রাঙামাটি পর্যটন এলাকার বেহাল দশা, চার দশকেও নেই কোন উদ্যোগ

fec-image

রাঙামাটির দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতুকে বলা হয় সিম্বল অব রাঙামাটি। রাঙামাটিতে যারা ঘুরতে আসেন তাঁদের মূল আকর্ষণ এই সেতুটি ।

এই ঝুলন্ত সেতুটিতে প্রতিদিন ঘুরতে আসে অসংখ্য মানুষ। তবে দুই পাহাড়ের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করা এই স্থাপনার বেহাল দশা। ভেঙে গেছে কাঠ, নাজুক অবস্থা পাটাতনের। চার দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নেই চোখে পড়ার মত কোন উন্নয়ন। ফলে ঝুলন্ত সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা।

প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখেরও বেশি পর্যটক রাঙামাটিতে বেড়াতে আসেন। তবে, সহসাই উন্নয়ন কাজে হাত দেয়া হবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ সৃষ্টির পর হ্রদকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানান পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৮৩ সালে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সেতু তৈরি করে যাত্রা শুরু হয় পর্যটন কর্পোরেশনের। এরপর কার্যত আরো কোনও উদ্যোগ বা পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি কোনও সংস্থা। সেই থেকে একটিমাত্র সেতু দিয়ে চলছে এখানকার পর্যটন ব্যবসা।

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পছন্দের অন্যতম স্থান পর্যটক এলাকা। এখানে রয়েছে শুধু মাত্র দুইটি মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু। টিকেট নিয়ে সরু সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে গেলেই দেখা মিলবে সেই সেতু। অথচ এর পাটাতনের বেহাল দশা, ভেঙ্গে গেছে কাঠ। যেন জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে সেতুটি। সেতু পার হয়ে একটু ওপরে উঠলে দেখা যায় তিন ফুটেরও কম প্রশস্থ ইট সলিং রাস্তা। যা দিয়ে দুজন মানুষও হাঁটা অসম্ভব। সেটারও মাঝে মাঝে সরে গেছে ইট, ধসে গেছে মাটি। কোথাও বা খাড়া পাহাড়ের ঢাল রয়েছে অরক্ষিত।

এই নাজুক সড়ক দিয়ে চলাফেরা করছেন শতশত পর্যটক। অসতর্ক হলেই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আর পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা দেখলে বোঝা যায় কেমন আছে পার্কটি।

অথচ এই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর জায়গা এখনো পড়ে আছে অব্যহৃত। যেখানে স্থাপন করা যায় দৃষ্টিনন্দন বহু স্থাপনা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশায় হতাশ পর্যটক ও স্থানীয়রা।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মো. নাঈম হোসেন বলেন, প্রায় ৮ বছর আগে যে অবস্থা দেখে গিয়েছি, এখন তার চেয়েও খারাপ অবস্থা। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে হতাশ হতে হলো। এখানকার প্রকৃতি সব কিছু দেয়ার পরও শুধু পরিকল্পনার অভাবে যা তা অবস্থা ঝুলন্ত সেতু এলাকাটির।

ইসরাত আরা ও ফয়সাল উদ্দিন বলেন, ছবিতে যেভাবে দেখে এসেছি, তার উল্টো অবস্থা এখানকার। সেতুর পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে কাঠ ভাঙা। সিঁড়িগুলোও ছোট। পর্যটন এলাকার পরিবেশটা প্রত্যাশা ছিলো আরও অনেক ভালো কিছু।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, বিভিন্ন সময় পর্যটন এলাকার উন্নয়নের প্রস্তাবনা প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করেছি। যেগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করছি এসব উন্নয়ন কাজ শুরু হলে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। বেড়াতে আসা পর্যটকরাও আরও বিনোদন নিয়ে ফিরে যেতে পারবেন।

পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিতে কি কি করণীয় আছে তা নির্ধারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানালেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাহী প্রকৌশলী ও পর্যটন ব্যবস্থাপককে বলেছি। পর্যটকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য কি কি করণীয় তা নির্ধারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো করে দেয়ার চেষ্টা করবো। পর্যটকরা যাতে সুবিধা পায় সেভাবেই কাজগুলো করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উদ্যোগ, এলাকা, চার দশক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন