আলীকদম দাখিল মাদ্রাসায় সুপার ও শিক্ষক সংকট: বিপাকে শিক্ষার্থীরা
আলীকদম প্রতিনিধি :
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় সরকারী অনুদানভূক্ত একমাত্র দাখিল মাদরাসায় সুপার ও শিক্ষক নিয়োগ নেই দীর্ঘদিন ধরে। সুপারের পদ শূন্য হয়েছে গত আড়াই বছর আগে। নিয়মিত কমিটির মেয়াদও এক বছর পূর্বে শেষ হয়েছে। শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা রয়েছে বিপাকে। ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা নিয়ে অভিভাবকরা পড়েছেন শংকায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ১৯৭৮ সালের এক সময়ে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ আলীকদম উপজেলা সদরে আলীকদম ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা শিক্ষানুরাগী মরহুম মাওলানা আবুল কালাম আজাদের প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে পার্বত্য জনপদে অবদান রেখে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষ পরিচালনা কমিটির অভাবে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা বিরাজ করছে।
ছাত্র অভিভাবক মাওলানা আব্দুস শুক্কুর, ওসমান গনি ও নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, তথাকথিত কমিটি মাদরাসাটির দেখভাল করছে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাক ও শিক্ষার্থীদের আশা-আকাংক্ষা পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছে। তারা বলেন, ২০১২ সালের ৩১ জুন তৎকালীন সুপার মোহাম্মদ আলী অবসরজনিত কারণে বিদায় নেন। পরে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পান সহ-সুপার মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন। নিয়মিত কমিটি থাকার সময়ে শূন্য পদে সুপার নিয়োগের কথা থাকলেও তা হয়নি। পাশাপাশি গণিত ও কৃষি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। আগামী বছরের জানুয়ারি ও জুন মাসের শেষে আরো দু’জন শিক্ষক অবসরে যাবেন। নিয়মিত কমিটি গঠিত না হলে এসব পদেও নিয়োগে বিলম্ব হওয়ার আশংকার প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, ‘মাদরাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরিচালনা কমিটির মেয়াদের মধ্যে শূন্য পদে সুপার ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতো। কিন্তু দক্ষ পরিচালনা কমিটির অভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’ ছাত্র অভিভাবক মোঃ আবুল হাসেম বলেন, সম্প্রতি মাদরাসাটিতে জুনিয়র শিক্ষক কর্তৃক একজন সিনিয়র শিক্ষককে অপদস্তের ঘটনা ঘটলেও কমিটি কোনরূপ ব্যবস্থা নেয়নি।
ছাত্র অভিভাক মাওলানা আব্দুশ শুক্কুর অভিযোগ করেন, গত ১ বছরের বেশী সময় ধরে গণিত বিষয়ে শিক্ষক নেই। কিন্তু তৎকালীন কমিটির খাম খেয়ালীপণায় শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এর ফলে চলতি বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গণিত বিষয়ে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে যায়নি।’
জানতে চাইলে মাদরাসাটির ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, কমিটির মেয়াদের মধ্যে সুপার নিয়োগের জন্য পত্রিকায় কয়েকবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে সময় অভিজ্ঞ সুপার না পাওয়াতে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ‘এডহক কমিটি’ গঠনে নীতিমালা অনুসরণ করে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। গণিত শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা বার্ষিক পরীক্ষায় নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, পরবর্তীতে এ বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত সোমবার বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার মিসেস পূরবী চৌধুরী বলেন, মাদরাসাটির কিছু সমস্যা চিিহ্নত করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সুপারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। মেয়াদ সমাপ্তির পর পূর্বের কমিটির বৈধতা নেই। এডহক কমিটি গঠনে কাগজপত্র তৈরীর জন্য সুপারকে বলা হয়েছে।