রাজস্থলীতে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ
আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
রাঙামাটি জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা রাজস্থলীর প্রভাবশালী ব্যক্তি জাহেদুল আলমের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পিত্রালয়ে নিজ বসতঘরে মারধরের শিকার হয়েছেন রাজস্থলীর খাগড়াছড়ি পাড়া এলাকার এক গৃহবধূ। আর এই ঘটনার প্রতিকার পেতে ঘটনার শিকার গৃহবধূটি চীফ জুডিসিয়াল আদালতের দারস্থ হয়েছেন। এতে করে এলাকার প্রভাবশালী এই মহলটির প্রতিনিয়ত হুমকিতে বর্তমানে নিজ পিত্রালয় ছেড়ে চট্টগ্রামে নিকটাত্মীয়র বাসায় অবস্থান করছে ঘটনার শিকার হতদরিদ্র পরিবারের কন্যা কোহিনুর আক্তার।
মামলার কাগজপত্রের ও ঘটনার শিকার গৃহবধুর কাছ থেকে জানা গেছে, হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা কহিনুর আক্তারের বিয়ে হয় গত ২২শে নভেম্বর ২০১১ সালে। বিয়ের আগে থেকেই রাজস্থলী জাহেদুল আলম বিয়ের প্রস্তাব দেয় কহিনুরের পরিবারকে। কিন্তু জাহেদুল এর আগেও দুইটি বিয়ে করে এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নারী কেলেংকারীর অভিযোগ থাকায় তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি কহিনুর। আর এতে ক্ষেপে যায় প্রভাবশালী জাহেদুল। কহিনুরের বিয়ের পরেও তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতো জাহেদুল। গত ১৯ আগষ্ট রাতে জাহেদুল ও তার সঙ্গী সুমনসহ অজ্ঞাত আরো দুইজন মিলে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পিত্রালয়ে কহিনুরের বসতঘরে প্রবেশ করে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়ে বেদম মারধর করে।
এসময় জাহেদুল ও তার সঙ্গী সুমনসহ তাদের সহযোগিদের হাতে তার স্বামী জয়নাল আবেদিন রাসেল বেদম মারধরের শিকার হয়। পরে আহতদের চিৎকারে আশে পাশের প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসলে জাহেদুল ও তার সঙ্গীগণ চলে যায়্। এ সময় জাহেদুল হুংকার দিয়ে বলতে থাকে যেভাবে হোক আমি কহিনুরকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো, আর এতে কেউ বাধাঁ দিতে আসলে তাকেও খুন করে ফেলবো। এদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বেশ কয়েকবার সালিশী বৈঠকের আয়োজন করলেও জাহেদুল আলম তার প্রভাব বিস্তার করে সালিশী বৈঠকে উপস্থিত হয়নি। এদিকে ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে রাজস্থলী থানায় মামলা করতে গেলেও থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে তারা দাবি করেন। পরে তারা বাধ্য হয়েই রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২২শে আগষ্ট দন্ড বিধি: ৪৪৮/৩২৩/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ (রর) ধারায় সুবিচার প্রার্থনা করে মামলা দায়ের করেন।
তবে রাজস্থলী থানার অফিসার ইনচার্জ ওহিদুল্লাহ সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে আমি শুনেছি আদালতে এরকম একটি অভিযোগ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, আমি শুনেছি এরকম একটি ঘটনা। তবে যে অভিযোগটি করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ন মিথ্যা, বাস্তবে এরকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। এদিকে রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে খোজঁ নিয়ে জানা গেছে জাহেদুল আলম ও তার বিশেষ বাহিনীর কাছে পুরো উপজেলাবাসী এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে বলে জানিয়েছেন রাজস্থলী উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা ফজল কাদের। তিনি জানান, কহিনুরের দুলাভাই সুমনের মাধ্যমে তাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিল জাহেদুল আলম। কিন্তু বিয়েতে সম্মতি না দেওয়ায়, জাহেদুল প্রভাব খাটিয়ে জোর করে বিয়ের চেষ্ঠা চালালে পিত্রালয় থেকে মেয়েটি পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় যুবক জয়নালকে বিয়ে করে ঘর সংসার করতে থাকে। পরে গত ১৯ ই আগষ্ট স্বামী ও শাশুরীকে নিয়ে কহিনুর নিজ পিত্রালয়ে এসে রাত্রিযাপন করার সময়, জাহেদুল তার সঙ্গীদের সাথে নিয়ে এই ঘটনা ঘটায়। তিনি জানান, জাহিদুল হকের ভয়ে এখানে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। মুখ খুললেই তার উপর চলে নির্যাতন। আর তার নির্যাতনে শিকার হচ্ছে রাজস্থলীতে বসবাসরত বাঙ্গালীরাই এমন তথ্য নিশ্চিত করলেন উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াই সুই খই মারমা।
তিনি জানালেন, আসলে জাহেদুল ব্যাক্তিটি একটু প্রভাবশালী প্রকৃতির তার প্রভাব বেশি বিস্তার হয়, বাঙ্গালী পরিবারগুলোর মাঝে। এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান জানালেন, আমি কহিনুরের ব্যাপারটা শুনে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে ব্যাপারটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, এব্যাপারে এখনো কোনো চিঠি তাদের হাতে পৌছায়নি বলে তারা আমাকে জানিয়েছে। তিনি জানান আমি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারের সাথে এব্যাপারে কথা বলেছি, তিনি আমাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার তিনবার নির্বাচিত মেম্বার ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হাসেম জানালেন, আসলে ব্যাপারটি জানতে এবং সঠিক তথ্য পেতে চাইলে আপনি আমাদের এলাকায় আসেন এবং নিজ চোখে দেখে যান জাহেদুলের ক্ষমতা ও তার কর্মকান্ড। তার ভয়ে এলাকার কেউ কথা পর্যন্ত বলতে চায়না। কহিনুরের ব্যাপারটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ঘটনাটি শুনেছি এবং এব্যপারে মামলার একটি কপি আমাকেও দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ঘটনার পরে বাদি পক্ষ আমার কাছে বিচার দিতে এসেছিল, তবে আমি বিচার করতে রাজি হইনি। আমি তাদেরকে বলেছি জাহেদুল অনেক ক্ষমতাশালী লোক আমি তাদের বিচার করতে পারবো না। তিনি জানান, ভাই জাহেদুল হচ্ছে একজন সন্ত্রাসী টাইপের লোক তার কারনে আমি ঘটনাটির বিচার করতে চাইনি। পরে তারা মাননীয় আদালতের দ্বারস্থ হন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চীফ জুডিসিয়াল আদালতে অভিযোগটি উত্থাপনের পরে আদালত বিষয়টি উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা বরাবরে তদন্তের জন্য প্রেরণ করেছেন।
রাজস্থলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা উর্বসী চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে এখনো তার কাছে লিখিত কোনো কাগজ আসেনি বলে জানান। এদিকে ঘটনার মূল অভিযুক্ত জাহেদুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার বলেন, রাজস্থলীতে এরকম কোনো ঘটনাই ঘটে নাই বলেও জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহেদুল জানান, ঘটনার বাদি কহিনুর আক্তারতো রাজস্থলীতেই থাকেন না।