স্টাফ রিপোর্টার:
পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পারিবারিক আদালত স্থাপনের প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছেন আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। শনিবার বিকালে রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত ‘পারিবারিক আদালত: পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মত দিয়েছেন।
পার্বত্য তিন জেলায় পারিবারিক আদালত স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তার মতামত ও পরামর্শ নিতে শনিবার ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় রাঙামাটিতে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ব্লাস্ট রাঙামাটি ইউনিট। বিকালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে সংস্থার রাঙামাটি ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট পরিতোষ কুমার দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। এতে প্রধান আলোচক হিসেবে অংশ নেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্লাস্ট রাঙামাটি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান। প্রতিবেদন ও ধারণাপত্র উপস্থাপনা করেন ব্লাস্ট প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহবুবা আক্তার ও অ্যাডভেকেট সুস্মিতা চাকমা। বক্তব্য রাখেন, ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ কর্মকর্তা ঝুমা দেওয়ান। প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইদ্রিসুর রহমান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সদস্য নিরূপা দেওয়ান ও রাঙামাটি জেলার পাবলিক প্রসিউউিটর অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অংশ নেন সার্কেল চিফ, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কারবারি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নারী অধিকার ও মিডিয়াকর্মীরা।
এ বিষয়ে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা। এখানে বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রচলিত। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ও ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আইন অনুযায়ী এখানকার বিচার ব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রথাগত আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ, মৌজার হেডম্যান ও গ্রামের কারবারিরা পারিবারিক বিরোধ নিস্পত্তিসহ সমাজের সমস্যাগুলোর নিস্পত্তি করে থাকেন। এসব আইন কেবল পাহাড়িদের বেলায় নয়, এখানকার অধিবাসী সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে পারিবারিক আদালতের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং পারিবারিবারিক আদালত স্থাপন হলে বিদ্যমান আইনগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বিদ্যমান আইনে বলা আছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন কেকানো আইন বা বিধি প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিবর্তন আনতে হলে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মতামত ও পরামর্শ নিতে বাধ্য।
চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, বিষয়টি জটিল। আরও গভীরভাবে ভাবা দরকার। অভিজ্ঞ মহলের সূচিন্তিত মতামত নেয়া উচিত। তবে তিন পার্বত্য জেলায় যেখানে প্রথাগত আইনে পারিবারিক বিরোধের রায় দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে সেখানে পারিবারিক আদালতের তেমন প্রয়োজনীয়তা নেই। মূল উদ্দেশ্য হল ন্যায় ও সুবিচার নিশ্চিত করা। এখানে কোনোভাবেই যাতে কোনো সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার না হয় সেটা দেখতে হবে। প্রথাগত আইনে পার্বত্য অধিবাসী সবার বেলায় পারিবারিক বিরোধ নিস্পত্তির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
ব্লাস্ট রাঙামাটি ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট পরিতোষ কুমার দত্ত বলেন, পার্বত্য তিন জেলায় পারিবারিক আদালত স্থাপন করা হলে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ প্রচলিত আইনের ক্ষেত্রে জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে অনেক সম্প্রদায়েরর মানুষ সমস্যায় পড়তে পারে। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে পারিবারিক আদালত এনে খাল কেটে কুমির না আনাটাই ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।