ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধার ঘর নিমেষেই গুড়িয়ে দিল প্রভাবশালীরা

kawkhali-news-pic-2

কাউখালী প্রতিনিধি:
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় প্রভাবশালী ইটভাটা মালিকের অত্যচারে ভিটেমাটি হারাতে বসেছে ষাটোর্দ্ধ কুলসুমা বেগম (৬৮)। একের পর মামলা-হামলা দিয়েও যখন কোনোভাবে ভিটেমাটি থেকে সরানো যাচ্ছেনা ঠিক তখনই ভূক্তভোগিদের অনুপস্থিতিতে ভাড়া করা লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়ে মাথা গোজার সম্বল একমাত্র বসতঘরটি নিমেষেই মাটির সাথে মিশিয়ে দিল সন্ত্রাসীরা।

রবিবার দুপুরে হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের সুগার মিল আদর্শগ্রাম এলাকায়।

এই ঘটনার পর থেকে অদ্যবদি নিজ সন্তান-নাতি-নাতনিদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বৃদ্ধা সালমা বেগম (৬৮)। বিচারের আশায় চেয়ারম্যান, মেম্বারের দারে দারে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম এলাকার বাসিন্দা স্বামীহারা কুলসুমা তার দখলে থাকা খাস জমিতে অন্তত ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছেন।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অসহায় কুলসুমার জমির উপর নজর পড়ে এলাকার প্রভাবশালী ইটভাটার মালিক পাইথুই অং মারমা (পার্থিব বাবু), এলাকার ক্ষমতাধর সগির আহাম্মদের ভাই জহির আহাম্মদ ও ওলি আহাম্মদের।

ইটভাটার মাটি সংগ্রহ ও উক্ত জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য পার্থিব বাবু তার বাহিনী দিয়ে বসতঘরের জায়গাটি দখলে নিতে চেষ্টা চালায়। পুরো জায়গা দখলে নিতে না পারলেও ইতিমধ্যে কুলসুমার অনেক জায়গা তারা দখল করে নিয়েছে।

১৬ অক্টোবর কুলসুমার ৫০ ফুট লম্বা বসতঘরটি এক্কেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আর সেই ঘরের এককোণে বসে বিলাপ করছের কুলসুমা ও তার সন্তানরা।

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কুলসুমা এগিয়ে জানান, তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও পূত্রবধূসহ নাতিকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন তিনি। বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দেওয়ার পর অবশেষে মামলা দিয়ে হয়রানী করে অর্থনৈতিকভাবে তার পরিবারকে চরম ক্ষতির সম্মুখিন করা হচ্ছে।

এতো কিছুর পরও না পেরে সর্বশেষ মামলা দিয়ে এবং মারধর করে আহত করা হয়, কুলসুমা ও তার মেয়েসহ দুই ছেলেকে। এতে করে তারা মামলায় জামিনের জন্য রাঙামাটির আদালতে গেলে, রোববার দুপুরে সন্ত্রাসীরা এসে ধারালোর অস্ত্রের আঘাতে খুটিগুলো কেটে মাটিতে লুটিয়ে দেয় বৃদ্ধার একমাত্র বসতঘরটি।

এসময় লুটপাট করা হয় তার মূল্যবান জিনিসপত্র। পরে একই দিন সন্ধ্যায় কাউখালী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে সেখানেও মামলা নিতে গড়িমসি করা হয় পুলিশ।

পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্থতায় স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে মিমাংসা করা হবে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে শশুর বাড়ি থেকে বেড়াতে আসা মেয়ে, ছেলের বউ নাতি-নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীব যাপন করছে ষাটোর্দ্ধ কুলসুমা।

কান্নাজড়িত কন্ঠে কুলসুমা বেগম জানান, পাথিব বাবু স্থানীয় আঞ্চলিক দলের নেতা। তার অনেক প্রভাব রয়েছে। চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ’র সাথে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা। সেই কারণে তার প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।

পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাউখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শেষ মেষ মঙ্গলবার ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেয়। মামলার নাম্বার হলো- ৭ তারিখ: ১৮/১০/২০১৬ইং।

এবিষয়ে অভিযুক্ত পাথিব বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসবই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এছাড়া উক্ত জায়গাটি তার দাদার সম্পত্তি বলেও দাবি করেন তিনি। তাহলে কিভাবে ৪০ বছর ধরে উক্ত জায়গায় কুলসুমা বসবাস করছেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দিতে পারেনি তিনি।

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল করিম জানিয়েছেন, ঘটনাটি নিয়ে প্রথমে মিমাংসার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু আমরা পরবর্তীতে মামলা গ্রহণ করেছি এবং আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন