১৮ জানুয়ারী বাংলাদেশের ২৬ জেলায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে তিন পাহাড়ী সংগঠন

IMG_0032-300x200

স্টাফ রিপোর্টার :

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতল অঞ্চলে আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশনের দাবিতে’ ১৮ জানুয়ারী বাংলাদেশের ২৬টি জেলায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে তিন পাহাড়ী সংগঠন।

সংগঠন তিনটি হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম (পার্বত্য চট্টগ্রাম শাখা) ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক।

আগামী ১৮ জানুয়ারি সোমবার, সকাল ১০ ঘটিকা থেকে ১১ ঘটিকা পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনদুম থেকে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার দুদকছড়া পর্যন্ত ৩০০ কি. মি. সড়ক এবং দেশের সমতলের ২৩টি জেলা মিলে ২৬ টি জেলার জেলা সদর ও উপজেলা সদরে মানববন্ধনের আহ্বান করা হয়েছে।

কর্মসূচীর অন্তর্ভূক্ত সমতল জেলাসমূহ: ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাও, নওগাঁ, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মধুপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কুলাউড়া, দুর্গাপুর, মৌলবীবাজার, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সাভার, বগুড়া ও বরগুনা।

মানববন্ধন উপলক্ষ্যে শনিবার রাঙ্গামাটিস্থ টুগুন রেষ্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সহ সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সদস্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষাকর্মকর্তা অঞ্জুলিকা খীসা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক হিটলার দেওয়ান, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান ও দপ্তর সম্পাদক অঞ্জন দেওয়ান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় তিন আঞ্চলিক সংগঠনের সক্রিয় সমর্থন থাকবে বলে পার্বত্যনিউজকে নিশ্চিত করেছেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা।

মানববন্ধনের জন্য প্রশাসনের অনুমতি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শান্তি বিজয় চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমরা পত্র মারফত আমাদের কর্মসূচীর কথা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তবে তাদের কোনো অনুমতি পাইনি। কিন্তু তাদের কোনো অনুমতির প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।

লিখিত বক্তব্যে গৌতম দেওয়ান বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে চুক্তি পক্ষীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ আশা করেছিলাম যে, এবার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে। মহাজোটের প্রধান শরীক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তৎসময়ে নির্বাচনী ইসতেহারে “পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত করা হবে” মর্মে অঙ্গীকার করায় পার্বত্যবাসী ও দেশের নাগরিক সমাজ আরো বেশি আশান্বিত হয়ে উঠে।

কিন্তু আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্ করছি যে, ২০০৯ সালের পর ক্রমাগত সাত বছর ধরে মহাজোট সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) চুক্তির পূর্বে হস্তান্তরিত বিষয়/বিভাগের অধীন ৭টি কর্ম এবং দ্বিতীয় মেয়াদে (২০১৪-২০১৫) ৫টি বিষয় হস্তান্তর ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।

তিনি বলেন, চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ সামগ্রিকভাবে এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো: পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে আইনী ও সংবিধিবদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ ইত্যাদিসহ ৩৩টি বিষয় ও কার্যাবলী পূর্ণাঙ্গভাবে হস্তান্তর এবং এসব পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচিত পূর্ণাঙ্গ পরিষদ গঠন; স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভোটার তালিকা প্রণয়ন; পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ এবং অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিলকরণ; আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু ও প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ ও তাদের স্ব স্ব জায়গা-জমিতে পুনর্বাসন; ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারপূর্বক বেসামরিকীকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকুরীতে পাহাড়িদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ; চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ সংশোধন করা ইত্যাদি।

গৌতম দেওয়ান আরো বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও জাতীয়ভাবে সমাধানের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে এ চুক্তি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এই পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের পক্ষে তিন সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম (পার্বত্য চট্টগ্রাম শাখা) ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের উদ্যোগে আগামী ১৮ জানুয়ারি প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়কে এবং তিন পার্বত্য জেলাসহ সমতলের জেলা-উপজেলা সদরে গণ-মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।

উক্ত গণ-মানববন্ধন কর্মসূচিতে দাবিনামা সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে যোগদান করার জন্য উপরোক্ত সড়কের গ্রাম, মৌজা, ইউনিয়ন ও উপজেলার অধিবাসীদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

তিন পার্বত্য জেলার প্রায় ৩০০ কি.মি. সড়কে মানববন্ধন নেটওয়ার্ক:

বান্দরবান জেলা: ঘুনধুম-নাইক্ষ্যংছড়ি-বাইশারী-গয়ালমারা-লাইমঝিরি (লামা)-গজালিয়া-১৬ মাইল (চিম্বুক)- বান্দরবান সদর-বালাঘাটা-ডুলুপাড়া-আমতলী।

রাঙ্গামাটি জেলা: বাঙ্গালহালিয়া-বরইছড়ি-কাপ্তাই-ঘাগড়া-রাঙ্গামাটি সদর-মানিকছড়ি-ঘিলাছড়ি-সাবেক্ষ্যং ইউপি।

খাগড়াছড়ি জেলা: মহালছড়ি ইউপি-মাচ্ছ্যছড়া-বিজিতলা-খাগড়াছড়ি সদর-পেরাছড়া-ভাইবোনছড়া-লতিবান- পানছড়ি সদর-পুজগাং-দুদুকছড়া।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন