রামুর চাঞ্চল্যকর হাসান হত্যাকাণ্ডঃ এখনো খোলেনি রহস্যের জট, শনাক্ত হয়নি খুনি

11221188

রামু প্রতিনিধি:

হাসান খুনের ঘটনা নিয়ে কক্সবাজারের রামুতে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এখনো পুলিশ এ খুনের মোটিভ উদ্ঘাটন করতে না পারায় তদন্ত নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, হয়তো হাসানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পরিচিত কেউ বা সংঘবদ্ধ কোনো অপরাধী চক্র এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হতে পারে এবং জায়গা জমি সংক্রান্ত অথবা পূর্বশক্রতা জের ধরে এবং অর্থলোভে এ নৃশংস খুনের শিকার হতে পারেন রামুর যুবক হাসান। এ হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিতে মরদেহ টুকরো-টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল।

ফলোআপ

 

এখন পর্যন্ত হাসানের মৃতদেহের ৪টি অংশ উদ্ধার হলেও একটি পা ও শরীরের বক্ষাংশ উদ্ধার হয়নি। বর্তমানে খুনের রহস্য এবং মামলার অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় নিহত হাসানের বড় ভাই ইসমাইল বাদি হয়ে রামু থানায় মামলা করেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ রবিউল হক নামের এক যুবককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। রবি রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের শ্রীকুল গ্রামের বাসিন্দা।

এ ধরনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনার ‘ক্লু’ বের করতে না পারায় এলাকার লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। নির্মম ভাবে নিহত হাসান রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা জাকের আহমদের ছেলে। বর্তমানে তার বৃদ্ধা বাবা ও স্বজনদের বুকফাটা আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। চোখের জল শুকিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে হাসানের পরিবারের সদস্যদের। গভীর রাতে ভেসে আসে কান্নার রোল। স্মৃতি বলতে শুধুমাত্র ছবির ফ্রেমই রয়েছে। পুত্রহারা পিতা- ভাই বোন ও স্বজনরা সেই ছবি নিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আহজারী করতে থাকেন। আবার কখনো কখনো নীরব নিস্তব্ধ হয়ে একেবারেই নির্বাক।

হাসানের বড় ভাই বাদি মো. ইসমাইল জানান, সম্প্রতি মো. হাসান (২৭) (অবিবাহিত) সৌদি আরব যাওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিল। এরই লক্ষ্যে সে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বন্ধক দেয়ার জন্য আড়াই ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন সে আর ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা অজানা আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে তার সন্ধান না পেয়ে রামু থানায় ( ২৬ সেপ্টেম্বর) একটি নিখোঁজ ডাইরী দায়ের করেন। পরের দিন শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পিএমখালী ছনখোলা এলাকায় বাঁকখালী নদীতে একটি মাথা ভাসতে দেখার খবর পান। পরে সদর থানার পুলিশ ছনখোলা পশ্চিম পাড়াস্থ দরগাহ কবর স্থান থেকে সেই মুখাবয়বসহ মাথাটি উদ্ধার করে।

রোববার সদর উপজেলার বিসিক এলাকায় নয়া খালে পাওয়া গেছে আরও একটি হাত। সোমবার সদর উপজেলার পিএমখালী পাতলী খাল থেকে বিচ্ছিন্ন বাম পা, ঝিলংজা ইউনিয়নের মুক্তারকুলস্থ বাঁকখালী নদী থেকে উদ্ধার করা হয় একটি হাত। শরীরের এসব অঙ্গের সন্ধান মিললেও এখনো হতভাগ্য এই যুবকের একটি পা আর শরীরের বক্ষাংশ এখনো উদ্ধার হয়নি। যতটুকু পাওয়া গেছে তাও অনেকখানি বিকৃত হয়ে গেছে।

তিনি ধারণা করেছেন, দেহের এ ৪টি অংশ তার ভাই হাসানের। এদিকে তিনদিন ধরে বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃতদেহের ৪টি অংশ উদ্ধারের ঘটনায় রামুসহ পুরো জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ramu pic hasan head 3

এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে পরপর কয়েকদিন রামুর সর্বস্তরের জনতা ও দলীয় সংগঠনের উদ্যেগে রামু চৌমুহনী ষ্টেশনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা অবিলম্বে এ ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। শনিবার (৪ অক্টোবর) রামু কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ মাঠে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার রামুর যুবক মো. হাসানের নামাজে জানাযা সম্পন্ন হয়।

বাদি ইসলাঈল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জনসাধারণের মাধ্যমে খবর পেয়ে কক্সবাজার মডেল থানার পুলিশের সহযোগীতায় হাসানের মৃতদেহের ৪টি অংশ উদ্ধার করলেও এখনো শরীরের মুল অংশ ও ডান পা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তিনি আরও জানান, হত্যার ঘটনার প্রায় ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো খুনের রহস্য উদঘাটন এবং প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

রামু-কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, হাসান সৎ ও শান্ত চরিত্রের একজন যুবক ছিলেন । মো. হাসানের হত্যাকান্ডের সঠিক তথ্যদাতাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষনা দিয়ে তিনি আরও জানান, খুনি যে-ই হোক না কেন, আমরা তার বিচার চাই। দ্রুত রহস্য উদঘাটন করতে প্রশাসনকে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অপারেশন অফিসার কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরী এ হত্যাকান্ডটি রামুতেই হয়েছে বলে মন্তব্য করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ সদর উপজেলার নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রথমে একটি মাথা উদ্ধার করেছে। এটি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়। উদ্ধার হওয়া হাত-পা মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে উদ্ধার হওয়া দেহের ৪টি অংশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি আরও জানান সংঘবদ্ধ একটি অপরাধী চক্র অপহরণ করে হাসানের সর্বস্ব লুট করতে গিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিতে মৃতদেহ টুকরো-টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে মো. হাসানের হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রামু থানার সেকেন্ড অফিসার শাহ আলম জানান, এ হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ডিএনএ রিপোর্ট, কললিস্ট ও মোবাইল ট্র্যাকিং, অর্ধশত মোবাইল নম্বরের ভয়েস রেকর্ড সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাইসহ কক্সবাজার সদর ও রামুতে তদন্তের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিহত যুবকের দেহের বক্ষাংশ এবং পা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে এখনো খুনের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন