ইউপিডিএফ সদস্য হত্যা মামলার সন্দেহভাজন অভিযুক্ত

রাঙামাটিতে জেএসএসের সশস্ত্র গ্রুপের কোম্পানী কমান্ডার শ্যামল চাকমা আটক

fec-image

রাঙামাটি শহরে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করার সময় ভারতীয় আইডি কার্ডধারী এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটককৃত ব্যক্তি জেএসএস এর সক্রিয় সদস্য এবং কোম্পানী কমান্ডার। তার নাম- শান্তিময় চাকমা। তিনি রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ির সারোয়াতলীর বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছে কোতয়ালী থানা কর্তৃপক্ষ।

তবে তিনি কী কারণে রাঙামাটিতে এসেছেন এবং কার কার সাথে সে যোগাযোগ করেছে, সে সকল বিষয়ে বিশদ খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন উদ্ধর্তন কর্মকর্তা।

এদিকে, আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুল আমিন পার্বত্যনিউজকে জানান, আমরা তাকে সোমবার বিকেলে রাঙামাটি শহরের কে কে রায় সড়ক এলাকা থেকে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করার সময় আটক করেছি। তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, এরপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিরাপত্তাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, আটককৃত ব্যক্তি জেএসএস’র সশস্ত্র গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং কোম্পানী কমান্ডার পদে দায়িত্ব পালন করতো। তিনি প্রায় সময় ভারতে আসা-যাওয়া করতেন। জেএসএস এর সক্রিয় গ্রুপে তিনি শ্যামল চাকমা এবং ভারতে তিনি আশিষ চাকমা নামে পরিচয় বহন করতেন। আটকের পর তার কাছে থাকা ভারতীয় এনআইডি, ভোটার কার্ডসহ, ব্যাংক ডকুমেন্টসহ নানা তথ্য থেকে এটা নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আটক জেএসএস কোম্পানী কমাণ্ডার শ্যামল চাকমার নিকট থেকে পাওয়া বাংলাদেশী ও ভারতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ব্যাংক ডকুমেন্ট

 

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি জেএসএস এর সশস্ত্র গ্রুপের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে তার কাছেই প্রাপ্ত একটি ছবি থেকে। ছবিটিতে দেখা গেছে, অপর দু’জনের সাথে মধ্যখানে তিনি একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে বসেন। সঙ্গী অপর দু’জনের কাছেও একই ধরনের একে-৪৭ এর মতো অস্ত্র রয়েছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, আটককৃত ব্যক্তির নামে ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে এবং সেখানের নাগরিকত্ব রয়েছে তার।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আটককৃত ব্যক্তির সাথে পাহাড়ের একটি আঞ্চলিক দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি ভারতে করুনালংকার ভান্তের ডান হাত এবং বাংলাদেশে ঐ শীর্ষ ব্যক্তি ও ভারতে করুণালঙ্কার ভান্তের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি। আটককৃত ব্যক্তির মোবাইল কললিস্ট চেক করে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জেএসএসের কর্মকাণ্ডে শ্যামল চাকমা ওরফে আশীষ চাকমা এবং তার বর্তমান ছবি।

 

এছাড়াও উক্ত ব্যক্তি ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে আঞ্চলিকদলের জন্য অস্ত্র আনা নেওয়ার দায়িত্ব পালন করে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাঙামাটিতে পিসিজেএসএস (সন্তু) গ্রুপ কর্তৃক এক ইউপিডিএফ (প্রসীত) সদস্যকে হত্যা পরবর্তী মামলা রজু হওয়া একটি মামলায় আটক দেখানো হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ভারতে পলাতক থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীদের এবং দ্বৈত নাগরিকত্বের আড়ালে সেদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে আনাগোনা বেড়ে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ মে ২০২৩ তারিখে ৮.৪৫ ঘটিকায় রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মানিকছড়ির ছক্রাছড়া এলাকায় (মানিকছড়ি এলাকার রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের উত্তর পাশে) পিসিজেএসএস (সন্তু) গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ (প্রসীত) সদস্য রূপান্ত চাকমা ওরফে লেজা (৪৭), পিতা- লক্ষ্মী চন্দ্র চাকমা, গ্রাম- শিমুলতলী, ৮নং ওয়ার্ড, মেরুং ইউপি, দীঘিনালা, খাগড়াছড়িকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে জানা যায়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রূপান্ত চাকমা সাংগঠনিক কাজে যাওয়ার জন্য বের হলে বর্ণিত এলাকায় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা পিসিজেএসএস (সন্তু) গ্রুপের একদল অজ্ঞাত সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনালস্থলেই তিনি নিহত হন। তাকে হত্যার পর ৫/৬ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক হয়ে মানিকছড়ির দক্ষিণ দিকে আমছড়ি-ডিপ্পোছড়ির দিকে চলে যায় বলে জানা যায়।

এ ঘটনায় গত ১৪মে ২০২৩, আনুমানিক রাত ১১.৪৫ ঘটিকায় উক্ত মৃতের স্ত্রী সোনালী চাকমা(৩৮), পিতা- শান্তি বিলাশ চাকমা, সাং- শিমুলতলী, পোস্ট- মেরুং বাজার, থানা- দিঘীনালা, জেলা- খাগড়াছড়ি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। উক্ত এজাহারের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানায় একটি অজ্ঞাতনামা মামলা রজু করা হয়। পরে এই মামলায় সন্দেহভাজন অভিযুক্ত হিসেবে তাকে আটক দেখিয়ে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন