পিসিজেএসএস ও সন্তু লারমা পাকিস্তানের আইএসআই দ্বারা পরিচালিত


পিসিজেএসএস পাকিস্তানের আইএসআই পরিচালিত, সন্তু লারমা গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি ও ভারতবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত- এমন সব অভিযোগ তুলে প্রবাসী চাকমা ও তাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ভারতীয় চাকমা নেতাদের কাছে খোলা চিঠিতে এসব দাবী করেছেন।
তাদের আরো অভিযোগ, পিসিজেএসএসের কারণে ভারত ও বাংলাদেশে চাকমা সম্প্রদায়ের ওপর “মাদক পাচারকারী ও নার্কো-সন্ত্রাসবাদী” তকমা দেয়া হচ্ছে। এ অপবাদ দূরীকরণের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত চাকমারা খোলা চিঠি দিয়েছেন ভারতের চাকমা নেতৃবৃন্দের কাছে।
খোলা চিঠিদাতারা হলেন-, সুইস জুম্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্চয় চাকমা, প্রজ্ঞা তাপস চাকমা, কানাডাস্থ সিএইচটি ডিফেন্স ফোর্সের সেতু চাকমা, চীনের জুম্ম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নেতা সজীব চাকমা, কোরিয়ান ভয়েস অব জুম্ম ইয়ুথের অ্যাকটিভিস্ট পারিশ চাকমা প্রমুখ।
খোলা চিঠিতে তারা দাবী করেছেন, আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা চাকমা প্রবাসী ব্যক্তিবর্গ, যারা সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত, আপনাদের প্রতি ভারত সরকারের সক্রিয় সহায়তা ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
তাদের মতে, বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে, ১৯ জুন ২০২৫ মিজোরামের লুংলেইয়ে অসম রাইফেলস কর্তৃক ১০.৪৩ কোটি টাকার মাদক জব্দের ঘটনায়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)- সন্তু লারমা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত।
তারপর থেকে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম আমাদের পুরো চাকমা জনগোষ্ঠীকে “নার্কো-সন্ত্রাসী” ও “মাদক চক্রের সদস্য” হিসেবে চিহ্নিত করছে। এই ধারা চলতে থাকলে, সমগ্র চাকমা জাতির উপর এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।
এর আগেও আমাদের ওপর “অনুপ্রবেশকারী”, “অবৈধ শরণার্থী” এবং “অস্ত্রপাচারকারী” অপবাদ দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। যদিও পিসিজেএসএস এসব অভিযোগ অস্বীকার করবে, তবুও নিরপেক্ষ সংবাদ সংস্থা ও গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি নির্দ্বিধায় প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশে আমরা কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছি না, কারণ গত ২৭ বছর ধরে কোনো নির্বাচন ছাড়াই বাংলাদেশ সন্তু লারমাকে ক্ষমতায় রেখেছে, যার বিনিময়ে তারা গৃহযুদ্ধ ও ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।
তারা বলেছেন, আপনারা কল্পনা করতে পারেন, বাংলাদেশ সরকার সন্তু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। যদিও স্পষ্টভাবে জানা যায়, সন্তু লারমা তার সশস্ত্র বাহিনীকে শত্রু রাষ্ট্র ভারতের অভ্যন্তরে রাখে, তার গোষ্ঠীর অস্ত্র ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরা ও মিজোরাম পুলিশ দ্বারা বারবার জব্দ হচ্ছে, এমনকি সর্বশেষ ঘটনাতেও।
ভারতের অবস্থান পরিষ্কার, গত ৪ জুন ২০২৫ তারিখে আগরতলার আমতলী থানায় গ্রেফতার হওয়া পিসিজেএসএস-এর ১৩ জন সদস্যকে ভারত থেকে পুশব্যাক করা হয়েছে। এখন সময় এসেছে ভারতের চাকমা নেতৃত্বকে ভারত সরকারের নীতির সঙ্গে সমন্বয় করার। কারণ মাদক সব জাতি ও ধর্মকে ধ্বংস করে- এতে কোনো ভেদাভেদ নেই।
পিসিজেএসএস দীর্ঘদিন ধরেই চাকমাদের পরিচয়কে অপব্যবহার করছে। ২০১৪ সালে অরুণাচল প্রদেশে বিজু মেলা সফরের পর পিসিজেএসএস নেতারা “অরুণাচল প্রদেশ ডিপ্রাইভড পিপলস ফ্রন্ট” এপিডিপিএফ গঠন করতে সহায়তা করে, যার উদ্দেশ্য ছিল চীন থেকে তাদের পার্টির জন্য অস্ত্র নিয়ে আসা।
পিসিজেএসএস পাকিস্তানের আইএসআই দ্বারা প্রণীত কৌশল অনুসরণ করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। বিজু মেলা, ধর্মীয় স্থান সফর ও চাকমা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন দেশের (ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার) সংযোগ। এসব আবেগনির্ভর বিষয়কে ব্যবহার করে তারা বেআইনি কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে।
প্রধীর তালুকদারের “রেগা” প্রকল্পের মাধ্যমেও চাকমাদের আবেগ ও সরলতাকে ব্যবহার করা হয়েছে, যা এখনো হচ্ছে। এসব কার্যক্রমের আড়ালে পিসিজেএসএস অস্ত্র ও গুলি, গরু, বার্মিজ সিগারেট পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। বাংলাদেশে তারা চাকমা ও অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠী মেয়েদের চীনে পাচারের সাথে যুক্ত ছিল। যারা এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, তাদেরকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতের কলকাতা, আগরতলা কিংবা বিদেশে সন্তু দলের নেতাদের জমানো বিপুল সম্পদ আপনারা দেখেছেন। বিদেশে সন্তু লারমা নেতা সন্তানদের জীবনযাত্রা বহু বড় ব্যবসায়ীর জীবনধারাকেও ছাড়িয়ে যায়। তাদের কোনো চাকরি বা বৈধ ব্যবসা নেই – তাহলে অর্থ কোথা থেকে আসে, তা সহজেই অনুমান করা যায়!
প্রশ্ন হলো, আমরা কি একক কোনো চাকমাকে মাদকাসক্ত, মাদক বা অস্ত্র পাচারের অভিযোগে ধ্বংস হতে দেবো? বা গোটা চাকমা জাতিকে “নার্কো-টেররিস্ট” হিসেবে কলঙ্কিত হতে দেবো? অন্যে জাতি গোষ্ঠীরা সন্তু লারমাকে এককভাবে চিনবে না, চিনবে শুধু পুরো চাকমা জাতিকে।
অতএব, আমরা আপনাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, চাকমা সম্প্রদায়ের গায়ে লাগানো “মাদক ব্যবসায়ী” ও “নার্কো-সন্ত্রাসী” অপবাদ মুছে ফেলতে সন্তু লারমার পিসিজেএসএস দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করুন, ভারত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন এবং আপনাদের এলাকার জনগণকে সন্তু দল থেকে রক্ষা করার জন্য সচেতন করুন।
যাদের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন, তারা হলেন- শান্তনা চাকমা, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, ত্রিপুরা; রসিক মোহন চাকমা, বিধায়ক, তুইচাং বিধানসভা কেন্দ্র, মিজোরাম; প্রভা চাকমা, বিধায়ক, পশ্চিম তুইপুই বিধানসভা কেন্দ্র, মিজোরাম; সম্ভূলাল চাকমা, বিধায়ক, ছাওমানু বিধানসভা কেন্দ্র, ত্রিপুরা; বিমল কান্তি চাকমা, এমডিসি, করমচড়া, টিটিএএডিসি প্রমুখ।