৭ ইউনিয়নের ১০ হাজার প্রান্তিক চাষিরা দুশ্চিন্তায়

চকরিয়ায় ৪ স্লুইচ গেইট দিয়ে ঢুকছে লবণাক্ত পানি, চাষাবাদ অনিশ্চিত

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় চার পয়েন্টের স্লুইচ গেইট দিয়ে বিভিন্ন শাখা খালে ও ঢেমুশিয়া বদ্ধ জলমহালে লবণাক্ত পানি ঢুকানোর কারণে প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে উপকূলীয় এলাকার ৬ ইউনিয়নের দশ হাজারের অধিক প্রান্তিক চাষীদের মাঝে চাষাবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে বদ্ধ জলমহাল ইজারাদারেরা তাদের শর্ত ভঙ্গ করে খালে লোনা পানি ঢুকানো হচ্ছে বলে স্থানীয় শত শত কৃষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও চারটি স্লুইচ গেইটে যারা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে তারা প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে স্লুইচ গেইটের জলকপাট খুলে দিয়ে দিব্যি লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে ফসলের চরম ক্ষতি করছে বলে কৃষকের অভিমত।

জানা গেছে, উপজেলার উপকূলীয় ৭ ইউনিয়নের দশ হাজারের অধিক প্রান্তিক চাষীরা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শাখা খাল ও বদ্ধ জলমহলের মিঠা পানি দিয়ে ফসলের চাষাবাদসহ নিত্যপ্রয়োজনী কাজে ব্যবহার করে আসছে। উপকূলীয় জনসাধারণকে জোয়ারের লবণাক্ত পানি থেকে ও ফসলের চাষাবাদ রক্ষায় চারটি স্থানে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এসব স্লুইচ গেটের জলকপাট জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অমবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে এসব স্লুইচ গেইট দিয়ে লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে প্রান্তিক কৃষকেরা সঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে পারে নি। তবে মাঝে মাঝে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে কৃষকেরা কিছুটা হলেও ফসল চাষাবাদে তাদের মনে আশায় বুক বাঁধেন। এতে সাত ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন শাখা খালের পানি দিয়ে প্রায় ছয় হাজার একর জমির চাষাবাদ সম্ভব ছিল। প্রান্তিক কৃষকরা সেই ভরসায় চাষাবাদ শুরু করেছিল। কিন্তু কিছু অতিলোভী প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং জলমহাল ইজারাদারেরা পরিকল্পিতভাবে খাল সংলগ্ন স্লুইস দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ ও আহরণ করে সমগ্র খালের পানি লবণাক্ত করে ফেলে। এনিয়ে উপজেলার বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা ও সাহারবিল ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে প্রান্তিক কৃষকেরা আমন ও শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে চরম আশঙ্কা করছে। কিন্তু ডেমুশিয়া জলমহালে কোনভাবেই লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে মৎস্য চাষ না করার শর্ত থাকলেও ইজারাদারেরা শর্ত ভঙ্গ করে মিঠা পানিতে পরিপূর্ণ খালে লোনা পানি ঢুকিয়ে এখন মৎস্য চাষ করে যাচ্ছে। স্লুইচ গেইটের কপাট খুলে লবণাক্ত পানির ঢুকানোর কারণে আমন চাষের জন্য কয়েক হাজার কৃষক জমি তৈরি করেও চাষাবাদ করতে না পেরে দুশ্চিন্তা পড়েছে।

কোনাখালী এলাকার কৃষক বশির আহমদ বলেন, স্লুইচ গেইট নোনা পানি ঢুকানোর কারণে কয়েক হাজার একর জমিতে আমন ও আগাম সবজি চাষ করা দূরহ হয়ে পড়ছে। মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। খালের পানি লবণাক্ত হওয়ায় ধানও রোপণ করা যাচ্ছে না। দু’চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখতেছি না।

একইভাবে ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক বলেন, খাল থেকে এ পানি অপসারণ করা না হলে উপকূলের কৃষকেরা মরে যাবে। তাদের পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। ডেমুশিয়া জলমহালে লবণাক্ত পানি ঢুকানোর কারণে গবাদি পশুসহ স্থানীয় লোকজন সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কৃষকেরা এমন অভিযোগও করেন, জলমহালে নোনা পানি ঢুকানোর ফলে ছয় হাজার একর জমির আমন চাষের ক্ষতি করেছেন জলমহাল ইজারাদাররা।

পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, চলতি মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার চাষীদের মাঝে আমন ও সবজি চাষাবাদ নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে। চারটি স্লুইচ গেট দিয়ে প্রতিনিয়ত ঢুকছে লবণাক্ত পানি। যার কারণে শত শত একর জমি চাষাবাদ নিয়ে কৃষকেরা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে যেসব এলাকায় চাষিরা ধান চাষাবাদ করেছে তা জরুরিভিত্তিতে রক্ষা করা হোক। না হলে হাজার হাজার কৃষক নি:স্ব যাবে। যে সমস্ত ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে স্লুইচ গেইট দিয়ে প্রতিনিয়ত লবণ পানি ঢুকিয়ে কৃষকের সর্বনাশ করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন বলেন, কৃষকের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছি এবং চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন