রামগড়ের দুর্গম এলাকায় বাঙালিদের ভূমিতে চা শ্রমিক পরিবারগুলোর বসতি করানোর চেষ্টা ব্যর্থ
রামগড় প্রতিনিধি:
পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত ফটিকছড়ির নাছেহা চা বাগানের ত্রিপুরা শ্রমিকের মধ্যে আরও ৯টি পরিবারের ৩১জন পালিয়ে এসেছে। শুক্রবার গভীর রাতে ও শনিবার সকালে এরা বাগানে পালিয়ে আসে। নিরাপত্তাবাহিনী ও বিজিবির উপর্যপরি অভিযানের মুখে সন্ত্রাসীরা এদের ছেড়ে দেয় বলে ফিরে আসা শ্রমিকরা জানান। এনিয়ে অপহৃত ৭৮জনের মধ্যে ৫৪জন ফিরেছে। বর্তমানে ৫টি পরিবারের ২৪জন এখনও ফিরেনি।
২১ এপ্রিল বাগানের ১৯টি পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৭৮জনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। এদিকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চা শ্রমিক পরিবারগুলোকে রামগড়ের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বাঙালিদের অনাবাদি টিলা ভূমিতে জোর করে বসতি করানোর চেষ্টাও ব্যর্থ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১টার দিকে সাতটি ত্রিপুরা পরিবারের নারী ও শিশুসহ ২২জন বাগানে তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসে। বাগান কর্তৃপক্ষ ফিরে আসা শ্রমিক পরিবারদের জন্য রাতেই খাবারের ব্যবস্থা করেন।
শনিবার সকালে ফিরে আরও দুটি পরিবারের ৯জন। ফিরে আসা শ্রমিক পরিবারের বয়স্ক ও নারী, শিশুরা অনেকটা অসুস্থ। অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে তারা শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাড়া পেয়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘ ৪০-৪৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গভীর রাতে বাগানে পৌঁছেন। দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পায়ে হাঁটার কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা আরও জানান, নিরাপত্তাবাহিনী ও বিজিবি দফায় দফায় ওই এলাকায় অভিযান চালানোর কারণে সন্ত্রাসীরা তাদের ছেড়ে দেয়।
বাগানের ব্যবস্থাপক মুনির হায়দার জানান, শুক্রবার গভীর রাতে সাত পরিবার বাগানে ফিরে আসার পরই তাদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ ও নারী শ্রমিক অসুস্থ। এদের ওষুধপত্র দেয়া হয়েছে। বাগান ব্যবস্থাপক জানান, বর্তমানে ৫টি পরিবারের ২৪জন সদস্য এখনও ফিরেনি।
এদিকে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, বাগান থেক অপহৃত ত্রিপুরা পরিবারগুলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার দুর্গম বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করানো চেষ্টা চালায়।
সূত্র জানায়, রামগড়ের গুজা পাড়া, মরা কয়লা, গরু কাটা, মাঝিরামপাড়া প্রভৃতি দুর্গম এলাকায় বাঙালি অনাবাদি পাহাড়ি টিলায় বাগানের এসব শ্রমিকদের জোর করে বসতি স্থাপন করানোর জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ জন্য টিলাগুলোতে বেশ কয়েকটি বাঁশ ও কাঠের কাঁচা ঘরও নির্মাণ করা হয়।
সূত্র জানায়, অপহৃত ত্রিপুরা পরিবারগুলোকে উদ্ধারে নিরাপত্তাবাহিনী ও বিজিবির অভিযানের সময় ঘরগুলোর সন্ধান মেলে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অউপজাতীয় অনাবাদি এসব ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে কয়েকটি নির্মাণাধীন কাঁচাঘর ভেঙ্গে দেয়।
বাগানে পালিয়ে আসা শ্রমিকরা জানান, তারা যুগ যুগ ধরে বাগানে বসবাস করছেন। জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা দাঁতমারা ইউনিয়নেরই ভোটার। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাদেরকে তুলে নিয়ে রামগড়ের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করাতে চেয়েছে। কিন্তু কোন শ্রমিক তাদের কথায় রাজী হয়নি। একজন বৃদ্ধ শ্রমিক জানান, তাদের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কয়েকজনকে মারধরও করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল নাছেহা চা বাগানের শ্রমিক তশিরাম ত্রিপুরার কন্যা শব্দ মিলা ত্রিপুরা(২০) সোনারখীলের হাক্কিটিলা গ্রামের সুরত আলীর ছেলে আরিফের (২৫) সাথে পালিয়ে বিয়ে করার জের ধরে পার্বত্য এলাকার একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপটি নাছেহা চা বাগানের ১৯টি ত্রিপুরা চা শ্রমিক পরিবারের ৭৮জনকে তুলে নিয়ে যায়।