উখিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অধ্যায়ন করে যাচ্ছে শতাধিক রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী 

fec-image

উখিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অধ্যায়ন করে যাচ্ছে শতাধিক রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়ে। তবে কোন মাথাব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যার ফলে দিন দিন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। স¤প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কয়েকটি নিম্নমাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সরজমিন উখিয়ার রোহিঙ্গার অধুর্ষিত এলাকা রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং, পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী, থাইংখালী এবং পালংখালী ঘুরে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েরা পাঠদান শেষে ক্যাম্পে ফিরে যাচ্ছে। তাদের অনেকের সাথে কথা বলতে চাইলেও তারা রাজী না হওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় ৪জন শিক্ষার্থীকে দাঁড় করিয়ে কৌশলে তাদের নাম, পরিচয় জানার চেষ্টা করলে তারা সবাই রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন। তাদের স্কুল ব্যাগে থাকা গণিত খাতায় দেখা যায় নাম, ঠিকানা ও স্কুলের ক্লাস রোল। এদের মধ্যে রয়েছে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের শামসু মাঝি ছেলে মো. আনাছ, শ্রেণি ৮ম, তার ক্লাস রোল নং-১৩০, একই ক্যাম্পের আলী হোসেনের ছেলের আজিজুল হক, ক্লাস রোল নং-৩৮, শ্রেণি-৮ম, কুতুপালং আনরেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের মো. আজিজের ছেলে রবি আলম, রোল নং-১২৭, সেও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। আরেকজন কেফায়াত উল্লাহ, সে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। তারা সকলে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র বলে দাবি করে। তখন আরো অনেক রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী ক্যাম্পে ঢুকতে দেখা গেলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ নিয়ে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তথ্য গোপন করে রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েরা আমার বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করে যাচ্ছে তা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। আরো যদি থেকে থাকে তাহলে তাদেরকেও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সচেতন মহলের অভিমত, স¤প্রতি রহিমা আকতার ওরফে রাহী খুশী নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হলে তাকে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একই ভাবে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়রত আরো শতাধিক রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

সুশাসনের জন্য সুনাগরিক (সুজন) এর উখিয়াস্থ আহ্বায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, রোহিঙ্গারা এমনিতে উখিয়ার সার্বিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। তার মধ্যে বিনা বাধায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে, যাহা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই এই মুহুর্তে উখিয়াসহ জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উখিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলাম মিয়া জানান, রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে ইতিপুর্বে একাধিকবার নোটিশ দিয়ে উপজেলা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে যে, যাতে কোন রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়ে বিদ্যালয়ে অধ্যায়রত না থাকে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েদের পড়ালেখা জন্য ক্যাম্পের অভ্যন্তরে স্কুল রয়েছে। সেখানে পড়ালেখা করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এরপরও যদি ক্যাম্পে বাইরে এসে কেউ প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, যারা তাদেরকে সহযোগিতা করেছে তাও খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়ার, রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন