রাঙামাটিতে একুশের বইমেলায় চলছে ল্যাপটব ও মোবাইল মেলা

unnamed copy

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি:

রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে একুশে বইমেলায় চলছে একটি বেসরকারী সংস্থার ল্যাবটব ও মোবাইল মেলা। সপ্তাহব্যাপী বইমেলা একুশে ফ্রেব্রুয়ারি শুরু হলেও মেলার চতুর্থ দিনের মাথায় বই মেলার স্টল দখল করে শুরু হয় মোবাইল ও ল্যাপটব মেলা।

শুক্রবার বিকেলে বইমেলার মঞ্চেই উদ্বোধন করা হয় এ ল্যাপটব ও মোবাইল মেলা। এ কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বইমেলায় আসা জনসাধারণ হতাশ হয়েছেন। একই মঞ্চে একই স্টলে দুটি মেলা দেখে হতবাক হয়েছেন দর্শনার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লেখক, প্রকাশক ও সুশীল সমাজেন মানুষ। তাদের মতে একুশের বইমেলায় এ ধরনের একটি বাণিজ্যিক মেলা শুরু করে একুশের চেতনায় আঘাত করা হয়েছে।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী একুশের বইমেলার গেইটে লাগানো হয়েছে ল্যাপটব ও মোবাইল মেলার ব্যানার। মেলার প্রায় ১০টি স্টল দখল করে সেখানে বিভিন্ন মোবাইল ও কম্পিটার কোম্পানির স্টল দেয়া হয়েছে। ওইসব স্টলে সরকারী গ্রস্থাগার, ইসলামীক ফাউন্ডেশনসহ আরও কয়েকটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বইমেলায় স্টল দিয়েছিলো।

এসব স্টল তুলে দেয়ায় এখন বইমেলায় নাম মাত্র কয়েটি বইয়ের স্টল আছে। বইমেলায় ঘুরতে এসে সাধারণ মানুষ বইয়ের দেখা না পেয়ে দেখতে পায় মোবাইল ও ল্যাপটবের দোকান। রাঙামাটির বেসরকারী সংস্থা আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করে।

জানা যায়, মেলায় স্টল প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন মোবাইল ও কম্পিউটার কোম্পানি থেকে টাকা আদায় করে আশিকা। সেসব কোম্পানির পক্ষ থেকে স্থানীয় ডিলারদের এ মেলায় স্টল দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

মোবাইল মেলায় স্টল দেয়া সিম্পনি কোম্পানির রাঙামাটির ডিলার তৈয়বিয়া টেলিকমের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, বইমেলা বৃহষ্পতিবার শেষ হয়ে গেছে। তাই আজ থেকে মোবাইল ও ল্যাপটব মেলা শুরু হয়েছে।

তবে মেলায় কয়েকটি বইয়ের স্টল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন স্টল খালি থাকবে বলে কয়েকটি বইয়ের স্টল রাখা হয়েছে। মেলায় আরও কোন মোবাইল বা কম্পিউটার কোম্পানির স্টল আসলে এসব বইয়ের স্টল তুলে দেয়া হবে।

মেলায় অংশ নেয়া কম্পিউ হার্ট নামের রাঙামাটি শহরের একটি কম্পিউটার সেলস প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানায় আমরা যে কোম্পানির ডিলার তাদের নির্দেশে এখানে স্টল দিয়েছি, মেলার স্টলের ভাড়া আশিকা সংস্থাকে কোম্পানির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে।

বইমেলায় আসা প্রিয়তোষ দে বলেন স্ত্রী ও মেয়েক নিয়ে বই মেলায় এসেছি কিন্তু এসে আমরা হতাশ হলাম। এটি কি বই মেলা নাকি মোবাইল মেলা বুঝতে পারছি না। এ মেলা আয়োজকদের হীন মানসিকতা প্রকাশ পয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

মেলায় আসা রাঙামাটি সরকারী কলেজের ছাত্র সৌমেন চাকমা বলেন, আমি প্রথম দেখলাম বইমেলায় মোবাইল ও ল্যাপটব বিক্রি হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গনে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. অমৃত লাল ভট্টাচার্য বলেন, এটি কেমন ব্যাপার হলো একুশের বইমেলায় মোবাইল মেলা দেয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে যখন মানুষ বই মেলার জন্য অপেক্ষা করেন সেখানে বই মেলার মাঝ পথে ল্যাপটব ও মোবাইল মেলা হবে এটি কখনো মেনে নেবার মতো নয়।

রাঙামাটির মহিলা সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু এ ব্যাপারে বলেন, জেলা প্রশাসন একুশের বই মেলা বা কি অনুষ্ঠান করছেন এ ব্যাপারে আমকে কিছুই অবগত করা হয়নি। তিনি বলেন অন্তত এক সপ্তাহব্যাপী বইমেলা হওয়া প্রয়োজন। বইমেলার স্টল তুলে দিয়ে মোবাইল মেলা হবে এটি কোন ভাবেই ভালো হয়নি।

সাংবাদিক হিমেল চাকমা বলেন, রাঙামাটির বইমেলা হয় নাম মাত্র দায়সারাভাবে। তার মধ্যে আবার মোবাইল মেলা কেন বুঝে উঠতে পারিনি। তরুণ লেখক ও সংবাদকর্মী ইয়াছিন রানা সোহেল বলেন, নূন্যতম এক সপ্তাহব্যাপী বইমেলা চালু রাখা দরকার ছিলো। বইমেলার মাঝখানে এসে মোবাইল ও ল্যাপটব মেলা শুরু করে বইমেলা বা একুশের যে চেতনা তা নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষের আবেগ অনুভুতিতে আঘাত করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান এ ব্যাপারে বলেন, বইমেলা ও ল্যাপটব মেলা দুটোই এক সাথে চলবে। বইয়ের কোন স্টল সরিয়ে মোবাইলের স্টল দেয়া হয়েছে এমন বিষয় জানা নেই বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন “আমি মনে করি বই মেলা ও ল্যাপটব মেলা দুটোই একসাথে চলতে পারে”।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন