রোহিঙ্গারা মানছেনা সামাজিক দুরত্ব ও লকডাউন: বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

fec-image

বিশ্ব মাহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে সরকার ইতিমধ্যে ঝুঁকিতে থাকা ৩৫টি জেলা লকডাউন ঘোষণা করেছে। তৎমধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী অধ্যুষিত জনপদ কক্সবাজার জেলা অন্যতম। এ জেলার উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বাস করছে। ব্যাপক জনঘনত্বের এই শিবিরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তার পরিণাম ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রোহিঙ্গা ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই অসচেতন হওয়ায় বজায় রাখছেনা সামাজিক দুরত্ব, মানছেনা লকডাউন। এ নিয়ে শিবিরের মানুষজনের মধ্যে কাজ করছে উৎকণ্ঠা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

সরজমিন উখিয়ার থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্প বাজারে প্রচুর রোহিঙ্গা সমাগম। তাদের কাছে করোনার কোন ভয় অথবা তেমন কোন সচেতনতা নেই। আহমদ হোসেন (৫৫) নামের এক বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গা জানান, সেও মানুষের নিকট থেকে করোনা নামক ভাইরাসের কথাটি শুনেছেন। ক্যাম্পে গত ১৫দিন আগে মাইকিং করে একবার ঘর থেকে বের না হতে বলেছিলেন।

এরপর থেকে আর কোন কিছু জানেনা সে। ক্যাম্পের অভ্যান্তরে একটি সেবা সংস্থার অফিসে ত্রাণ দিতে দেখা গেছে। ত্রাণ নিতে আসা রোহিঙ্গা সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা দুরের কথা একজন আরেক জনের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সেবা সংস্থার লোকজনও তাদেরকে এব্যাপারে সচেতন করছেনা।

পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের এত কড়াকড়ির মাঝেও রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে থাইংখালী স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের কোন আতঙ্ক নেই। রোহিঙ্গাদের এমন আচারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে স্থানীয়রা।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপারে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা এদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এদের অনেকের করোনা উপসর্গ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও স্থানীয় এলাকা তাদেরকে অনুপ্রবেশের বাধা দিয়ে আসছে। প্রশাসন কঠোর না হলে যেকোন সময় তারা এদেশে চলে আসতে পারে। আর এসব অসুস্থ রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ঢুকে পড়লে পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঝুঁকিতে পড়বে।

কুতুপালং আনরেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর বলেন, করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যে যেভাবে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সামাজিক দুরত্বের ব্যাপারে এই রোহিঙ্গা নেতা জানায়, রোহিঙ্গাদের মাঝে এসব বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কিন্তু ক্যাম্প প্রশাসন বিভিন্ন লিফলেট, পোস্টার দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা করোনা ভাইরাস নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে বলে সতর্ক করেছে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘আইসোলেশান ইউনিট’ হিসাবে দেড়শটি শয্যা প্রস্তুতের কাজ চলছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় বিভিন্ন সংস্থার ৩০০ জন ডাক্তার, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফে ট্রানজিট ক্যাম্পকে কোয়ারেন্টাইনে প্রস্তুত করা হয়েছে। বিদেশ ফেরত ৩৬ জন রোহিঙ্গাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্য সচেতনতার ব্যাপারে তিনি আরো জানান, বার্মিজ ভাষায় লিফলেট, পোস্টার তৈরি করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ‘শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি, যদিও শিবিরগুলোয় এখনও কোভিড-১৯ সম্পর্কিত কোনও সন্দেহজনক ঘটনা পাওয়া যায়নি। তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইউএনএইচসিআর। পাশাপাশি সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশি পরিদর্শকদের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নতুন করে আসা বিদেশীদের ক্যাম্পে প্রবেশ একদম বন্ধ করা হয়েছে। গত ১১ মার্চ থেকে জরুরী সেবা ব্যতিত ক্যাম্পে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গণবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে সচেতন করার প্রশাসন সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকি থাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইসোলেশন সেন্টার, কোয়ারেন্টাইন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও টিএন্ডটি আর্মি চেকপোস্ট এলাকায় জাতিসংঘের বিশেষায়িত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) পার্টনারে ইউএনএইচসিআর তত্ত্বাবধানে ২’শ বেডের করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। ওই হাসপাতালে স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গারা সেবা নিতে পারবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গারা, লকডাউন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন