মেডিকেল কলেজ রাঙ্গামাটি থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার সংবাদ সঠিক নয়- ছাত্রলীগ রাঙামাটি জেলা
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাঙমাটি জেলা শাখা এক বিবৃতিতে দাবী করেছে, পত্রিকায় প্রকাশিত রাঙ্গামাটি থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার সংবাদ সঠিক নয়, এ বিষয়ে সরকার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে শুধু রাঙ্গামাটি আওয়ামী লীগ নয়, জেএসএসসহ সব রাজনৈতিক দল এবং রাঙ্গামাটির সর্বস্তরের জনগণের সোচ্চার হওয়া উচিৎ। মঙ্গলবার ছাত্রলীগের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি মো. শাহ এমরান রোকন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম সাইদুল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ”গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহান বদান্যতায় পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছে। এই দুটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিন পার্বত্য জেলাবাসীদের সুবিধার্থে সরকার কর্তৃক তিন পার্বত্য জেলার মধ্যবর্তী জেলা হিসাবে রাঙ্গামাটি জেলায় স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গত ১০ জানুয়ারি ২০১৫ সারা দেশের ১১টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্স দ্বারা উদ্বোধনের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আজ দু’একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ কয়েকটি স্থানীয় অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সংবাদে বলা হয়েছে রাঙ্গামাটিবাসীর বিরোধিতার কারণে মেডিকেল কলেজটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্মর্তব্য যে, রাঙ্গামাটিবাসীর সবাই বিরোধিতা করছেন না, শুধু জেএসএস এবং তাদের পরিচালিত ও সমর্থিত দু’একটি সংগঠন মেডিকেল কলেজের বিরোধিতা করছেন। তাদের দাবি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া বা বাতিল নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন স্থগিত রাখা। এ পর্যায়ে রাঙ্গামাটি বাদ দিয়ে অন্য একটি পার্বত্য জেলায় মেডিকেল কলেজটি স্থানান্তরিত করা হলে জেএসএস-এর দাবি গ্রাহ্য করা হয়েছে বলে মনে করার কোন কারণ নাই, এ ধরনের সিদ্ধান্ত জেএসএসও মানতে পারে না। কারণ ভূমি অধিগ্রহন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে করা হবে, তাছাড়া চুক্তি হয়েছে অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে, শুধু রাঙ্গামাটি জেলাকে নিয়ে নয়।
মনে রাখা দরকার মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত কোন প্রকল্প স্থগিত রাখা যায় না, প্রয়োজনে প্রকল্পের স্থান পরিবর্তন করে বাস্তবায়ন করা হয় বা একেবারে বাতিল করতে হয়। এজন্য উচ্চ শিক্ষা প্রকল্প দুটি এখন বাতিল হলে বা অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে পরবর্তীতে রাঙ্গামাটিতে বা তিন পার্বত্য জেলায় আবার নতুন প্রকল্প স্থাপন করা হবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই, কারণ সরকারেরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কাজেই এসব বিষয় বিবেচনায় আনা দরকার।
গত ১০ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজটি উদ্বোধন হওয়ায় কেউ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয় নাই। অদূর ভবিষ্যতে কাউকে উচ্ছেদ না করে ভূমি অধিগ্রহণ করতে রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগসহ জেলা আওয়ামী লীগ সচেষ্ট থাকবে। দু’এক পরিবার উচ্ছেদ হলেও তাদেরকে দ্বিগুণ বা ততোধিক ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাবে জেলা ছাত্রলীগসহ জেলা আওয়ামী লীগ।
১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও প্রস্তাবিত রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি বাধার মুখে পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময় মাঈজদীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এবারও জেএসএস-এর বিরোধিতার দোহাই দিয়ে একটি মহল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিগত ২০০৯ সালের সরকারের সময়ও এরকম চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তৎকালীন এমপি ও প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জননেত্রী শেখ হাসিনা রাঙ্গামাটিতে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন, এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পত্রিকায় প্রকাশিত রাঙ্গামাটি থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার সংবাদ সঠিক নয়, এ বিষয়ে সরকার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে শুধু রাঙ্গামাটি আওয়ামী লীগ নয়, জেএসএসসহ সব রাজনৈতিক দল এবং রাঙ্গামাটির সর্বস্তরের জনগণের সোচ্চার হওয়া উচিৎ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীর প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। অবিলম্বে চুক্তির অবশিষ্ট ধারাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সদাশয় সরকারের কাছে আমরা আহ্বান জানাই। যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণাঙ্গভাবে চুক্তি যাতে বাস্তবায়ন করা হয় সেজন্য রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। এত আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদ্বোধন হওয়ার পরও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজটি অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে রাঙ্গামাটিরবাসীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হবে।
সুতরাং চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এবং পাশাপাশি বর্তমানে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের যাত্রা অক্ষুন্ন রাখতে সদয়ভাবে বিবেচনা করার জন্য জেএসএসসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। আর গত ১০ থেকে ১২ জানুয়ারির ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং রাঙ্গামাটি জেলাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে জেলার সচেতন সবার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি”।