রামুতে ২দিনের ব্যবধানে আবারো গুলিবিদ্ধ হয়ে বন্য হাতির মৃত্যু

fec-image

রামুতে ২ দিনের ব্যবধানে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালো আরো একটি বন্য হাতি। সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের বন বিভাগের জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের আওতাধিন জুমছড়ি নামক গহীন অরণ্যে। কয়েকদিন ধরে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকালে প্রাণ হারায় এ হাতি। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে হাতিটি মাটিতে পূঁতে ফেলা হয়।

হাতিটির ময়নাতদন্তকারি রামু উপজেলা প্রাণী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. শাহজাদা মোহাম্মদ জুলকারনাইন এবং ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কেও সহকারি ভেটেরিনারী সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন-হাতিটির পায়ে এবং দেহের বিভিন্ন স্থানে ৮টি গুলির জখম রয়েছে। এরমধ্যে সামনের পা কেটে ২টি গুলি বের করা হয়েছে। তারা আরো জানান-প্রায় ১৫-২০ দিন পূর্বে হাতিটিকে গুলিবিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর গত ৩দিন ধরে হাতিটিকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছিলো। অনেক চেষ্টার পরও হাতিটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

হাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান-রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা। তিনি জানিয়েছেন-দূস্কৃতিকারিদের গুলিতে বন্য হাতিটির নির্মম মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেশ-পরিবেশ বন্ধু হাতির এভাবে হত্যা করা অনাকাংখিত ও চরম দূঃখজনক। যারা এমন ঘৃণ্য অপকর্মে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরো বলেন-ভবিষ্যতে বন, পরিবেশ রক্ষার তাগিদে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সবাইকে দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে।

বন বিভাগের জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানিয়েছেন-গত ১৪ নভেম্বর এখানকার গহীন বনে একটি হাতিকে আহত অবস্থায় কাতরাতে দেখে বন বিভাগকে খবর দেয় কয়েকজন কাঠুরিয়া। ওই দিন থেকে গুলিবিদ্ধ হাতিটিকে বাঁচাতে বন বিভাগ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসলেও গুলির আঘাত গুরুতর হওয়ায় বুধবার সকালে হাতিটি প্রাণ হারায়। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে এবং কোনভাবেই জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। হাতিটির নির্মম মৃত্যুতে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দূঃখভারাক্রান্ত। চিকিৎসা চলাকালে কক্সবাজার উত্তন বন বিভাগের কর্মকর্তা তহিদুল ইসলামসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা হাতিটিকে দেখতে গিয়েছিলেন।

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানিয়েছেন-এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে এলাকাবাসীও মর্মাহত। তিনি বন্যপ্রাণী হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে এলাকার সর্বস্তুরের জনতাকে তথ্য দিয়ে সহযোহিতা করার অনুরোধ জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু উপজেলা শাখার সভাপতি সাংস্কৃতিক সংগঠক মাস্টার মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন-২দিনের ব্যবধানে দুটি হাতিকে গুলি ও বিদ্যুৎ শক দিয়ে হত্যা পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার আভাস দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরে চিড়িয়খানাতেও হাতির দেখা মিলবে না। কয়েকমাসে রামুসহ জেলার বিভিন্নস্থানে অসংখ্য বন্য হাতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার খবর দেশের জন্য বড় দূঃসংবাদ। এজন্য সরকারকে বন্যপ্রাণী রক্ষায় দ্রুত কার্যকর প্রদক্ষেপ নিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বন্য হাতি, রামু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন