পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি কারো পক্ষেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়- গওহর রিজভী

গওহর-রিজভী

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী জানিয়েছেন,শতভাগ শান্তিচুক্তি কারো পক্ষেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে যেটুকু বাস্তবায়নযোগ্য তা বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হবে।

 

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচসি) ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম (বিআইপিই) আয়োজিত ‘আদিবাসী অধিকার উপলদ্ধি এবং আইএলও কনভেনশন, ১৬৯’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

গওহর রিজভী বলেন, দেশে ইতোমধ্যে ৩৩টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২৫টি স্থানান্তরিত হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ৩টি স্থানান্তরিত হবে। বাকি ৩টি এ বছরের মধ্যে স্থানান্তর করা হবে। তিনি বলেন, এ বছরের শান্তিচুক্তির বাকি কাজ শেষ করা হবে। কাজ শেষ হলে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে।

চুক্তি বাস্তবায়নে ষড়যন্ত্রকারীদেরকে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে গওহর বলেন, ‘বাধা দিলে চুক্তি বাস্তবায়ন হবে না। এ চুক্তি বাস্তবায়ন আদিবাসীদের অধিকার। বর্তমান সরকার এই চুক্তি করেছে এবং এই সরকারই চুক্তি বাস্তবায়ন করবে’।

অনুষ্ঠানে ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা আদিবাসী নন- বারবার এ ব্যাখ্যা দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তৎকালীন দুই মন্ত্রী কেন আদিবাসীদের নিয়ে এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা আমাদের বুঝে আসছে না’। তবে এ ধরনের ব্যাখ্যা না দিতে সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।
 
তিনি আরো বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সব জায়গায় আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করে আসছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, পন্থা ও নীতির প্রশ্নে কখনো আপোষ করে না। সরকার ও আদিবাসীদের মধ্যে পারস্পরিক যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়ে হয়েছে, তা দূর করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে। একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আদিবাসীদের সঙ্গে সব ধরনের উন্নয়নে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে চায়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার কষ্ট হয় যখন আমার নিজ জন্মস্থান গাইবান্ধায়ও ঢোকার পথে জেলখানা চোখে পড়ে। আরও বেশি কষ্ট হয় যখন অন্য আরো একটি শহরে ঢোকার পথে (পাবর্ত্য চট্টগ্রামে) সেনানিবাস অতিক্রম করতে হয়। রাষ্ট্রের এমন কদর্য চেহারা আমরা দেখতে চাই না’।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি রামুতে একটি সেনানিবাসের জন্য ১৬ শ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও মানবাধিকার বিষয়ে সুপারিশ গ্রহণে আগামী ৩১ মে রাঙামাটিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হচ্ছে। আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের নজরে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, হয় পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করুন না হয় আদিবাসীদের দাবী মেনে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন প্রদান করুন।
 
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ডালিম চন্দ্র বর্মন প্রমূখ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
 
অনুষ্ঠানে ‘আদিবাসী অধিকার উপলদ্ধি এবং আইএলও কনভেনশন নং ১০৭, ১৬৯’ এর ওপর কি-নোট উপস্থাপন করেন বিআইপিই’র সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আদিবাসী, পার্বত্যচুক্তি, শান্তিচুক্তি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন