তোমার পায়ের ধুলো দিয়ে যাও! চিরশত্রুর বাড়িতেও আমন্ত্রণ মেসির

fec-image

কাতার থেকে মেসির বিশ্বজয় গোটা দুনিয়াকে এক ভালোবাসার সুতোয় বেঁধে দিয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠকে সম্মান জানাতে দ্বিধা করছে না চিরকালীন ‘শত্রুপক্ষ’ও। বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে এখনও দেশে ফেরেননি। এর মধ্যেই এলএমটেন আমন্ত্রণ পেয়ে গেলেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছ থেকে। মিথ হয়ে যাওয়া মারকানা স্টেডিয়ামে মেসির পদধূলি ফেলার জন্য করজোড়ে মেসির কাছে আর্জি জানাল ব্রাজিল। সে দেশের ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে মেসিকে আমন্ত্রণ জানাল তারা। মেসির পায়ের ছাপ সেখানে সংরক্ষিত রাখার অনুরোধও করা হয়েছে।

এ বারের বিশ্বকাপে ট্রফির অন্যতম দাবিদার হিসাবে খেলতে গেলেও কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে যায় তারা। ফলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার মহারণ দেখার যে সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে অনায়াসে ক্রোয়েশিয়াকে হারায়। ফাইনালে টাইব্রেকারে হারায় ফ্রান্সকে।

মেসিরা দেশে ফেরার পরেই মারাকানা স্টেডিয়ামে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রিয়ো দি জেনিরোর স্টেট স্পোর্টস বিভাগের প্রধান আদ্রিয়ানো সান্তোস। এই বিভাগই মারাকানা স্টেডিয়ামের দেখভাল করে। আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থাকে পাঠানো একটি চিঠিতে সান্তোস লিখেছেন, “মাঠ এবং মাঠের বাইরে ইতিমধ্যেই মেসি নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। অনেক বছর ধরে ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে খেলছেন মেসি। মারাকানা স্টেডিয়াম যদি তাঁর কৃতিত্বকে সম্মান জানায়, তা হলে এর থেকে বড় আর কিছুই হতে পারে না। কারণ বল পায়ে মেসি অসাধারণ একজন ফুটবলার।” প্রসঙ্গত, গত বছর এই মারাকানাতেই ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা।

যদি মেসি এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তা হলে ব্রাজিলের পেলে, গ্যারিঞ্চা, রিভেলিনো, রোনাল্ডো, চিলির এলিয়াস ফিগুয়েরোয়া, সার্বিয়ার দেজান পেটকোভিচ, পর্তুগালের ইউসেবিয়ো, উরুগুয়ের সেবাস্তিয়ান আব্রিউ এবং জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর তাঁর পদচিহ্ন নেওয়া হবে। সেটি স্টেডিয়ামের হল অফ ফেমে শোভা পাবে।

মঙ্গলবার ভোরে রোম থেকে মেসিদের বিমান নামে বুয়েনস আইরেসের ইজেইজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আগে থেকেই বিমানবন্দর ও তার বাইরে ভিড় জমেছিল। বিমান থেকে প্রথমেই বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নেমে আসেন মেসি ও দলের কোচ স্কালোনি। তার পরে বাকি ফুটবলাররা নামেন।

আর্জেন্টিনার বিমান কখন বুয়েনস আইরেসে নামবে তার দিকে নজর ছিল সে দেশের মানুষের। স্থানীয় এক সংবাদপত্র জানিয়েছে, ১ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে বিমানের অবতরণের দিকে নজর রেখেছিলেন। বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করছিল বিশেষ বাস। সেখানে লেখা ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’। সেই বাসে করে বিমানবন্দরের বাইরে বার হন মেসিরা।

বিমানের মধ্যেই উৎসব শুরু করেছিলেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। লাউতারো মার্তিনেসের ড্রাম বাজানোর তালে নাচেন মেসিরা। পাশাপাশি গান গাইতে দেখা যায় এনজো ফের্নান্দেসকে। তার ছবি বেরিয়েছে সমাজমাধ্যমে। আরও একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, গায়ে আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে, আকাশি রোদচশমা পরে, গলায় বিশ্বকাপের পদক ঝুলিয়ে বসে রয়েছেন মেসিরা।

রবিবার ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিলেন মেসিরা। পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ব্যবধান বাড়ান অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া। সেই দু’টি গোলই দ্বিতীয়ার্ধে শোধ করে দেন ফান্সের কিলিয়ান এমবাপে। অতিরিক্ত সময়ে দু’টি দলই একটি করে গোল করে। মেসি এবং এমবাপের গোলের সংখ্যা বাড়ে। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ ব্যবধানে ফাইনাল জিতে নেন মেসিরা।

বিশ্বকাপ জেতায় স্বপ্নপূরণ হয়েছে মেসির। ক্লাব ফুটবলে প্রায় সব ট্রফি জিতলেও দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ অধরা ছিল তাঁর। এ বারই নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন লিয়ো। আর শেষ বারে বাজিমাত করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতার সেরা ফুটবলারের পুরস্কার সোনার বলও পেয়েছেন মেসি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেসি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন