ট্রাম্পেরই ট্রাম্পকার্ড রোহিঙ্গা নেতা মুহিববুল্লাহ!

fec-image

গত দু’বছর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও এখন বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের মানুষেকে তাদের প্রতিপক্ষ ভাবছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীদের নির্যাতনের পালিয়ে আসা ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল।

সঙ্গত কারণেই বিশাল এই রোহিঙ্গা বোঝা বাংলাদেশের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের সাথে কূটনৈতিক আলাপ আলোচনা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গারা এখন মাথায় উঠেছে। দু’দফায় তারা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ভন্ডুল করে দিয়েছে। নানা শর্ত দিয়ে তারা এই প্রত্যাবাসনে রাজি না হলেও ভিতরে কিছু এনজিওর কলকাটি নাড়ার খবর পাওয়া গেছে।

এনজিওদের সহযোগিতায় গত ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের এক্সটেনশন-৪ এর খোলার মাঠে মহাসমাবেশ করে।

সমাবেশের মধ্যমনি ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইর্টস এর চেয়ারম্যান মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ। তিনি সকল পর্যায়ের রোহিঙ্গা নেতাদের মঞ্চে সাথে রেখে প্রধান অতিথি হিসাবে রোহিঙ্গা সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন।

সমাবেশে তাদের ৫ দফা দাবি পূরণ না হলে রোহিঙ্গারা কোন অবস্থাতেই মিয়ানমারে ফিরে যাবেনা বলে মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ’র উস্কানিমূলক বক্তব্যে সমাবেশে উপস্থিত রোহিঙ্গারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ সব দাবির মধ্যে ছিলো (১) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়া, (২) রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসতভিটা ও অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া, (৩) রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া (৪) আইসিসি কোর্টে রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করা ও (৫) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফ্রি মুভমেন্টের সুযোগ দেয়া।

রোহিঙ্গাদের সমাবেশে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা এই ৫ দফা দাবি ও নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেয় ও অঙ্গীকার করে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে সকলে। চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় দাবি আদায়ের মূহুর্মূহ শ্লোগান, প্লেকার্ড, ফেস্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে যায় সমাবেশস্থল।

জানা গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেদিন রোহিঙ্গাদের ওই সমাবেশ করার কোন অনুমতি ছিল না। এমন কথাই জানিয়েছেন আরআরসি আবুল কালাম। এছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর আবদুল মোমেন জানান রোহিঙ্গাদের সমাবেশ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার কিছুই জানত না। তাহলে প্রশ্ন উঠছে এই সমাবেশ করার পেছনে কারা রয়েছে। টাকা যুগিয়েছে কারা? সাহস যুগিয়েছে করা? এবং আরো জানা গেছে এই সমাবেশ সফল করার জন্য অস্ত্র দিয়েছে তাদের সাহস যোগানো হয়েছে।

এই সমাবেশ নিয়ে বাংলাদেশে তো বটেই সারা বিশ্বে এখন আলোচনা হচ্ছে রোহিঙ্গারা এত সাহস আর টাকা পেল কোথায়?

আরো প্রশ্ন উঠেছে কে সেই মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ?

জানা গেছে, পাকিস্তান ভিত্তিক সংস্থা ‘আল খিদমত ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ আল খিদমত ফাউন্ডেশন থেকে নিয়মিত অর্থের যোগান পায়। গত মাস খানেক আগে মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আলোচিত প্রিয়া সাহার সাথে বিশ্বের ১৭ টি দেশের নির্যাতিত ধর্মীয় গোষ্ঠীর ২৭ জন প্রতিনিধির একজন হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মি. ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রোহিঙ্গা শরনার্থী বিষয়ে সাক্ষাত করে কথা বলেছিলেন (উপরের ছবিতে গোলাকার চিহ্নিত)।

মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ রোহিঙ্গা নেতা হয়েও সে বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেল কি করে? দাবি উঠছে তার পাসপোর্ট বাতিল করার। তাকে কোন অফিস থেকে পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে এবং কারা তাকে নাগরিক সনদ দিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার।

এই রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ শরনার্থী ক্যাম্প এরিয়ায় প্রবেশের জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। রোববার ২৫ আগষ্ট উখিয়ার মধুরছড়ায় অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা মহাসমাবেশের ব্যয় বিভিন্ন এনজিও এবং আইএনজিও’র সাথে মুহিব উল্লাহ’র সংগঠন অর্থায়ন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে এই রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহ মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সক্রিয় আলএকিন তথা আরাস নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা আতাউল্লাহ’র একান্ত সহযোগী। কিন্তু কথা হলো এই সন্ত্রাসী নেতা কি করে বাংলাদেশ পাসপোর্ট পেল? কি করে আমেরিকার রাষ্ট্র প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করলো? তাহলে কি ট্রাম্পেরই ট্রাম্প কার্ড তথাকথিত এই রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহ?

একই সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইর্টস এর সেক্রেটারি নুরুল মাসুদ ভূইয়া, মাস্টার আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, রোহিঙ্গা নেত্রী হামিদা বেগম সহ অন্যান্য নেতারা। তারাও অবৈধভাবে শরনার্থী ক্যাম্প এরিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া, একইদিন একই সময়ে টেকনাফের উনচিপ্রাং, বালুখালী, নয়াপাড়াসহ অন্যান্য ক্যাম্প গুলোতেও সমাবেশ ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এ সব সমাবেশ ও র‍্যালিও মাস্টার মোঃ মুহিব উল্লাহ’র সংগঠনের অর্থায়নে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একজন বিশেষজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তার মতে, আন্তর্জাতিকভাবে লবিংয়ে যুক্ত মাস্টার মুহিব উল্লাহদের অশুভ তৎপরতা বন্ধে এখনি যথার্থ পদক্ষেপ না নিলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরো জটিল আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে।

উল্লেখ্য গত ২৫ আগস্ট ছিল রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আগমনের দু’বছর পূর্তি। ২০১৭ সালের ঐ দিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের ঢল নামা শুরু হয়েছিল। এদিন থেকে পরবর্তী প্রায় এক মাস পর্যন্ত প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আগমন করে। বাংলাদেশে এর আগে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থী ছিলো প্রায় ৪ লাখ।

সব মিলিয়ে কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি শরনার্থী ক্যম্পে থাকা এ সব শরনার্থীদের মাঝে গত দু’বছরে আরো প্রায় দেড় লাখ শিশু জম্ম নিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পৌনে ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে এখন অবস্থান করছে।

ইতোমধ্যে বেশ কিছু গণমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে দীক্ষিত করার জন্য বেশ কিছু সংগঠনের কাজ করার খবর এসেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। মুহিবুল্লাহ কীভাবে আমেরিকা গেলেন, নিজ দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে থেকে কোন পাসপোর্টে গেলেন- এ সব প্রশ্ন উঠছে। আরও প্রশ্ন উঠছে যে, রবিবারের সমাবেশে এত সুসজ্জিত ডিজিটাল ব্যানার কোথা থেকে এল? এক শ্রেণির এনজিও চাইছে রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখতে; এতে তাদের পকেট ভর্তি হতে থাকবে। এর পেছনে কাদের উস্কানি রয়েছে তা শীঘ্রই খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রোহিঙ্গা, সেনাবাহিনী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন