রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ৩ হাজারের অধিক পরিবার
রাঙামাটিতে টানা চারদিনের বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা বেড়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে জেলার ৩৩৭৮টি পরিবারের ১৫ হাজারের অধিক সদস্য। প্রশাসন ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও তারা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বাস করছে।
তাদের দাবি দরিদ্রতার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে পাহাড়কে বেছে নিয়েছি বসবাসের জন্য। বাস করার জন্য সমতল জায়গা ক্রয় করা বা নিরাপদ জায়গায় বাড়ি ভাড়া করে থাকার মতো সামর্থ নেই।
এদিকে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবন-যাপন বিঘ্ন ঘটেছে। ব্যবসায়ী এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বলে রাখা ভাল, ভূ-প্রকৃতিগত ভাবে রাঙামাটি পুরো অঞ্চলটি পাহাড় বেষ্টিত। সমতলের লেস মাত্র নেই। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও গড়ে তোলা হয়েছে পাহাড়ে। তাই সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আওতায় রয়েছে।
এদিকে প্রশাসনের তথ্য মতে, রাঙামাটির ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। রাঙামাটি পৌরসভাসহ ১০টি উপজেলায় মোট তিন হাজার ৩৭৮টি পরিবারের ১৫ হাজারেও বেশি মানুষ পাহাড় ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি পৌর শহরের নয়টি ওয়ার্ডে ৩৪টি স্থানে ৬০৯ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে।
এগুলোর মধ্যে- জেলা শহরের রিজার্ভ বাজারের চম্পানিমার টিলা, চেঙ্গির মুখ, এসপি অফিস সংলগ্ন ঢাল, পুরাতন বাস স্টেশনের মাতৃমঙ্গল এলাকা, কিনারাম পাড়া, স্বর্ণটিলা, রাজমনি পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি, মুসলিম পাড়া, কিনা মোহন ঘোনা, নতুন পাড়া পাহাড়ের ঢাল, শিমুলতলী, রূপনগর এলাকা পাহাড়ের ঢাল, কাঁঠালতলী মসজিদ কলোনি, চম্পকনগর পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ স্কুলের ঢাল, কলেজ গেইটস্থ কাদেরিয়া মার্কেটের নীচ এলাকা, জালালাবাদ কলোনির পাহাড়ের ঢাল। এর বাইরে রাঙামাটি সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৭৫০ পরিবারের তিন হাজার ৪২৪ জন লোক পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিতে আছে। ওইসব এলাকায় ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি পাহাড় ধস হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার কাজ জেলা প্রশাসন গত এপ্রিল মাস থেকেই চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বিগত বছরগুলোর মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। খুলে রাখা হয়েছে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র। এর মধ্যে সোমবার রাত থেকে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে যোগ করেন ডিসি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩জুন রাঙামাটিতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে সরকারি হিসেবে মতে ৯৮জন এবং বেসরকারি হিসেব মতো আরো বেশি মানুষ মারা যায়। এছাড়া ২০১৮ সালের ১২জুন নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নে ১১ জন মানুষ পাহাড় ধসে নিহত হন।