রাখাইন সংঘাতে অতিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ মিছিল

fec-image

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতের কবলে পড়া রোহিঙ্গারা এবার বিক্ষোভে মিছিল করেছে।

‘যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই’ স্লোগানে- রাখাইনের বুচিদং শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রোহিঙ্গারা। মিছিল নিয়ে রোহিঙ্গারা রাখাইন প্রদেশের বুচিদং শহরের অলিগলি প্রদক্ষিণ করে।

গতকাল বুধবার (২০ মার্চ) বিকেলে রাখাইনের মন্ডু জেলার বুচিদং টাউন শিপে জান্তা বিরোধী বিদ্রোহী আরকান আর্মিসহ যুদ্ধে লিপ্ত সব পক্ষকে লক্ষ্য করে এ মিছিল করেন তারা।

বুচিদং টাউন শীপের বাসিন্দা শব্বির আহমদ ও আবদুল মোনাফ জানান, মিছিলে তারাও ছিলেন। মিছিলটি বুচিদং টাউনের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সভার মাধ্যমে শেষ হয়।

এতে তাদের নেতা নবি হোসেন, ইসহাক খলিল ও জালাল আহমদ বক্তৃতা করেন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেন কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতারা। যাদের বাড়ি বুচিদং টাউন শিপে।

সূত্র মতে, এ সময় মিছিলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি ও তাদের সমর্থিত স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ মিছিলে অংশ নেয়া রোহিঙ্গাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এবং রোহিঙ্গারা সরকারের কথায় এ মিছিল করেছে বলে দোষারোপ করে হুঁশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, জান্তা সরকার তোমাদেরকে কীভাবে রক্ষা করতে পারে দেখা যাবে।

এদিকে সংঘাতে অতিষ্ঠ রেহিঙ্গারা পালাচ্ছে নৌ-পথে। এর আগে পালিয়ে আসতো বাংলাদেশে। এখন সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পালাচ্ছে তারা। কেননা সীমান্তরক্ষীদের কঠোর সতর্কতায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারায় তারা এবার বেছে নিয়েছে মালয়শিয়া ও ইন্দোনিশিয়াকে। তবে যাওয়ার সময় ডুবে মারা যাচ্ছেন অনেকে আবার অনেকে আটকও হচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর হাতে।

এভাবে পালানোর সময় গত মঙ্গলবার রাতে এরাউদী পুলিশ ও নৌবাহিনীর হাতে আটক হয় ৮০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। যাদেরকে বুধবার দুপুরেই মিয়ানমার জেল হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা। যাদের মধ্যে ছিলো রাখাইনের নারী-পুরুষ ৫০ জন বাকী ৩০ জন কক্সবাজারের ক্যাম্পের রোহিঙ্গা। এ খবর জানা যায়, দ্য ইরাবতী ও রোহিঙ্গাদের একাধিক সূত্রে।

বৃষ্টির কারণে সারাদিন গোলাগুলি বন্ধ

বৃহস্পতিবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দিয়ে শুরু সকাল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় বৃষ্টি। সারাদিন থেকে থেমে নাইক্ষ্য্ংছড়ি সীমান্তের এপার
এবং ওপারে বৃষ্টির কারণে লোকজন ছাতা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। এমতাবস্থায় পুরো সীমান্তে লোকজনের চলাচলে চরম ব্যাঘাত হয়। এদিকে বৃষ্টির মধ্যে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী আরকান আর্মির সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি বন্ধ ছিল। তাই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্থলভাগের ১৭১ কিলোমিটার সীমান্ত লাগোয়া কোথাও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাননি এপারে বসবাসরত বাসিন্দারা।

রাখাইনের মন্ডু জেলার আশপাশে যুদ্ধ

দ্য ইরাবতী জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মংডু জেলা শহরের আশপাশে বসবাসরত রোহিঙ্গা পাড়ায় সেনা ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ও ১৯ মার্চ ৩০ জনের অধিক রোহিঙ্গা যুবকদেরকে জোর পূর্বক আটক করেছেন।

আটক রোহিঙ্গাদেরকে সেনারা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে দু’সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়মিত সেনাদের সাথে বিদ্রোহী গ্রুপ এএ সাথে সম্মুখ যুদ্ধে সামনের সারিতে রাখে।

তারা রোহিঙ্গা যুবক সৈনিকদেরকে যুদ্ধের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছেন বলে জানা যায়। যার ফলে রোহিঙ্গা সৈনিকরা যুদ্ধের ময়দানে লাশের পর লাশ হয়ে পঁচা গন্ধে বাতাস ভারী হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। সেনারা অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের আটক করাকে কেন্দ্র করে পাড়া গ্রাম ছেড়ে রোহিঙ্গা যুবকরা আত্মগোপন সহ দেশ-বিদেশে চলে যাচ্ছেন বলে সূত্রে জানা যায়।

অপর দিকে, Maungdaw District এ Buthidaung Township এর Da Pya Chaung – MOC – 15 অধিনস্ত LIR – 552 ব্যটলিয়ান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য বিদ্রোহী গ্রুপ এএ মরিয়া হয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ অব্যাহত রাখায় সেনাদের সাপোর্টে সামরিক যুদ্ধ বিমান থেকে অসংখ্য বোমা বর্ষণ শুরু করলে বিদ্রোহী গ্রুপ এএ অত্যাধুনিক মিজাইল সেনা ও বিমানকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করেছে । সেনা ও বিদ্রোহী গ্রুপের আক্রমণের ফলে বুথিডং এলাকা রনক্ষেত্রে পরিণত হয়। ফলে লোকজন আশ্রয় স্থলে খুঁজে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে। এ খবরটি রোহিঙ্গা নেতা ও দ্য ইরাবতী সূত্রের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন