আশ্রয়ণের নতুন ঘর পেয়ে খুশি প্রতিবন্ধী মংপু মারমা

fec-image

আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে খুবই খুশি প্রতিবন্ধী মংপু মারমা। নিজে শারীরিক প্রতিবন্ধী আর স্ত্রী ঞাংওয়াং মারমা জন্ম থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী পুষ্টি-হীনতায় ভোগা তিন সন্তান নিয়ে দুই প্রতিবন্ধীর সংসার চলে মানুষের বাড়ি, বৌদ্ধ বিহার আর দেবতা পুকুর থেকে মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার কুড়িয়ে।

বিশ বছর পূর্বে কাজ করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মংপুর ডান হাত ভেঙে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। বনাজী চিকিৎসা করে কোনোমতে বেঁচে আছে। এর পর অভাবের কারণে চলে যায় তার প্রথম স্ত্রী। পরে মানসিক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে চলছে তার সংসার। ছোট একটা জরাজীর্ণ টং ঘরে বসবাস করতো এই পরিবার।

ভূমিহীন ও গৃহহীন মংপু মারমা খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার দেওয়ান পাড়া এলাকার মৃত রিসা মারমার ছেলে। সুখের তীব্র আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে গেলে তারুণ্য হারিয়ে বৃদ্ধ হয়ে যায় মানুষ। এই মংপু তার জ্বলন্ত প্রমাণ। মংপু মারমা বয়স এখন ৪০। তেমন বাংলা বলতে পারেনা সে। স্ত্রী‘তো একদমই বাংলা জানে না। কোনও দিন বাড়ি-ঘরের স্বপ্ন দেখেনি সে। সন্তানদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করতে সারাদিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ান। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে গিয়েছিল তার। ঘর পেয়ে এখন অনেকটাই স্বস্তিতে।

এসব জেনে গুইমারা উপজেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দিয়েছে তাকে। ঘর পেয়ে মংপু যতটুকু খুশি তার চেয়ে বেশি খুশি দেওয়ান পাড়া এলাকাবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক রকম লেখালেখি হয়েছে তাকে নিয়ে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গম এলাকায় তার বসবাস। চারিদিকে যাতায়াতের ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো বিশুদ্ধ পানি বা আলোর ব্যবস্থা। তারা জরাজীর্ণ একটি টং ঘর থাকে। ঘরের বেড়াগুলো জরাজীর্ণ। পরনের কাপড় দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে মলমূত্র ত্যাগ করছে এই পরিবার। ঘরে আসবাবপত্র বলতে দুইটা সরকারি কম্বল, দুইটা ছেড়া বালিশ, দুইটা প্লেট, একটা কলসি আছে। এগুলো দিয়ে আবহমান নদীর মতো তার সংসার জীবনধারণ চলছে।

জঙ্গলের বাঁশ কুড়ল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে। বৌদ্ধ বিহার, মানুষের বাড়ি আর দেবতা পুকুর থেকে পেলে দেয়া খাবার আনেন সন্তানদের জন্য। বাড়ির চারপাশে কোনো বসতি নেই। একা একটি পরিবার। বাড়িতে যাওয়ার তেমন কোনো রাস্তা নেই। পায়ে হেঁটে জমির পাশ বেয়ে চলতে হয় অনেক দূর। অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্য সংকট,পানির সমস্যা, পায়খানা সংকট সব মিলিয়ে সংকটেই চলছে এই পরিবারের জীবন।

মংপু মারমা জানান, তার নিজের কোনও জমি বা ঘর ছিল না। পরের বাড়িতে থাকতেন। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছে, ঘর পেয়ে খুব খুশি। সারা জীবন দুঃখ-কষ্টে চলছে, বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজেছি। কেও খোঁজ খবর নেয়নি। কোনও দিন এমন বাড়ি-ঘর হবে চিন্তাও করিনি। এখন পাকা ঘর পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ বছর শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েছেন। দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকতেন, রাতে বৃষ্টির কারণে ঘুমাতে পারেননি। এখন রাতে ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারি তেমন অসুবিধা হয় না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য অংক্যজাই মারমা জানান, তার ওয়ার্ডে সবচেয়ে অসহায় মংপু মারমা। একই পরিবারে দুইজন প্রতিবন্ধী। তিনি নির্বাচিত হয়ে তাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছেন। এইবার ইউএনও ঘর দিয়েছেন তাকে। যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় তার ঘরটি বানাতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। সে ঘরটি পাওয়ায় দেওয়ান এলাকাবাসী খুশি।

গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী জানান, মংপু মারমা বাড়ির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবগত হয়ে তিনি সরজমিনে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। বাস্তবে সে একটা অসহায় পরিবার। একই পরিবারে দুজন প্রতিবন্ধী রয়েছে। দুর্গম এলাকায় তার বসবাস। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণের একটি ঘর প্রদান করা হয়েছে। যোগাযোগের সমস্যার কারণে, তার ঘরটি করতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও কষ্ট হয়েছে। তবুও একটি অসহায় পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। এটা আমার দায়িত্ব ছিলও।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন