যোগেন্দ্র পাড়ার ৮০টি পরিবার এখনো দেখেনি বিদ্যুতের আলো

সড়ক থাকলেও নেই বিদ্যুতের সুব্যবস্থা, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত

fec-image

বর্তমান সরকারের আমলে পাহাড়ের আনাচে কানাচে উন্নয়নের ধারা ছেয়ে গেছে বরাবরই মতন। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যুতের আলো পৌঁছাতে পারেনি সেখানে এখন সোলার আলোতে আলোকিত। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চিত্রও একই রকম।

দুর্গম সীমান্তবর্তী কুরুকপাতা, পোয়ামুহুরী এলাকায় সাধারণ মানুষরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকলেও সেসব স্থানে এখন পৌঁছে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উন্নত মানের সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা ও গ্রামে গ্রামে ছড়াচ্ছে সোলারে আলো।

ফলে সেসব এলাকার বসবাসরত জনগোষ্ঠীরদের জীবনযাত্রা মান এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। কিন্তু শহরের নাগালে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে কয়েকটি গ্রাম এখনো বিদ্যুবিহীন। ওই এলাকায় ব্যাপকভাবে উন্নয়ন হলেও গ্রামবাসীরা এখনো দেখেনি বিদ্যুতের আলো। উন্নত মানের কার্পেটিং সড়ক থাকলেও বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে জীবনযাপন করছেন যোগেন্দ্র পাড়া গ্রামের ৮০টি পরিবার।

আলীকদম সদর থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া ইউনিয়নের অবস্থিত ৩নং ওয়ার্ডের যোগেন্দ্র কারবারি পাড়া, রোনেমন কারবারি পাড়া ও বসুদেব পাড়া। সেসব গ্রামে তঞ্চঙ্গ্যা ও ম্রো সম্প্রদায়ের ২শত পরিবারের বসবাস। সেখানে শিশুদের জন্য রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে শিক্ষার আলো পেলেও বিদ্যুতের আলোর জন্য হাহাকার সেখানকার বাসিন্দাদের।

যোগেন্দ্র গ্রামে যেতে দেখা মেলে উন্নত মানের কার্পেটিং সড়ক, সিড়ি ও ব্রিজ। অথচ এত এত উন্নয়নের ছোঁয়া পরও কয়েকশত বছর ধরে বিদ্যুতের আলো এখনো দেখেনি গ্রামটি। সন্ধায় হলেই অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো এলাকা। ফলে বহুবছর ধরে ভূতুরের পরিবেশে জীবনযাপন করছেন ওই এলাকার মানুষজন। তাছাড়া সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে তুলনামূলক অস্বচ্ছল- এমন অনেকে নিজ উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য।

যোগেন্দ্র পাড়া কারবারি (গ্রাম প্রধান) অংক্যসিং তঞ্চঙ্গ্যা জানিয়েছেন, যোগেন্দ্র পাড়া গ্রামের বয়স আড়াইশত বছর। কিন্তু এখনো বিদ্যুবিহীন অন্ধকারে বসবাস করেছেন গ্রামের মানুষ। শহরে কাছে হয়েও কেন বিদ্যু দেওয়া হচ্ছে না তিনি সেটি জানেন না। তবে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন গ্রাম প্রধান।

গ্রামবাসীরা জনিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডের তিনটি গ্রাম রয়েছে। গ্রামের পরিবারের সংখ্যা প্রায় দুইশতের অধিক। গেল ২০১৯ সালে যোগেন্দ্র কারবারি পাড়া পর্যন্ত কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। সড়ক হওয়ার পর ওই এলাকায় পৌঁছে যায় সবধরনের সুযোগ সুবিধা। সবকিছু পেলেও বিদ্যুতের দেখা তারা পান না। বিদ্যুৎ আসবে-আসবে এই আশায় দিন, মাস ও বছর কেটে যায়। কিন্তু এখনো বিদ্যুতের আলোর দেখা পায়নি আলীকদমের নয়াপাড়া ইউনিয়নের যোগেন্দ্র কারবারি গ্রামের বাসিন্দারা। যার ফলে থমকে গেছে ওই এলাকার জীবনযাত্রা মান। এখনো পিছিয়ে আছে শিক্ষার দিক থেকেও। গ্রামে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও বিদ্যুৎতের আলো না পৌঁছার কারণে অন্ধকারে পড়ালেখা করতে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

এসএসসি শিক্ষার্থীর কমলামতি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সন্ধায় হলে আমাদেরকে চেরাগ কিংবা হারিকেনের আলো দিয়ে লেখাপড়া করতে হয়। যার কারণে আমরা ভালো রেজাল্ট করতে পারি না। তেল কিংবা মোমবাতি শেষ হয়ে গেলে পড়ালেখা শেষ করতে হয়। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

বসুদেব পাড়া বাসিন্দা ইয়ং পে ম্রো বলেন, আমাদের এলাকায় সবকিছু উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের জন্য অনেক কষ্টে আছি। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করতেও সমস্যা হচ্ছে। আর রাত হলে টর্চ জ্বালিয়ে রাস্তা হেটেঁ বাড়িতে যেতে হয়। কেরোসিন দামও বেড়ে গেছে। প্রতিদিন কেনার ক্ষমতায় নাই আমাদের। আমরা দিনে এনে দিনে খায়!

আলীকদম সদর দিয়ে পাহাড়ের আকাঁবাকাঁ পথ বেয়ে যোগেন্দ্র কারবারি পাড়া পর্যন্ত গেছে কার্পেটিং সড়কটি। গ্রামে প্রবেশে যাতায়াতের সুবিধার্থের তৈরী করে দেওয়া হয়েছে একটি সিড়ি। তাছাড়া সেখানকার মানুষদের জন্য সুপেয় পানির নিশ্চিত করতে পাচঁ হাজার লিটারের একটি হাউস তৈরি করে দেয়া হয়। কিন্তু বিদ্যু না থাকায় এখনো অকেজোভাবে পড়ে আছে সেটি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধায় হলেই নেমে আসে পুরোপুরি অন্ধকারচ্ছন্ন। বিদ্যুৎতে আলো না থাকায় চেরাগ কিংবা হারিকেনের আলোতে চলছে পড়ালেখা আবার ঘরে নানান কাজ। এমন অন্ধকার ভোগান্তিতে থেকে কখন মুক্তি মিলবে এই প্রহর গুনছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিন বলেন, নয়াপাড়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের জন্য দাবি জানিয়েছেন। তবে পার্বত্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন দ্রুতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হবে। আর বিদ্যু পৌঁছে গেলে সেখানকার গ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থা ও মান উন্নয়নের জন্য সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবেদ মোহাম্মদ সোয়াইব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুটি অনুযায়ী ঘরে ঘরে বিদ্যুৎতের অংশ হিসেবে নয়াপাড়া ইউপি অধীনে যোগেন্দ্র কারবারি গ্রামে খুব দ্রুত বিদ্যুতের সংযোগ হবে বলে আশা করছি। এই ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন