যথাসময়ে বিপিএল আয়োজন নিয়ে শঙ্কায় বিসিবি

fec-image

আগামী ৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা সপ্তম বিপিএল। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বাদ দিয়ে এবারের প্রতিযোগিতা ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’ নামে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতির পিতার নামে হতে যাওয়া এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের পর্দা উঠতে বাকি আর মাত্র দুই মাস। কিন্তু নানা জটিলতায় এবারের আসরটি আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি দল গঠন ও দল পরিচালনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশার। এসব কাজের দায়িত্ব বিসিবি তুলে নিয়েছে এককভাবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বাদ দিয়ে ‘স্পন্সর’ নিয়ে চলার কথা জানিয়েছিলেন বোর্ড প্রধান। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও এসব ব্যাপারে কার্যত নীরব বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।

নতুন ফরম্যাটে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জায়গা নেবে স্পন্সররা। কিন্তু সেই স্পন্সর কারা হবে? তা সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারণ করে ফেলার কথা। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে গেলেও এ ব্যাপারে কোনও ঘোষণা আসেনি। এমনকি বিসিবি কয়টি দল চালাবে, নাকি সবগুলো দলই স্পন্সর করা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এটাও অস্পষ্ট।

বিসিবির পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জালাল ইউনুসও জানাতে পারলেন না বিস্তারিত।

তিনি বলেছেন, ‘আমার জানা মতে ৬টি কোম্পানি স্পন্সর হিসেবে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে’। কিন্তু এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি তাদের নাম। এদিকে স্পন্সরশিপের ৬টি আবেদন জমা পড়লেও দল তো ৭টা! তবে বাকি একটি দল কি বিসিবি পরিচালনা করবে? স্পন্সরদের কেউ যদি কোনও কারণে অযোগ্য প্রতিপন্ন হন বা যদি তাদের সঙ্গে শর্তে না মেনে নেয়, তাহলে সেই সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে। জালাল ইউনুস অবশ্য বলেন, ‘স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কী দায়িত্ব, তারা কী কী করতে পারবে সবকিছুই আমাদের পরিকল্পনায় আছে। প্রক্রিয়াগুলো শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে। এখন সময় লাগলে তো কিছু করার নেই। সময়মতো কাজ না হলে বিপিএল পিছিয়ে যাবে, এইতো!’

বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের একজন সদস্য এত সহজে বিপিএল পিছিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেন শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রধান। তিনি বলেন, ‘সুপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট যেগুলো প্রতি বছরই আয়োজন হয়, তাদের কাউকে সহজে তারিখ বদল করতে দেখা যায় না। কারণ ক্যালেন্ডারজুড়েই অনেক টুর্নামেন্ট আছে। চাইলেই নতুন একটা সময় পাওয়া, যখন তারকা খেলোয়াড়দের পাওয়া যাবে- ব্যাপারটা এত সহজ না।’

এর আগে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নিজ উদ্যোগে ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটারদের উড়িয়ে আনতো। নতুন ফরম্যাটে বিপিএল হবে- এই ঘোষণার আগে শহীদ আফ্রিদি, শেন ওয়াটসন, ক্রিস গেইলসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা চুক্তি করেছিল। বিসিবি হুট করে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বাদ দেওয়ায় কার্যত তারকাদের চুক্তিও বাদ হয়ে গেছে। তাদের অনেকে এ সংক্রান্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সহজে বড় মানের বিদেশি ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের এই প্রতিযোগিতায় আর ভরসা রাখবেন কিনা এ নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে জালাল ইউনুস জানালেন, ‘চাইলে বিদেশি ক্রিকেটারদের তারাও (স্পন্সর প্রতিষ্ঠান) আনতে পারবে।’

একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির ম্যানেজার যিনি কিনা খেলোয়াড়দের এজেন্ট হিসেবে অনেক দিন ধরে বিপিএলে সক্রিয়, তিনি এই মন্তব্য শুনে রীতিমতো হেসে বলেন, ‘অনেক বিদেশি তারকাদের সঙ্গে আমাদের এখন কয়েক বছরের চলমান সম্পর্ক। যে কেউ ডাকলেই তারা আসবে এটা খুবই আশাবাদী কথা আর নতুন করে কাউকে পেতে হলে তাদের বহু নাম বদল করতে হয়। আনকোরা স্পন্সররা যদি দুই মাসে ওই রকম তারকাদের আনতে পারেন, তবে তা সত্যিই প্রশংসনীয় হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদেশি খেলোয়াড়দের একজন এজেন্ট বলেন, ‘আমার আশঙ্কা, পেশাদার ও নির্ভরযোগ্য ফ্র্যাঞ্চাইজিরা সরে দাঁড়ালে আমরা হয়তো ২০১২ সালের মতো বাজে দিনগুলোকে বিপিএলে ফিরতে দেখবো। বেতন ইস্যু, দুর্নীতি ইত্যাদি আবার হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বিপিএলের জন্য। তবে আশা করি তেমনটা হবে না।’

