সব অনিশ্চয়তার অবসান, বাংলাদেশে সফরে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ক্রিটেক ভক্তদের অপেক্ষার প্রহর শেষ। সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে গেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। দীর্ঘ ১১ বছর পর দ্বিপক্ষীয় টেস্ট সিরিজ খেলতে টাইগারদের দেশে তাদের আগমন। সফরটা তাই স্মিথ-ওয়ার্নারের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সেই চ্যালেঞ্জটাকে আরও বড় করে তুলেছে টাইগাররাও। ঘরের মাঠে সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের দর্প চুর্ণ করে দেয়া মুশফিকুর রহিমের দল তাদেরও সহজে ছেড়ে দেবে না। বিষয়টা বেশ ভালো করেই জানা দলপতি স্টিভেন স্মিথের। ঢাকার উদ্দেশ্যে পা বাড়ানোর আগে তিনি জানিয়ে এসেছেন, বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা জানা আছে তার দলেরও।

২০০৬ সালে টেস্ট খেলার জন্য শেষবার বাংলাদেশ সফর করেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। এরপর একবার এসেছিল তারা, তবে সেই সিরিজ সীমাবদ্ধ ছিল তিনটি ওয়ানডেতেই। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দলে থাকা ক্রিকেটারদের কারোরই বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া যখন শেষবার বাংলাদেশে টেস্ট খেলে গেছে, স্মিথ-ওয়ার্নারদের তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকই হয়নি। তবে এই উপমহদেশের আলো-হাওয়া একেবারে অচেনা নয় তাদের। সম্প্রতি শ্রীলংকা এবং ভারতে সিরিজ খেলে গেছে স্মিথের অস্ট্রেলিয়া।

ওই দুটো সিরিজের অভিজ্ঞতা অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার জন্য সুখকর নয়। সুখকর নয় এর আগের সিরিজগুলোর অভিজ্ঞতাও। তবে ওই সিরিজগুলো এবং আইপিএল খেলার সুবাদে উপমহাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে কিছুটা হলেও সখ্য গড়ে উঠেছে স্মিথ-ওয়ার্নারদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের। তবে দলের জন্য স্মিথ বড় করে দেখছেন বছরের গোড়ার দিকের সবশেষ ভারত সফরটাকে। সবমিলে টাইগারদের বিপক্ষে ময়দানি লড়াইয়ে নামার আগে উপমহাদেশের কন্ডিশনকে জয় করতে হতাশার ‘ভারত সফর’ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাটাকেই কাজে লাগাতে চাইছেন তিনি।

স্মিথ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ বছর আগের পুরনো স্মৃতিকে আগলে রাখা নিছক ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। কেননা, তখনকার বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তর ফারাক। বর্তমান সময়ে একের পর এক অসাধারণ জয়ে বড় বড় দলগুলোর শক্তভীতও কাঁপিয়ে দিচ্ছে তামিম-সাকিব-মুশফিকরা। ঘরের মাঠে তো এখন ভয়ংকর রূপই ধারণ করে টাইগার বাহিনী। দেশ ছাড়ার আগে খোদ স্মিথই স্বীকার করলেন এমনটা, ‘নিজেদের কন্ডিশনে তারা সত্যিই অনেক ভালো একটি দল। প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং।’

বাংলাদেশের উইকেট সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা নেই অজি ক্রিকেটারদের। তবে বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ডারউইনেই নিজেদের প্রস্তুতিপর্বটা সেরেছেন তারা। কারণ ওইখানকার আবহাওয়াটা অনেকটাই উপমহাদেশের মতোই। কিন্তু এতেও স্বস্তি পাচ্ছেন না স্মিথ। তিনি স্বস্তি খুঁজতে চাইছেন সবশেষ ভারত সফর থেকে। কারণ, ভারত আর বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং উইকেটের আচরণ প্রায় একই। স্মিথ তাই বলছেন, ‘সেখানকার কন্ডিশনে কিছু ম্যাচ খেলতে পারাটা আমাদের জন্য দারুণ একটি সুযোগ। দেখা যাক, আমরা ভারতে কি শিখেছি। আশাবাদী, ছেলেরা অনেক কিছুই শিখেছে এবং বাংলাদেশ সফরে আমরা তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারব ও এটা অন্যতম ভালো একটি সফল সফরই হবে।’

এদিকে দল নির্বাচনে যথেষ্ট সচেতন স্মিথ। মূল একাদশ নিয়ে খেলা মাঠে নামার পর আফসোস করতে নারাজ তিনি। তাই কন্ডিশন এবং খেলোয়াড়দের বর্তমান পারফরম্যান্সের উপরই জোর দিচ্ছেন স্মিথ। তার সমর্থন পাচ্ছেন উসমান খাজা এবং অ্যাস্টন অ্যাগার। গত অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন খাজা। কিন্তু অফস্পিনের বিপক্ষে দুর্বলতার কারণেই জাতীয় দলে স্থায়ী হতে পারেননি এই বাহাতি ব্যাটসম্যান। আর মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিষিক্ত অ্যাগারের ক্যারিয়ারে বাঁধ সেঁধেছিল কম বয়সটাই। তবে সব ছাপিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অজিদের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন এই দুই খেলোয়াড়। তখন থেকেই প্রশ্ন ছিল- মূল একাদশে কি থাকবেন তারা?

টাইগারদের বিপক্ষে খেলতে দেশ ছাড়ার আগে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অধিনায়ক স্মিথ। তিনি জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার মূল একাদশে খেলার জন্য প্রস্তুত খাজা এবং অ্যাগার। খাজার উপর স্মিথ আস্থা রাখছেন আসন্ন অ্যাশেজ সিরিজের কথা মাথায় রেখে। বাংলাদেশে আলো ছড়ানোর পর ওই সিরিজে বাহাতি ব্যাটসম্যান ভালো ভূমিকা রাখবেন, এমনটাই আশা করছেন স্মিথ, ‘আমি মনে করি, এই গ্রীষ্মে অ্যাশেজে খাজা আমাদের জন্য অনেক বড় একজন খেলোয়াড় হতে চলেছেন। বিগত বছরগুলোতে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অবিশ্বাস্য খেলে আসছেন এবং এটা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য খুবই ভালো। আমি মনে করি, সে এখানে (বাংলাদেশ সফর) ভালো একটি সুযোগ পাবে।’

এদিকে ২০১৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকেই নজর কেড়েছিলেন অ্যাগার। স্পিনার হিসেবে খ্যাত অ্যাগার অভিষেকেই ১১ নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৮ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস খেলেন। ওই সিরিজে দুই টেস্ট খেলার পর তাকে আরও পরিপক্ব করতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরিয়ে নেয় দেশটির টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে বাংলাদেশ সফর দিয়েই পুনরায় অজিদের হয়ে খেলার সুবর্ণ সুযোগই পাচ্ছেন তিনি এমনটাই জানালেন স্মিথ, ‘বিগত বছরগুলোতে সে নিজের মধ্যে অনেক ভালো পরিবর্তন আনতে পেরেছে। এখানে এক সপ্তাহ সত্যিই সে দারুণ বল করেছে। যদি সবকিছু এভাবেই চলতে থাকে, তবে সম্ভবত সে একটি সুযোগ পেতে চলেছে। আমার চোখে সে ধারাবাহিক এবং ভালো জায়গা বল ফেলতে পারলে, সে খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আমি মনে করি, এটাই একজন স্পিনারের মূলমন্ত্র, বিশেষ করে উপমহাদেশে।’

এদিকে মূল একাদশ নির্বাচনে ব্যাটিং লাইনআপের ছয় নাম্বারের খেলোয়াড় নির্বাচনেও কিছুটা মধুর সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। কেননা, এই পজিশনে খেলতে প্রস্তুত স্পিন অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং পেস অলরাউন্ডার হিল্টন কার্টরাইট। এই দুজনের থেকে একজনকেই বেছে নিতে হবে সফরকারীদের। তবে চলতি বছরের শুরুতে ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলা ম্যাক্সওয়েলই এগিয়ে এই দৌড়ে এবং অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার আগে স্মিথের কণ্ঠেও শোনা গেল সেই সুর, ‘আমি মনে করি, ভারতের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে সে (ম্যাক্সওয়েল) অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছি, দেখি কন্ডিশন কেমন দেখায়। এরপরই দলের প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা সেরাদের সমন্বয়েই দল গঠন করব।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন