমানব শূন্য

fec-image

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ডেকুবুনিয়া ক্যাম্পে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি ও মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক গুলি বিনিময় ও বোমা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টা থেকে এই রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বোমা বর্ষণ চলছে।

সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তুমব্রু কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া ও বাজার পাড়ায়। এতে আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে ৩ গ্রামের হাজারো মানুষ। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে ২ জন। এসময় কোনার পাড়ার কয়েকটি ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আহতরা হলেন, কোনার পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর (৫০) ও রহমা বেগম( ৪০)। আহতদের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্রোহী গ্রুপের ব্যাপক গুলাগুলির কারণে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি)র ৪০ জনেরও বেশি সদস্য বাংলাদেশের তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।

এছাড়া ৩০ জনেরও বেশি বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ডোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গুলি বর্ষণের পাশাপাশি, মটারশেল নিক্ষেপ ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হেলিকপ্টার থেকে গোলা বর্ষণ করেছে। এতে সীমান্তের বাজার ঘাট বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের চারিদিক বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি ঘিরে রেখেছে এবং বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি দখলে নিয়েছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিজিপির কিছু সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি নিরাপত্তা বাড়িয়েছে সীমান্তে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সীমান্তে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সীমান্তের দিকে নজর রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের জের ধরে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তেও উত্তেজনা চলছে।

এদিকে বর্তমানে সীমান্তে জুড়ে উত্তেজনা বিরাজমান। সীমান্ত জুড়ে চলছে আতঙ্ক। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হেলিকপ্টার থেকে গোলা বর্ষণ চলছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দীল মোহাম্মদ জানান, ৩ গ্রামের হাজারো মানুষ গত রাত থেকে বসতবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। গরু, ছাগল, হাস, মুরগি ওই অবস্থায় রেখে ঘরবাড়ি ছেড়েছে। মালামাল নেওয়ার ও সুযোগ হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গোলাবর্ষণ, জনমানব শূন্য, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন