রামগড়ে অপহরণকারীদের ডেরা থেকে অপহৃত কলেজ ছাত্রের পলায়ন, আটক ২

Ramgarh 13
রামগড় প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের মীরশ্বরাই থেকে রামগড়ে বেড়াতে এসে অপহৃত কলেজ ছাত্র তারেক হোসেন(২২) আজ সোমবার গহীন জঙ্গলে অপহরণকারীদের ডেরা থেকে পালিয়ে এসেছেন। তিনি মীরশ্বরাই কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র।

গত রবিবার সন্ধ্যায় রামগড়ের কালাডেবা এলাকা থেকে দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে এবং তার পরিবারের কাছে ২০লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে।

এদিকে রামগড় ১৬ বিজিবির সদস্যরা রামগড়ের সোনাইআগা এলাকা থেকে সোমবার বিকেলে ইউনুছ(২২) ও গোবিন্দ ত্রিপুরা(২০) নামে দুই অপহরণকারীকে আটক করেছে।

তারেক হোসেন জানান, বন্ধুদের আমন্ত্রণে রবিবার তিনি রামগড়ে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রবন্ধুর সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর পর বিকেল ৩টার দিকে তারা রামগড় থেকে চলে গেলেও তিনি থেকে যান। পরে ইউনুছ নামে অপর এক পরিচিতজনের সাথে দেখা করতে রামগড়ের কালাডেবা এলাকায় গেলে সন্ধ্যার দিকে ঐ এলাকা থেকে  তাকে অপহরণ করে করে নিয়ে যায দুর্বৃত্তরা।

তিনি আরও জানান, পূর্ব পরিচিত যুবক তারেকের সাথে ঘুরে বেড়ানোর এক মূহুর্তে ৮জন যুবক হঠাৎ এসে তাদের দু’জনকে বেধে পাহাড়ি খাল দিয়ে বহুদূরে নিয়ে যায়। রাতে গভীর জঙ্গল ঘেরা একটি পাহাড়ের উপর তাকে দুর্বৃত্তরা বেধে রাখে। ইউনুছই সুকৌশলে ঐ যুবকদের দিয়ে তারেককে অপহরণ করে  নিয়ে যায়। রাতে মোবাইল ফোনে তারেকে মায়ের সাথে কথা বলতে দেয় তারা। পরে ওদের একজনের মোবাইল ফোন দিয়ে কল করে তারেকের মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবী জানায়। এতটাকা দিতে অক্ষমতা জানানোর পর অপহরণকারীরা তারেককে বেদম মারধর করে। সারারাত পাঁচ যুবক তাকে ঐ পাহাড়ের উপর বেধে রেখে পাহারা দেয়।

সোমবার ভোর বেলায় পাঁচ জনের মধ্যে তিন অপহরণকারীকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তারেক অপর দু’জনকে পায়খানা করার কথা বলে তিনি জঙ্গলের আড়ালে গিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে পালিয়ে যান। এসময় অপহরণকারীরা তাকে ধরতে পিছু ধাওয়া করে এবং হাতে থাকা ধারালো দা ছুড়ে মারে। এতে তারেকের পা কেটে যায়। প্রায় দু’ঘণ্টা দৌড়ে এসে একটি অচেনা রাস্তায় জনৈক পথচারীর  সহায়তায় তিনি কালাডেবা বাজারে আসেন।পরে খবর পেয়ে রামগড় থানার ডিএসবির এক সদস্য এসে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

তারেকের পিতা মীরশ্বরাই উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নুরুল মোস্তফা জানান, অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে প্রথমে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। সোমবার বেলা ১২টার মধ্যে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে না আসলে তারেককে হত্যা করার হুমকীও দেয়া হয়। ছেলে অপহৃত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি রবিবার রাত ১টায় মীরশ্বরাই থানায় একটি জিডি দায়ের করেন।

এদিকে অপহরণকারীদের ডেরা থেকে তারেক পালিয়ে এসেছে এ খবর পেয়ে  তার বাবা, চাচা ও খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল চৌধুরি, মেম্বার মাহফুজুল হক জুনু এবং মীরশ্বরাই থানার উপ পরিদর্শক আরিফ কয়েকজন ফোর্স নিয়ে রামগড় থানায় আসেন। রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ জোবায়েরুল হক তারেক হোসেনকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করেন।

এদিকে গোপনসূত্রে খবর পেয়ে সোমবার বিকালে রামগড়ের সোনাইআগা নাম এলাকার জঙ্গল থেকে  বর্ডার গার্ড বিজিবি’র সদস্যরা তারেকের অপহরণকারীদলের দু’জনকে আটক করেছে। ১৬ বিজিবির নায়েক সুবেদার মির্জা আতাউরের নেতৃত্বে বিজিবির একটি দল ঐ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইউনুছ(২২), পিতা মৃত আবুল কালাম ও গোবিন্দ ত্রিপুরা(২০),পিতা কেতাং ত্রিপুরাকে আটক করে। এরা দুজনই সোনাইআগা গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ জানায়, ইউনুছই মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে তার অপরাপর সঙ্গীদের মাধ্যমে তারেক হোসেনকে অপহরণ করে। এ ব্যাপারে তারেক হোসেন বাদি হয়ে রামগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ০৩, তারিখ ১৩/৪/১৫।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন