রামগড়ে পার্বত্য সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার ব্যস্তদিন অতিবাহিত
রামগড় প্রতিনিধি:
পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা সোমবার রামগড়ে ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করেছেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে রামগড়ে পৌঁছেই তিনি ঐতিহ্যবাহী মহামুনি বৌদ্ধ বিহারে নবনির্মিত শিশু সদন ছাত্রাবাসের উদ্বোধন করে এক মতবিনিময়সভায় বক্তব্য রাখেন। পরে উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নবনির্মিত ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ ভবনের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন শেষে ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এ মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে প্রবীণ ত্রিপুরা নেতা নকুল চন্দ্র ত্রিপুরা, ত্রিপুরা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আনন্দ মোহন ত্রিপুরা,সাধারণ সম্পাদক ললিত কিশোর ত্রিপুরা বক্তব্য রাখেন।
এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের মাধ্যমে এলাকায় শিক্ষা ও আর্ত সামাজিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। রামগড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ছাত্রী হোস্টেলের উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত মত বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫১ বছর পরও বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ ব্যাপারে শিক্ষা সচিবের সাথে কথা বলবেন। আগামী অর্থ বছরে স্কুলের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রী কমন রুম, অডিটরিয়াম, কম্পিউটার রুম নির্মাণ ইত্যাদি দাবী পুরণে পাবর্ত্য জেলা পরিষদ বা উন্নয়ন বোর্ড পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেবে।
স্কুলের ৫০বছর পুর্তি অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ অনুষ্ঠান আয়োজনেও সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তফা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি চাকমা স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
দুপুরে রামগড় উপজেলা অডিটরিয়ামে খাগড়াছড়ি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রইস উদ্দিনের সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পার্বত্য সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান আখ্যায়িত করে তিনি বক্তব্যে বলেন, এখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযোদ্ধা সন্মানী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সন্তানের সন্তানদের সরকারি চাকুরিতে বিশেষ কোটা সংরক্ষণ, ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর নির্মাণ, প্রতিটি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বর্তমান সরকার।
রামগড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘বিজয়’ এর অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি এ জন্য ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে রামগড়ের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এখানকার বিজয় ভাস্কর্যটি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের এক অনন্য ভাস্কর্য হিসাবে নির্মিত হবে। এ জন্য তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভাস্কর মৃনাল হককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।
সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা রামগড় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ মতবিনিময় সভায় রামগড় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। এ সমাবেশে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। পরে সচিব নব বিক্রম ত্রিপুরা রামগড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘বিজয়’ পরিদর্শন করেন। রামগড় বৌদ্ধ বিহার, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পার্বত্য সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মো: সালাহ উদ্দিন, রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ইকবাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।