রাঙামাটিতে ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসে বিপাকে পড়েন পর্যটকরা

fec-image

পার্বত্য জনপদের মধ্যমণি অঞ্চলের নাম রূপসী রাঙামাটি। রাঙামাটির প্রকৃতি এমন ভাবে সেজেছে, এ যেন স্বর্গীয় রূপের প্রতিচ্ছবি। প্রতি বছর এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসে পার্বত্যাঞ্চলটিতে। যে কারণে তৎকালীন সরকার আশির দশকের গোড়ার দিকে রাঙামাটিকে পর্যটন শহর হিসেবে ঘোষণা করে এবং শহরের তবলছড়ি এলাকায় পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সেখানেই গড়ে উঠে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন।

প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক রাঙামাটি পরিভ্রমণ করে যাওয়ার সময় একবার হলেও ঝুলন্ত সেতুটি পরিদর্শন করে এবং সেতুর উপর পায়ের ছাপ ফেলে।

কিন্তু এ ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে পর্যটকদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। ঝুলন্ত সেতুর আশেপাশে অনেক বছর ধরে নেই কোন ‘শোচাগার’। বোট পারাপারে নেই কোন ‘খেয়াঘাট’। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে যেমন পর্যটকদের চরম বিপাকে পড়তে হয় তেমনি খেয়াঘাট না থাকায় বোট থেকে নামার সময় অনেক পর্যটক দুর্ঘটনার শিকার হন। পর্যটকরা এ বিষয়ে অভিযোগ এবং দাবি জানালেও কোন সুরাহ করেনি পর্যটন করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঝুলন্ত সেতু দেখতে রাজধানী ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক বেসরকারি চাকরিজীবী আনিস রহমান বলেন, আমরা সারাদিন পুরো শহর ঘুরে এসে প্রশান্তির জন্য ঝুলন্ত সেতুটি দেখতে আসি। কিন্তু দু:খের বিষয়; ঝুলন্ত সেতুর আশেপাশে নেই কোন শোচাগার। যে কারণে আমরা যারা দূর-দূরান্ত থেকে আসি তাদের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে চরম লজ্জায় পড়তে হয়।

একই অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী শাহেদা আনিস। তিনি বলেন, পুরুষরা যেখানে-সেখানে কাজ সাড়তে পারলেও আমাদের মতো নারীদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ; পর্যটকদের কথা ভেবে দ্রুত এখানে শোচাগার নির্মাণ করে দেয়।

ঝুলন্ত সেতু দেখতে চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী পর্যটক দলের অন্যতম সদস্য ব্যবসায়ী ফোরকান আহমেদ ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের মতো পর্যটকরা আসলে এ অঞ্চলের পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু আমরা যদি এখানে এসে যদি সঠিকভাবে পরিষেবা না পাই তাহলে কেন আসবো? এখানে কোন শোচাগার নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পর্যটকদের বিপাকে পড়তে হয়।

পর্যটক রেহানা পারভীন দু:খের সাথে বলেন, আমি বোট থেকে নামতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। এখানে যদি বোটগুলো রাখার জন্য খেয়াঘাট দিতো তাহলে আমরা বোট থেকে সরাসরি ঘাটে নামতে পারতাম। কোন দুর্ঘটনা ঘটতো না।

রাঙামাটি বোট মালিক সমিতির সহসভাপতি রমজান আলী বলেন, পর্যটকরা বেড়াতে এসে যখন শোচাগার খুঁজে পায় না, তখন তারা লজ্জায় পড়ে যায়। তারা আমার কাছে আসলেও আমি তাদের শোচাগারের ঠিকানা দিতে পারি না। বোট মালিক সমিতির এ নেতা আরও বলেন, বোট পারাপারের জন্য এখানে কোন খেয়াঘাট নেই। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি- পর্যটকদের সুবিধার জন্য দ্রুত এ সকল সমস্যা নিরসন করে দেয়।

পর্যটন করপোরেশন রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ঝুলন্ত সেতুর আশেপাশে শোচাগার স্থাপনের জন্য ট্যুরিজম বোর্ডকে জানানো হয়েছে। করোনার কারণে আমাদের কাজ এগোয়নি।

বোট পারাপারে নির্দিষ্ট ঘাট নেই কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে বলেছি এখানে বোট পারাপারে জন্য পল্টন (খেয়াঘাট ) নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে বোট পার্ক বাবদ টাকা চায়। যে কারণে আমরা পল্টন স্থাপনে নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করিনি। নিজেদের উদ্যোগে পল্টন নির্মাণ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপাতত নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন