খুটাখালির ছড়া থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলন!
বাইশারী প্রতিনিধি:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড কাগজি খোলা গ্রামের ২৮৩নং ঈদগড় মৌজা ও লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সীমান্ত সংলগ্ন খুটাখালির ছড়া থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক ট্রকা ও ডাম্পারে করে বালি পাচার করে যাচ্ছে বালি খেকো দল। বাঁধা দেওয়ার শক্তি কারও নেই বলে জানালেন, স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি।
পাহাড়ি ছড়া থেকে বালি উত্তোলনের ফলে হুমকি মুখে পড়েছে উভয় পাড়ে বসবাসরত শতাধিক বাড়ি ঘরের বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ বালি খেকো দল প্রভাবশালী হওয়ায় ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে কথা বলার সাহস কারও নেই। যার কারণে প্রকাশ্যে দিবালোকে পাহাড়ি খাঁল থেকে বালি উত্তোলন ও পাচার কাজ চলছে দেদারছে। মাত্র এক হাজার গজ দূরত্বে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তাহারা রয়েছে চুপচাপ। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র তো দূরের কথা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্বও পরিশোধ করে না তারা।
সরজমিনে এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাইশারী ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড, কাগজী খোলা গ্রাম, কালাপাড়া, লাইলামার পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম এবং ছড়ার উভয় পাড়ে বসবাসরত শতাধিক পরিবার বালি উত্তোলনের ফলে এখন হুমকির মুখে রয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব বাড়ি-ঘর বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তাছাড়া পাহাড়ি খাঁল থেকে বালি উত্তোলনের ফলে ফসলি জমিও খাঁলে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় রহুল আমিন নামে এক জমির মালিক তাদের বাধা দিয়ে কোন সমাধান না পেয়ে বালি খেকোদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা যায়।
তাছাড়া বালি উত্তোলনের কারণে পরিবেশ মারাত্মক হুমকি মুখে পড়েছে। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য এবং ছড়ার গতিপথ ও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লাইলামার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর শুক্কুরের পুত্র মো. আজিজ, প্রকাশ আওয়ামীলীগ নেতা আজিজের নেতৃত্বে একটি সেন্ডিকেট তৈরি করে নির্বিচারে বালি উত্তোলন ও পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রাত ওদিন।
প্রতিদিন কম হলেও কয়েক শ’ ট্রাক বালি খাঁল থেকে উত্তোলনে পর পাচার করছে তারা। বালি উত্তোলনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন।
বালি উত্তোলনকারী সেন্ডিকেটের প্রধান মো. আজিজের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সব কিছু ম্যানেজ করে আমি দীর্ঘকাল ধরে বালি উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এমন কারও ক্ষমতা নেই বালি উত্তোলন বন্ধ করে দেবে।
বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম কোম্পানী বলেন, আজিজসহ বেশ কয়েকজন লোক খুটাখালির ছড়া থেকে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে শতাধিক বাড়ি-ঘর বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাদেরকে নিষেধ করার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সচিব ও পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করে নির্বিচারে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। যার ফলে বাড়ি-ঘরসহ ফসলি জমিও ছড়ায় পরিণত হয়েছে।
এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের কক্সবাজার অঞ্চলের পরিচালক মো. কামরুল হাসান মুঠোফোনে জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলায় বালি উত্তোলনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোন প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।