রামগড় স্থলবন্দরে ১২৫ কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু

fec-image

রামগড়ে স্থলবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প কাজের নিযুক্ত ঠিকাদির প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পুরোদমে আরম্ভ করার প্রস্তুতি নয়েছে। বাংলাদেশ রিজিয়নাল কানেক্টিভিটি-১ নামে বন্দর স্থাপন প্রকল্পটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ন অগ্রাধিকার প্রকল্প । সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ১২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল ২ বছর রাখা হয়েছে।

এদিকে, সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি এমপি রামগড়ে স্থলবন্দরের কাজের অগ্রগতি দেখতে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এসময় বাংলদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর, খাগড়াছড়ি পাবর্ত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরি অপু, ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল মো. আনোয়ারুল মাযহার, প্রকল্প পরিচালক মো. সরোয়ার আলম, রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাতসহ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী স্থলবন্দরের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি, মৈত্রী সেতু ইত্যাদি সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। পরে তিনি এক মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদেন।

পাবর্ত্য চট্টগ্রামের প্রথম এ স্থলবন্দরটি চালু হলে অনুন্নত পাবর্ত্য জেলার পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যাবে আর ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন পথ খুলবে এমনটাই আশা করছেন বাংলাদেশ- ভারত দুদেশের সরকার।

প্রসংগত: ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সাথে বৈঠকে রামগড়- সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্থলবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় দুদেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারতকে অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। ভারতের অর্থায়নে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালে রামগড়- সাব্রুম সীমান্তে বাংলাদেশ -ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ৪১২ মিটার দীর্ঘ ও ১৪ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের দুই লেন বিশিষ্ট এক্সাটা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি সেতুটির নিমাণ সম্পন্ন করা হয়। গত ৯ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্সুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেন।

এদিকে, স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড়ের মহামুনি এলাকায় অধিগ্রহণকৃত ১০ একর জায়গায় বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিস, চেক পোস্ট, ওয়্যার হাউজ, আবাসিক ভবন, শেডসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মনিকো লিমিটেড নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি-১ প্রকল্পের পরিচলক মো. সরোয়ার আলম জানান, বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ৭৫ কোট টাকায় ১০ একর জি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১২৫ কেটি টাকার প্রকল্প বাসতবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে আর্ন্তজাতিক মানের একটি পেসেঞ্জার টার্মিনল ভবন নির্মাণ করা হবে। এ টার্মিনাল ভবনের ভিতরেই বিজিবি চেক পোষ্ট, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি অফিস থাকবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিষ্টেমে একই ভবনে সব ধরণের চেকিং সম্পন্ন করে বহি:গমন এবং প্রবেশ করবেন পেসেঞ্জার।

এছাড়া মালামাল সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ওয়ার হাউজ, ক্লোড স্টোরেজ, লোড-আন লোডের ইয়ার্ড, ট্রান্সশিপমেন্ট শেড, স্কেনিং ও প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থা ও সিসিটিভি থাকবে। প্রল্পল্প পরিচালক আরও জানান, পরবর্তীতে ভারতের ২০০টি এবং বাংলাদেশি ১০০টি ট্রাকের পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল দুই বছর হলেও বর্তমান সরকারের সময়ের মধ্যেই সকল কাজ সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এ ব্যয় বহন করবে। রামগড়- সাব্রুম স্থলবন্দর চালু হলে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ আমার ধারণা বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বেশি হবে। তবে এখান থেকে সিমেন্ট, ইট ও প্লাস্টিক সামগ্রী ইত্যাদি বেশি রপ্তাণি হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ এবং ত্রিপুরাসহ উত্তরপূর্ব রাজ্যের অনেকেই এ স্থলবন্দর ব্যবহার করবে ভ্রমণে। ’ তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, কানেকটিভিটি বাড়বে। এছাড়া স্থলবন্দরটি চালু হলে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃস্টি হবে। সার্বিকভাবে পাবর্ত্য এলাকার জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন