শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত, ২৫টি বিভাগ হস্তান্তর, ২৩৮টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী

PM1

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) দায়িত্ব গ্রহণ করার পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি বলেন, সরকারের বর্তমান মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেগবান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের এ কে এম রহমতুল্লার পক্ষে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে ৭৮টি ধারা রয়েছে। এরমধ্যে ৪৮টি ধারা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৫টি ধারা আংশিক এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের মূল কারণ হলো ভূমি। ভূমির সেই বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে এ অঞ্চলের দীর্ঘ দু’যুগব্যাপী চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান হয়ে শান্তি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, এ অঞ্চলের স্থানীয় উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষ্যে শান্তি চুক্তির আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে যথেষ্ট কার্যকরী করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্য থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ঘ. ১ নং শর্ত অনুযায়ী ভারত প্রত্যাগত ও তিন পার্বত্য জেলার অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভূমি নিষ্পত্তির কমিশন আইন, ২০০১ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ভূমি বিরোধ যথাযথভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির খ. ২৪ (ক) নং শর্ত অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপ-জাতীয় পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতার ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির স্থলে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চিতে শিথিল করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রও নৃগোষ্ঠী জনগণের জন্য নির্ধারিত কোটা সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা মাতৃভাষার পাঠদান চালু করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ঘ খণ্ডের ১৭ (ক) ধারা অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এ পর্যন্ত ২৩৮টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহে হস্তান্তরের জন্য ৩৩টি বিভাগ বা বিষয় রয়েছে। এ যাবত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৫টি বিভাগ, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৫টি বিভাগ ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৩টি বিভাগ হস্তাস্তরিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটে (এডিপিভুক্ত ৩টি প্রকল্পসহ) মোট ১৫ হাজার ৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি বড় প্রকল্পসহ ৬ হাজার ১৯২টি আর্থ-সামাজিক, কৃষি, যোগাযোগ, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, ধর্ম, স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য, আয়বর্ধনমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। বর্তমানে ৭শ’টি প্রকল্প বা স্কীম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এডিপিভুক্ত ৩টি প্রকল্পসহ উন্নয়ন বাজেটের আওতায় চলতি বছর মোট ৪৭৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, কৃষি, পরিবেশ ও বন, ভূমি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার তার পূর্ববর্তী ও বর্তমান মেয়াদে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছে।

তিনি বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ভূমি কমিশন, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও পুনর্বাসন এবং আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সসহ পার্বত্য অঞ্চলের সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যতঃ অকার্যকর ছিল।

শুরু থেকেই বিএনপি এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। এখনো সেই অবস্থান থেকে সরে আসেনি তারা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য দায়ী রাজনৈতিক কারণ, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যে চুক্তি তারা করেছিলেন, সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর বিএনপি – জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সেই চুক্তির অধিকাংশ বাস্তবায়ন করেনি। যে কারণে পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন চরমভাবে ব্যাহত হয়।

ওয়াদুদ ভূইয়াকে উদেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে একজন যোগ্য উপজাতীয় লোককে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। বিএনপি তা না করে একজন অউপজাতীয় পাহাড়ের সন্ত্রাসীকে নিয়োগ দেয়। তারা ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি না করে অউপজাতীয়দের জমি বণ্টন করে তীব্র সমস্যা তৈরি করে রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এই শাক্তি চুক্তি করেছিলেন পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের জন্য। এই সরকারের মেয়াদে বাকি যেসব কার্যক্রম রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন