রেড ক্রিসেন্ট কোভিড হাসপাতালের ডা. সাইফুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য উখিয়ার টিভি রিলে কেন্দ্রের পাশে ঘুমধুমের রাবার বাগানে নির্মিত কোভিড-১৯ হাসপাতালে কর্মরত বিতর্কিত ডা. মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তারেক নামের একজন লন্ড্রি ম্যান। কিন্তু তার প্রতি অমানবিকতার পরিচয় দিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করেন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম।
অনেকের প্রশ্ন: কোভিড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন কর্মচারিকে চাকরি হারাতে হয় তাহলে তারা সাধারণ মানুষকে কি সেবা দেবে? সেবার নামে এসব হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।
এছাড়াও ডা. সাইফুলের অপকর্মের শিকার হয়ে কক্সবাজারের রাজাখালী ফজুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবু বক্কর নামের এক শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে পরিবার ও মামলার খরচ বহন করতে রিকশা চালাতে হয়েছে।
মাত্র ৬ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে ১০ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক। দীর্ঘদিন চুরির এই গ্লানি বহনের পর অবশেষে প্রমাণ হলো, তিনি নির্দোষ। বরং ৩০ সেপ্টেম্বর মামলা খারিজের সময় আদালত বাদী, ডাক্তার, তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থাও নিয়েছেন।
নিরাপরাধ সত্ত্বেও চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ওই শিক্ষকের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়।
২০১০ সালে আবু বকর সিদ্দিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় এজাহার দায়ের করেন একই উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মুদাচ্ছের মুরাদ। এজহারে তিনি চুরির সঙ্গে মারধরের অভিযোগও করেন।
মামলার পর ২০১০ সালের অক্টোবর আবু বকর সিদ্দিককে সরকারি চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সাবাজারের চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব ওই মামলার রায় প্রদান করেন। রায়ে শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিকসহ সকল অভিযুক্তকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার আদেশে বাদীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে মেডিকেল সার্টিফিকেট সরবরাহের কারণে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সাবেক আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) বিতর্কিত ডা. মো. সাইফুল ইসলামকে ২০০০ টাকা জরিমানার দণ্ড, অনাদায়ে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, এই ডা. সাইফুল সিলেট মৌলভী বাজার সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) থাকাকালীন অনৈতিকভাবে সুবিধা নিয়ে হত্যা, ধর্ষণসহ অর্ধশত মামলার সার্টিফিকেট বাণিজ্য করায় এসব মামলায় সাক্ষী হওয়ার স্বত্বেও সাক্ষ্য না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী করেন আদালত। পরে পুলিশের হাতে আটক হন এই সাইফুল।
ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে কয়েক বছর পূর্বে সরকারি চাকরি থেকে বহিস্কার হন। পরে চাকরি নেন রেড বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে। সেখানে কোভিড হাসপাতালের টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এতেও বসে নেই তার অপকর্ম। গেল সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ বিনা নোটিশে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কোভিড হাসপাতালে কর্মরত ৪৯ জন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেন সাইফুল। যারা বর্তমানে চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের৷
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ৩ মাস পূর্বে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কোভিড হাসপাতালে ১২৩ জনবল নিয়োগ দেন। বর্তমানে রোগীর তেমন কোন প্রভাব না থাকায় ৪৯ জনকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেন কর্তৃপক্ষ। এখানে আমার কোন হাত নেই। তবে তাদের স্থলে নতুন করে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি।
উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, বর্ষিয়ান সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্প কেন্দ্রিক বিভিন্ন এনজিও, আইএনজিও পরিচালিত কোভিড-১৯ হাসপাতাল গুলোতে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। সেখানে কোন ধরনের সেবা নেই। আছে শুধুমাত্র লোকদেখানো আয়োজন। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
তিনি এসময় আরও বলেন, ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও, আইএনজি এবং ইউএন সংস্থা ইতিমধ্যে বেশ সংখ্যক লোকবল চাকরিচ্যুত করেছে। আর যারা অবশিষ্ট রয়েছে তারাও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চাকরি হারানোর ভয়ে আছে। তিনি এসব বন্ধে স্থানীয় লোকজনকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কোভিড হাসপাতালে সাইফুুল স্থানীয় ছেলে/মেয়েদের সাথে চাকরির নামে প্রতারণা করেছে। তার নিজস্ব এলাকার ছেলে/মেয়েকে চাকরি দেওয়ার জন্য স্থানীয় ৪৯ জন ছেলে/মেয়েকে চাকরিচ্যুত করেছে। তারা এখন চরম দুর্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। তিনি এসময় আরও বলেন, এসব অনিয়ম বন্ধ না হলে স্থানীয় ছেলে/মেয়েদের নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।