মিয়ানমারে ৪০০টিরও বেশি বাড়িঘর তছনছ করেছে জান্তা সেনারা

fec-image

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সামরিক বাহিনী ও বিভিন্ন সংগঠিত সশস্ত্র বেসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। সংঘাত মনিটর করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট বা অ্যাকলেড বলছে সহিংসতা এখন পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এরমধ্যে বিক্ষুব্ধ সাগাইং অঞ্চলে জান্তাবিরোধী শক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে দুটি গ্রামের ৪০০টিরও বেশি বাড়িঘর জান্তা সেনারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আনুমানিক দশ হাজার বেসামরিক লোককে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। তারা নিকটবর্তী গ্রামের মঠগুলো এবং বনে অস্থায়ী জঙ্গল শিবিরে আশ্রয় নেয়।

অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে এমন রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গেল সোমবার সন্ধ্যায় মায়াং শহর থেকে প্রায় ১০০ সেনা সাগাইংয়ের প্যালে শহরের মেওয়ে টোন এবং প্যান গ্রামে প্রবেশ করে সেখানে আগুন ধরাতে শুরু করে বলে ওয়াশিংটনভিত্তিক রেডিও ফ্রি এশিয়াকে (আরএফএ) জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।

অত্যাচারের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, সেনারা মেওয়ে টোন গ্রামের ২৬৫টি বাড়ির মধ্যে ২২০টি এবং প্যান গ্রামের ৮০০ বাড়ির প্রায় এক-চতুর্থাংশ ধ্বংস করে ফেলেছে। গ্রামবাসী জানায়, সেনারা গ্রামে প্রবেশ করার পর তারা পালাতে সক্ষম হলেও জিনিসপত্র সাথে নিতে পারেনি।

দীর্ঘ কয়েক দশক সামরিক শাসনাধীনে থাকার পর ২০০৮ সালের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচন শুরু হয় মিয়ানমারে। সংশোধিত সংবিধানে দেশটির পার্লামেন্টের মোট আসনের ২৫ শতাংশ ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি মন্ত্রণালয় সামরিক বাহনীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।

কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দেশটির রাজনৈতিক দল এনএলডির বিপুল বিজয় সাংবিধানিক সেই হিসাব ওলট-পালট করে দেয়। বিশাল সেই জয়ে জাতীয় পার্লামেন্টের ৮৩ শতাংশ আসনে এনএলডি প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

ফলে, নির্বাচনের পর বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগির প্রশ্নে অস্বস্তি শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে। এর প্রেক্ষিতেই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভোটার তালিকা প্রকাশে নির্বাচন কমিশন বরাবর দাবি জানায় সেনাবাহিনী। তারপর গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী।

জরুরি অবস্থার মেয়াদ বেড়েছে
এদিকে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক বাহিনী। ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভিতে দেওয়া এক ভাষণে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং এ সম্পর্কে বলেন, ‘সহিংসতা ও সংঘাত দূর না হলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কায়াহ, শিন, সাগাইংসহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে এখনও সহিংসতা চলছে। আমরা সেইসব অঞ্চলের সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি ও ব্লুমবার্গ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন