নাইক্ষ্যংছড়িতে কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে গভীর রাতে শিক্ষিকার জমি দখলের অভিযোগ
কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসের নির্দেশ অমান্য করে গভীর রাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সন্নিকটে এক শিক্ষিকার জমি দখল করেছে স্বশস্ত্র একদল ভাড়াটে যুবক।
তারা এক সৌদি প্রবাসীর কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে এভাবে জমি দখলের মতো খারাপ কাজের সূত্রপাত ঘটায় বাইশারীতে। ফলে এ নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়িসহ পুরো বান্দরবানের বিশেষ সম্মান পাওয়া পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্টের দৃষ্টান্ত স্থাপনের আশংকা দেখা দিয়েছে।
ভূক্তভোগী জসিম উদ্দিন জানান, বান্দরবান পুলিশ সুপার ও স্থানীয় নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন,বান্দরবান জেলার ২৭৮ নম্বর বাইশারী মৌজাধিন ২৬১ নম্বর খতিয়ানের ২১৬ নম্বর হোল্ডিং এর আন্দর ০.৫১ শতক জমিতে অভিযোগকালী জসিম উদ্দিনের নামে সরকারি তৌজিভূক্ত আছে ।
এমতাবন্থায় একই হোল্ডিং এর আওতায় তার নিজের মা হাফেজা খাতুন নিজের প্রয়োজনে ২ দফায় তাকে আরো ৩৫ শতক জমি বিক্রি করে হিলের কাগজপত্র মতে। এর পর থেকে তিনি ৬/৭ বছর ধরে দখলেও আছেন। কিন্তু এরই মাঝে এ জমিতে নামে এক শনির দশা।
কুদৃষ্টি পড়ে এক প্রভাবশালীর। যিনি এবং তার শাঙ্গ-পাঙ্গরা এতে শরীক হন তার সাথে। যার নাম মো: হানিফ। বিষয় নিয়ে কোর্ট, থানা, ইউএনও মহোদয় অফিস থেকে জমিটি স্থিতি রাখতে নির্দেশ দিলেও তারা তা তোয়াক্কা করেননি। আইন মানেন নি।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) খোদ ইউএনও স্যার এবং সার্ভেয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসার কথা থাকলেও তাও হয় নি। এখন দখলবাজরা বেপরওয়া।
জসিম উদ্দিন আরো জানান,তিনি গ্রামীন ব্যাংকের ছোট একজন কর্মকর্তা। থাকেন মহেশখালীতৈ। তার স্ত্রী নাছিমা বেগম প্রাইমারী স্কুল শিক্ষিকা। তার অনুপস্থিতে স্ত্রী একা থাকেন বাড়িতে। এ সুবাদে প্রবাসী মো: হানিফ নানা কৌশলে ম্যানেজ করে পুলিশের বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বাবুর্চি মহিবুল্লাহ নেতা ও পুলিশের র্সোস পরিচয়দানকারী বাবুল এবং র্সোস হুবাইবের নের্তৃত্বে ১৫/২৬ জনের একদল স্বশস্ত্র দখলবাজ ১২/০১/২০২০ ইং তারিখের পরের রাত আড়াইটায় তার সেই জমি দখল করতে এসেই প্রথমে তার বাড়ির প্রথম ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় দখলবাজরা।
জসিমের বাড়ি পাহারাদার ওবাইদুল হক জানান, সেদিন ঘটনার বিষয়ে পুলিশে খবর দিলে এএসআই ফারুখের নের্তৃত্বে পুলিশ পৌঁছেন রাত ৩ টা.৭ মিনিটে। তখনও স্বশন্ত্র যুবকরা টিনের একটি বাসা বাধাঁর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্ঠা করছিলো। এ পুলিশ দল দখলদারের সাথে প্রায় আধ-ঘন্টা কাছাকাছি সময় কাটান। আর দখলবাজরা তাদের কাজ শেষ করে প্রবাসী হানিফের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমকে নতুন এ বাসায় রেখে ছটকে পড়েন। আর ছেনুয়ারা তার সন্তানদের নিয়ে লম্বা দা নিয়ে পাহারা বসান রাত-দিন। স্থানীয় গ্রামবাসীও বিষয়টি এভাবে নিশ্চিত করেন।
নতুন নির্মিত বাসায় অবস্থান নেয়া মো: হানিফের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম জানান, এখানে আগেও একটি বাসা ছিলো তাদের। এটি কে বা কারা ভেঙ্গে ফেলার পর আবার তারা নতুন করে বেধেঁছেন একটি ঘর। এ প্রবিবেদক ছেনুয়ারাকে রাতে কেন বাসা বাঁধলেন প্রশ্ন করলে, তিনি কোন দিতে পারেননি এ প্রতিবেককে।
তিনি আরো বলেন, মূলত এ জমির পাশের জমিটি ছিলো তাদের। মাঝখানে একটি পানি যাওয়ার ড্রেন রয়েছে। এ ড্রেন কেটে ফেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে আজ মামলা মোকদ্দমা।
শিক্ষিকা নাছিমা বেগম আরো জানান, সেটি তাদের চাষের জমি। এখানে কোন বাড়ি-ঘর ছিলো না। তারা মামলা করলে কোট ১৪৪ ধারা জারিসহ ব্যবস্থা নিতে ইউএনও ম্যাডামকে বলেন।
তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া শুরু করলে অপরাধীরা তড়িঘড়ি করে জমি দখল দেখাতে রাতের সময়টা বেছে নেন অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। আর ভাড়া করেন পুলিশি সর্ম্পকের লোকজনকে।
তিনি বলেন কেননা উপজেলা দখলবাজ ছেনুয়ারা বেগমের সাথে এলাকার দখলবাজদের আত্মীয়তা আছে। বাবুল হোসেন এদের একজন। তারা এলাকার প্রভাবশালী। পুলিশ-প্রশাসন-নেতা সবাই তাদের পক্ষের ভূমিকায়। না হয় এতো দিন একজন আসামীও কেন পুলিশ গ্রেফতার করছেন না।
তিনি আরো জানান ,তবুও তিনি বিষয়টি বান্দরবান পুলিশ সুপার,উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। তারা তাকে আইন অনুসারে অগ্রসর হতে বলেন।
তবে এ বিষয়ে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী ইনর্চাজ মো. মাঈন উদ্দিন জানান,আসলে এটি অনেক দিরে পুরোনো বিষয় । যেটি বিজ্ঞ কোর্ট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদালতে বিচারাধিন। নিষেধাজ্ঞাও আছে। তবে রাতের আধাঁরে ঘর বাধঁতে আসলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে দূর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এদিকে গত ১৩ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় থানার অফিসার ইনর্চাজ আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিয়ে ব্রিফ্রিং দানের জবাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি বলেছিলেন, এ জমিটি কোর্ট ও তার আদালতে বিচারাধিন এবং নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর রাতের আধাঁরে যে কোন কাজ বেআইনী। এ ছাড়া তার নির্দেশে উপজেলা সার্ভেয়ার ২২ তারিখ সরেজমিন তদন্ত করার কথা।
অপর দিকে এ বিষয় নিয়ে বান্দরবানের নবাগত পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এখানে নাকি ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তার পরেও কিভাবে নতুন বাসা বাধঁলো যাচাই করে দেখা হবে। আর এ বিষয়ে কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।