নতুন মেয়াদে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বোর্ড প্রধানের সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত এগোয়নি কিছুই। ক্রিকেট অঙ্গনে তাই ঘুরতে শুরু করেছে একটা প্রশ্ন- বিপিএল এবার হচ্ছে তো? আরও অস্বস্তির ব্যাপার এই যে, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিপিএলের দায়িত্বরত কর্তাব্যক্তিদের বলতে গেলে কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ সোহেল ও সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিককে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে আরেক সদস্য মাহবুব আনামও বিদেশে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট সহজে ধরা দিচ্ছেন না মিডিয়ার কারও কাছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিডিয়ার মুখোমুখি হলেও তিনি সাফ সাফ বলে দেন যে বিপিএল সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা কিছুই জানি না। তবে বোর্ড প্রধান হয়তো খুব শিগগিরই সভা ডাকবেন। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। সত্যি কথা বলতে আমি তো বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য। চেয়ারম্যান আছেন, সদস্য সচিব আছেন তারা আসলে ভালো বলতে পারবেন।’

রাজশাহী কিংসের প্রধান নির্বাহী তাহমিদ হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিসিবি আমাদের ডাকলেও বিপিএলের সঙ্গে জড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। কেন না দুই মাস দল গোছানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এখানে শুধু দল গোছানো নয়, লজিস্টিক অনেক কাজ আছে, সেগুলো করার মতো পর্যাপ্ত সময় আমাদের হাতে নেই। সুতরাং কোনোভাবেই আমাদের থাকা সম্ভব না। তবে বিপিএল যদি পেছানো হয় এবং আমাদের ডাকা হয়, তাহলে আমরা হয়তো চিন্তা করে দেখবো।’

সিলেট সিক্সার্সের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির ওবায়েদ অবশ্য খেলার আগ্রহের কথা জানালেন। তবে স্পন্সরশিপে আগ্রহী তালিকায় যে তারা নেই সেটা স্পষ্ট। এভাবে খেলাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে মনে করেন সিলেট সিক্সার্সের এই কর্মকর্তা, ‘হুট করে খেলা তো চ্যালেঞ্জের। আমাদের সঙ্গে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বসেছিল, সেখানে আমাদের চাওয়া পাওয়া নিয়ে কিছু কথা হয়েছে। কিন্তু এখন তো অন্যরকম পরিস্থিতি হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে খেলাটা কঠিন। তবে আমরা সব সময়ই খেলতে চাই। ডাকলে হয়তো খেলবো, কিন্তু এটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।’

যথাসময়ে বিপিএল না হলে দেশের ক্রিকেটই ক্ষতিগ্রস্থ হবে! কেন না আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ। সেই হিসেবে চলতি বছর বিপিএলটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এনিয়ে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘বিপিএল তো হওয়ার কথাই! না হলে অবশ্যই আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। কেন না আগামী বছর আমাদের বিশ্বকাপ। তার আগে বিপিএল প্রস্তুতির বড় মঞ্চ। আশা করি যথাসময়েই বিপিএল হবে এবং আমাদের তরুণ খেলোয়াড়রা এখানে বিদেশি বড় তারকাদের সঙ্গে খেলে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে।’

জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার নাফীসও মনে করেন বিপিএল হওয়াটা জরুরি। শুধু জাতীয় দলের জন্য নয়, ক্রিকেটারদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার জন্যও বিপিএল প্রয়োজন বললেন তিনি, ‘বিপিএল একটা বড় টুর্নামেন্ট। এত বড় টুর্নামেন্ট খেলে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রা নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পায়। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমাদের টি-টোয়েন্টি দলকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি বিপিএল ভালো একটা প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। এছাড়াও আমাদের অনেকের রুটি-রুজি ক্রিকেট, সুতরাং বিপিএল হওয়া জরুরি।’

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু বিপিএল, বিপিএল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন