মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩দিন পর ছাড়া পেল রামগড়ে ইউপিডিএফের হাতে অপহৃত দু’ব্যক্তি

fec-image

খাগড়াছড়ির রামগড়ে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত ফেনীর জুয়েল ট্রেড্রার্সের ২ কর্মচারি ৫ লক্ষ টাকার মুক্তিপণের বিনিময়ে দীর্ঘ ৩৩ দিন পর শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মুক্তি পেয়েছেন। এরা হলেন, জুয়েল ট্রেডার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ওবায়দুল হকের ছেলে মঞ্জুরুল আলম (৩৫) ও কমর্চারি নোয়াখালীর সুধারামের মোঃ রাজু(২৮)।

২৩ আগষ্ট ফেনী থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে রামগড়- জালিয়াপাড়া সড়কের যৌথখামার এলাকায় জুয়েল ট্রেডার্সের প্লাস্টিক ডোর (দরজা)বাহি পিকআপ গাড়ি আটকিয়ে সন্ত্রাসীরা ওই দুব্যক্তিকে অস্ত্রেরমুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

খাগড়াছড়ি সদরের এসএস ট্রেডার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ডারের ৩০টি প্লাস্টিক ডোর ডেলিভারি দিতে তারা যাচ্ছিলেন। রামগড় – জালিয়াপাড়া সড়কের ও যৌথ খামার অতিক্রম করার সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে ৪ জন উপজাতি সন্ত্রাসী পিকআপের সামনে এসে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে গাড়িটি আটকায়। চাঁদার টোকেন নাই বলার সাথে সাথে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে রাস্তা থেকে প্রায় ৩- ৪শ গজ দূরে একটি জঙ্গল এলাকায় গাড়িসহ সবাই নিয়ে যায়। পরে মোবাইল ফোনে জুয়েল ট্রেডার্সের মালিকের সাথে চাঁদার টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গাড়ির চালক মিজানকে ছেড়ে দিয়ে মন্জু ও রাজুকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ।

অপহরণের এ ঘটনায় চালক মিজানুর রহমান বাদি হয়ে ২৪ আগষ্ট রামগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ার পর অপহৃতদের স্বজনরা ভিন্ন কৌশলে অপহরণকারিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। অপহরণকারিরা তাদের মুক্তির জন্য ৫ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ দাবি জানায়। অপহৃত রাজুর স্বজন নোয়াখালীর মাইজদী স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা ও ঠিকাদার কামাল উদ্দিন অপহরণকারিদের সাথে গত এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ সমন্বয় করেন।

জুয়েল ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান জুয়েল তার অপহৃত ২ কর্মচারিকে উদ্ধারে মুক্তিপণের ৫ লক্ষ টাকা দিতে রাজী হওয়ার পর বৃহষ্পতিবার অপহরণকারিদের সাথে যোগাযোগ করেন অপহৃত’র স্বজন।

কামাল উদ্দিন বলেন, অপহরণকারিদের তরফে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর শুক্রবার সকালে তিনি এক সঙ্গীসহ মুক্তিপণের টাকা নিয়ে হাজির হন গুইমারার বড়পিলাকের ছনখোলার গরু বাজার নামক স্থানে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার পর ইউপিডিএফের দুই কর্মী মোটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যায় অচেনা এক পাহাড়ির বাড়িতে। সেখানে মুক্তিপণের নগদ ৫ লক্ষ টাকা দেয়ার পর তারা টাকাগুলো গুনে বুঝে নেয়। টাকা গ্রহণ করে তাৎক্ষণিক ম্যাসেজটি মোবাইল ফোনে তাদের উর্ধতন লিডারকে জানানো হয়। পরে ঐ লিডার পুনরায় কামালকে ফোন করে জানায় অপহৃতদের মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী কলেজ এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

মুক্তি পেয়ে ফেনীতে ফেরার পর অপহৃত মঞ্জুরুল আলম মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, অপহরণের পর দীর্ঘ ৩৩ দিন যাবৎ দুজনের হাতে পায়ে লোহার শিকল পড়িয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ঘুরিয়েছে তারা। অস্ত্রধারীরা সার্বক্ষণিক এভাবে তাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে মাইলের পর মাইল পায়ে হাঁটিয়েছে। রাতে পাহাড়ের জুমঘরে রাখা হত। সকালে এবং বিকালে দুবেলা খাবার দেয়া হত। বৃহষ্পতিবার গুইমারার সিন্ধুকছড়ির গহীন পাহাড় থেকে পায়ে হেঁটে বনজঙ্গল- খাল ডিঙ্গিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মানিকছড়ির অজ্ঞাত এক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের দুজনকে। শুক্রবার ভোরে সেখান থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পায়ে হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হয় মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী কলেজের পাশের খালের এপারে এক পাহাড়ির বাড়িতে। সকাল সোয়া ১১ টার দিকে অস্ত্রধারীরা চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে তাদের মুক্ত করে দেয়।

মঞ্জু আরও বলেন, অস্ত্রধারীরা তাদের বলে দেয় কাউকে কিছু না বলতে এবং রামগড় পার হওয়ার আগে যেন মোবাইল ফোন অন করা না হয়। তিনি বলেন, আল্লাহর দয়ায় তারা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছেন। তিনি জানান, অপহরণকারিরা ইউপিডিএফের প্রসীত খীসা গ্রুপের সদস্য।

ফেনীর জুয়েল ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান জুয়েল বলেন, অপহৃতদের নিয়ে তারা ৩৩ টা দিন চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ছিলেন। টাকার চেয়ে দুজনের প্রাণের মূল্য অনেক বেশি। তাই অপহরণকারিদের দাবি অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে দুজনকে জীবিত ফিরে পেয়েছি।

রামগড় থানার সেকেন্ড অফিসার ও অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুজিবুর রহমান বলেন, মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃতরা ছাড়া পেয়েছে বলে জেনেছি। তবে তারা থানায় আসেনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন