মুস‌লিম ধ‌র্মে ধর্মান্তরিত হওয়ায় এক ছাত্রকে নির্যাত‌নের অ‌ভি‌যোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরু‌দ্ধে

fec-image

বান্দরবান সুয়ালক ইউ‌নিয়‌নের রবীন কান্তি নাথ নামে বান্দরবান সরকারী ক‌লেজের এক ছাত্র হিন্দু ধর্ম থে‌কে ইসলাম ধ‌র্মে ধর্মান্তরিত হওয়ায় তারই এক ক্লাস মেট‌কে ধ‌র্মান্ত‌রিত হ‌তে উস্কা‌নি দেয়ার অ‌ভি‌যোগ তু‌লে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অ‌ভি‌যোগ উ‌ঠে‌ছে ক‌লেজ ছাত্রলীগ এক নেতার বিরু‌দ্ধে। ই‌তিম‌ধ্যে ক‌লেজের এক‌টি তদন্ত টিম তদন্ত ক‌রে এর সত্যতাও পে‌য়ে‌ছে।

জানা যায়, র‌বী‌ন কা‌ন্তি দাশ না‌মের এক ক‌লেজ ছাত্র সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ক‌রে। এ ঘটনায় তারই সহপাঠী তৌ‌হিদুল ইসলাম‌কে বি‌ভিন্নভা‌বে প্ররোচণা দি‌য়ে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ তুলে ক‌লে‌জের ছাত্রাবা‌সে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় ক‌লেজ ছাত্রলী‌গের আহ্বায়ক টিপু দাশ। প‌রে তা‌কে পু‌লি‌শের কা‌ছে সোপর্দ ক‌রে। এ ঘটনায় তদ‌ন্তে না‌মে ক‌লে‌জের এক‌টি টিম। তদ‌ন্তে ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

সূত্রে জানা যায়, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষ্মীপদ দাশের ইন্ধেনে তৌহিদুল ইসলামকে মারধর করা হয়। ছাত্রলীগের আহ্বায়ক টিপু দাশের পাশাপাশি এসআই মিঠুন সিংহও এ কা‌জে বেশি উৎসাহী দেখা গেছে বলে জানায় তারা।

প‌রে ৬ এপ্রিল এ ঘটনায় তদ‌ন্তে না‌মে ক‌লেজ কর্তৃপ‌ক্ষের ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি। ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর সঞ্জীব কুমার চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিতে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রিপন কুমার দে, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কবিরুল ইসলাম গোলদার, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোর্শেদ আলী এবং বাংলা বিভাগের প্রভাষক মেহেদী হাসানও র‌য়ে‌ছেন। ভিক‌টিমসহ বেশ ক‌য়েকজ‌নের সা‌থে কথা ব‌লে অভিযোগের পায় তদন্ত ক‌মি‌টি।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল বিকালে কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রবীন কান্তি নাথের পিতা ও অন্যান্য অভিভাবকেরা কলেজের ছাত্রাবা‌সে যায়। এসময় ক‌লেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক টিপু দাশ, শুভ দাশসহ কলেজ ছাত্রাবাসের নীচ তলার ৯ নম্বর রুমে রবীন কান্তি নাথের সহপাঠী ও কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলামের কাছে যায়। সেখা‌নে ছাত্রনেতা আরমান হোসেনও তাদের সাথে যোগ দেয়।

এক পর্যায়ে তারা তৌহিদুল ইসলামকে রবীন কান্তি নাথকে ধর্মান্ত‌রিত করা ও নিখোঁজ থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্রাবাসের দোতলার ৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখা‌নে থাকা অন্য ছাত্রদের বের ক‌রে দি‌য়ে রবীন কান্তি নাথের পিতা ও টিপু দাশ রবীন‌কে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ তু‌লে রবীন নাথের খোঁজ দেয়ার জন্য নানাভাবে তৌহিদুলকে চাপ সৃষ্টি করে। এসময় ক‌লেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক টিপু দাশ তৌহিদুল ইসলামকে শারীরিকভাবে ‌ বেত দি‌য়ে আঘাত করে।

এভা‌বে ৬ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে তৌহিদুল ইসলামকে ‘জঙ্গি’ ট্যাগ দিয়ে স্থানীয় থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পুলিশ কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শহীদ মিনারের কাছ থেকে তৌহিদুল ইসলামকে থানায় নিয়ে যায়।

কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. ইমরান জানায়, টিপু দাশ, আরমান হোসেন, শুভ দাশ, রবীনের বাবা ও কাকা ছাত্রাবাসে এসে তৌহিদুলকে রুম থেকে দোতলার ৬ নং রুমে নিয়ে যায়। সেখানে কয়েক ঘণ্টা তাকে আটকে রেখে শরীরিক নির্যাতন চালায়।

এ‌ বিষ‌য়ে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সহপাঠী রবীন নাথের সাথে আমার দুই মাস আ‌গে থে‌কে প‌রিচয়। তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ‌বিষ‌য়েও আমার কোন সর্ম্পক নাই। ঘটনার দিন আমি সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের কর্মীসভায় ছিলাম। আগের রাতে রবীন নাথ আমার কক্ষে থাকতে আসে এবং রবীন রোজা রাখার নিয়তে আমার সাথে এক সঙ্গে সেহেরীও খায়। কর্মীসভায় থাকাকালীন রবীন আমাকে জানায় তার পিতা ছাত্রাবাসে আসছেন এবং রোজা ভাঙ্গাতে পারেন। এসময় সে ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

পরবর্তীতে আমি ছাত্র পড়াতে ক্যাম্পাসের বাইরে গে‌লে বিকাল ৪টা নাগাদ ছাত্রাবাসে এসে জানতে পারি রবীনের পিতা ও অন্যান্যরা রবীনের বিষয়ে জানতে আমার খোঁজ করছে। তারা আমাকে আমার রুম থেকে দোতলায় নিয়ে যায় এবং রবীনের বিষয়ে জানতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে। এসময় তারা আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। তখন আমাকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে রবীনকে ধর্মান্তরিত করার বিষয়ে প্ররোচিত করার জন্য অভিযুক্ত করে।

রবীন স্বেচ্ছায় গত ২৮ মার্চ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এজন্য আমি কোনোভাবেই দায়ী নই বল‌লেও তারা আমার মোবাইল ফোন চেক করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে টিপু দাশ আমা‌কে চড় থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। রাত ৮-৩০টার দিকে তারা আমাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পু‌লিশের কাছ থেকে ছাড়া পেলে টিপু দাশ আমার কাছে সেদিনের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহবায়ক টিপু দাশ ব‌লেন, মারধ‌রের কোন ঘটনা ঘটে নি। তবে একজন‌কে হো‌স্টেল থে‌কে ধ‌রে আনার বিষয়‌টি স্বীকার ক‌রেন তি‌নি। তারপরও এঘটনায় তি‌নি দুঃখ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন।

এ বিষ‌য়ে বান্দরবান ক‌লে‌জের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মকসুদুল আ‌মিন ব‌লেন, তদ‌ন্তে ঘটনার সত্যতা পে‌য়ে‌ছি। আমরা পরবর্তী‌তে যা যা পদ‌ক্ষেপ নেয়া দরকার তা নি‌চ্ছি। ক‌মি‌টির সিদ্ধান্ত মোতা‌বেক আমরা এগু‌চ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ধর্মান্তরকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মান্তরকরণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন