রাজস্থলী তাই তং পাড়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

রাজস্থলী প্রতিনিধি:
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ৬টি পদে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নেই। শিক্ষক সংকটে বিপাকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল। অনুমোদিত ১১টি পদের মধ্যে ৫টি পদে শিক্ষক থাকলেও ৬টি পদে শিক্ষক শুন্যতায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া এমএলএসএস ও নৈশ প্রহরী পদে লোকবল নেই দীর্ঘদিন ধরে।

বিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে উপজেলায় রাজস্থলী তাই তং পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এটি ধাপে ধাপে শিক্ষার মান বৃদ্ধি হওয়ায় ১৯৮৬ সালে ততকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজস্থলী সফরে আসলে উপজেলা হল রুমে বিদ্যালয়টিকে সরকারী করণের ঘোষণা দেন এবং সেই সময় থেকে বিদ্যালয়ের নামকরণ হয়, রাজস্থলী তাই তং পাড়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত অন্তত ৭০০ অধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।

জানা গেছে, সরকারী অনুমোদিত পদ অনুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ১১টি শিক্ষকের পদ এবং একজন দপ্তরী, একজন নৈশ প্রহরী ও এমএলএসএস অফিস সহকারী পদ রয়েছে।অনুমোদিত১১টি শিক্ষক পদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষক ৬টি পদে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নেই।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (শরীরচর্চা) শিক্ষক দায়িত্বপ্রাপ্ত বানীব্রত চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং একজন শিক্ষক গনিত বিষয়ে দীর্ঘ ৭-৮ বছর যাবৎ ঢাকায় প্রেষণে থাকায় তার পদটি শুন্য করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান।

তিনি আরো বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইংরেজী, গণিত ও অন্যান্য বিষয়গুলো শিক্ষকদের দিয়ে পড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম বিষয়কশিক্ষক না থাকায়, বৌদ্ধ অথবা হিন্দু ধর্ম শিক্ষক দিয়ে ইসলামধর্ম বই পড়ানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ে থাকা ৫ জন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে একজনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতিদিন ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেনী পর্যন্ত ৩৫টি বিষয়ভিত্তিক পাঠদান করতে হাঁপিয়ে উঠছেন শিক্ষকরা।

গত কয়েকবছর আগে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইসুইখই মারমার নেতৃত্বে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ৪জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করে যা সরকারী নিয়ম বর্হিভুত বলে জানা গেছে। খন্ডকালীন দুইএকজন শিক্ষক ভাল লেখাপড়া করালেও বাদবাকী খন্ডকালীন শিক্ষকগুলো পড়াশুনায় দক্ষ নয় বলে ভুক্তভোগী ছাত্র/ছাত্রীরা জানান।

বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র এই প্রতিবেদককে জানান, গণিত বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় সব শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়েছে। বিশেষ করে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আরো বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদিকে এমএলএসএস নাইট গার্ড ও দপ্তরী না থাকায় প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

জনৈক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলেন, নেতৃত্বস্থানীয় ছেলে মেয়েরাতো বড়বড় নামীদামী শহরে লেখাপড়ার সুযোগ পায়। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বেদনার কথা শুনবে কে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার এই উপজেলায় উপস্থিত না থাকার কারনে তার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস জানান, সবে মাত্র আমি যোগদান করেছি, শিক্ষক সংকটের বিষয় নিয়ে আগামী সমন্বয় মিটিংএ উপস্থাপন করা হবে। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুন্যতাগুলো পূরণ না হলে আগামীতে এ রাজস্থলী উপজেলার ভবিষ্যত প্রজন্মরা শিক্ষার আলো থেকে দুরে সরে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন