মিয়ানমারে সংঘাত: সীমান্ত পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিজিবি ডিজি
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ চলমান সংঘর্ষের মধ্যে সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, আজ বুধবার বিজিবির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের অধীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন।
পরিদর্শন শেষে দুপুর ১২টায় ঘুমধুমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজে বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।
এদিকে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে মঙ্গলবার বান্দরবানে এক বাংলাদেশি এবং উখিয়ায় ৪ জন আহত হন।
এর আগে সোমবার ঘুমধুম সীমান্তের জলপাইতলীতে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন।
এছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে জীবন বাঁচাতে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৬৪ জন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য, সেনা সদস্য, পুলিশ সদস্য, ইমিগ্রেশন সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক আছে বলে জানা গেছে।
মিয়ানমারে সংঘাত চলাকালে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নতুন করে ৬৫ জন রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের পুশব্যাক করেছে।
এছাড়া মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঘুমধুমের উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ২৮টি পরিবারের ১৪০ জন।
আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা হলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ড তথা পশ্চিমকুল, কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া, ভাজাবনিয়া, তুমব্রু বাজার এলাকার।
ঘুমধুম স্থানীয় এক নারী ইউপি সদস্য জানান, আমরা সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি তাদেরকে খাবার, শীতের কাপড়সহ নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যায় সীমান্ত পরিদর্শনে এসে পার্বত্য বান্দরবান জেলার জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের জেরে উত্তেজনা চলছে বাংলাদেশ সীমান্তে। আমরা সীমান্ত এলাকার মানুষের আশ্রয়ের জন্য ২টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে আহ্বান করব আপনারা সীমান্ত এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যান। আমরা সবাই একসাথে কাজ করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথেও কথা হয়েছে। যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাহলে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাব।
এসময় তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের ফেরত পাঠানো বা পুশব্যাক করার জন্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি তাদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে পারব।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সিমান্তের পরিস্থিতি কিছুটা আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলেও জানান বান্দরবান জেলা প্রশাসক।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, আমরা বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং জেলা প্রশাসক একসাথে কাজ করছি। বিজিবির কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে তা আমরা করছি। আরও সহায়তা লাগলে আমরা করবো।
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।