আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে পাহাড় জুড়ে আতংক : নিরাপত্তাহীনতায় উৎকন্ঠিত পার্বত্যবাসী

pahar 1

বেলায়েত হোসেন :

(চার)

সন্তু লারমা সমর্থিত (জেএসএস), ইউপিডিএফ ও জেএসএস(এমএন) গ্রুপের মধ্যে চলছে অস্ত্র সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। পাহাড় জুড়ে আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তিন সশস্ত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে সশস্ত্র  তৎপরতা। বাড়ছে লাশের মিছিল। সশস্ত্র সংগঠনগুলোর অস্ত্রে ঝনঝনানিতে স্থানীয় প্রশাসন যেন অসহায়। শান্তিপ্রিয় মানুষ দিন কাটাচ্ছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়।

শান্তির  প্রতিশ্রুতি দিয়ে সন্তু লারমা ও সরকারের মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হলেও বাস্তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরে আসেনি। চুক্তির  আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র জনসংহতি সমিতিকে চাঁদা দিলে নিরাপদে থাকা যেতো। কিন্তু চুক্তির পর সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস)  পাশাপাশি জম্ম হয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(এমএন) গ্রুপের। এছাড়া এই সব সংগঠনগুলোর রয়েছে জুম্ম ন্যাশনাল আর্মি, ব্লাক ডগ ও সদক নামে কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন।

চুক্তির শর্তানুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেয়ার ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বেড়েছে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম।  চুক্তি স্বাক্ষরের পরের দিনই চুক্তি প্রত্যাখান করে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে জম্ম নেয় ইউপিডিএফ নামে আরো একটি সংগঠন। এদের দাবী পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণশায়ত্বশাসন। শুরু হয় জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ’র মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। বছর দু’য়েক আগে নিরাপত্তাহীনতায় উৎকন্ঠিত পার্বত্যবাসীজেএসএস ভেঙ্গে জেএসএস(এমএন) গ্রুপ নামে আরো একটি সশস্ত্র গ্রুপের জম্ম হয়েছে। এখন পাহাড় জুড়ে এই সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে চলছে বন্দুক যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি অপহরণ, মুক্তিপন আদায় ও চাঁদাবাজির ঘটনা। চুক্তির আগে সন্ত্রাসীদের হাতে দেখা যেতো ভাঙ্গাচোরা অস্ত্র। আর এখন শোভা যাচ্ছে এম-১৬, একে-৫৬, একে-৪৭, এলএলজি, এসএমজি ও রকেট লাঞ্চলেরর মতো আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র।

এক পরিসংখানে দেখা যায়, চুক্তির পর জেএসএস(সন্তু) ইউপিডিএফ ও জেএসএস(এমএন) গ্রুপের  সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘটনায় ৬ শতাধিক  জন নিহত, সহস্রাধিক আহত, দেড় সহস্রাধিক অপহৃত এবং তিন গ্রুপের  মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বন্দুক যুদ্ধ ও নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দলের উপর  সহ হামলা হয়েছে। ততে অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে  তিন সংগঠনের কেউই স্বীকার করেনি। বন্দুক যুদ্ধ ও হামলার বিষয়ে তিন সংগঠনের অভিযোগ পাল্টাপাণ্টি। সন্তু লারমা সমর্থিত জেএসএস কেন্দ্রীয় সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সজীব চাকমা অস্ত্র সংগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, জেএসএস একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। আমরা অস্ত্রের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। অপর দিকে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের প্রধান নিরণ চাকমা বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্ব শাসনের দাবীতে আন্দোলন করছে। যেখানে জন সমর্থন আছে, সেখানে অস্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না। বরং সন্তু লারমা ইউপিডিএফকে নির্মূলের ঘোষনা দিয়ে আমাদের শত শত নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষকে হত্যা করেছে এবং করছে। তবে এ বিষয়ে জেএসএস(এমএন) গ্রুপের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, তিন সশস্ত্র গ্রুপ এখন ব্যস্ত সময় পার করছে অস্ত্র সংগ্রহে। এদের অস্ত্র সংগ্রহের উৎস হচ্ছে মিজোরাম ও বার্মা। আর  ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, রাঙামাটির সাজেক ও বান্দরবানের থানছির রির্জাভ ফরেষ্ট এলাকা। সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিজোরাম থেকে বেশ কিছু অস্ত্রের চালান বাংলাদেশে আসলেও অস্ত্রের দু’টি চালান মিজোরাম সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যায়। এ সময় বেশ জেএসএস(এমএন) গ্রুপের কয়েকজন সদস্যও আটক হয়। এছাড় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকেও অস্ত্র সংগ্রহের তথ্য রয়েছে।

এ নিয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে না চাইলেও গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করা না শর্তে জানান, তিন সশস্ত্র সংগঠন বিপুল পরিমান অস্ত্র মজুদ করছে। এদের এখনি রোধ করা না হলে এক দেশের সার্বভৌমত্বে জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াবে। তবে এর জন্য রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হলে এদের নির্মূল করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন