সংকটের ৭ বছরে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ

প্রত্যাবাসনসহ নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চান রোহিঙ্গারা

fec-image

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। এখনও চলছে গণহত্যা। এসব নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রয়রত রোহিঙ্গারা।

এসব রোহিঙ্গারা বলেছেন, জন্মগত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নাগরিক আমরা, গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এটা রিফিউজি জীবন। এমন জীবন চাই নয়, স্বদেশ মিয়ানমারে দ্রুত ফিরতে চাই। কিন্তু যেখানে এখনও রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চলছে। তাই স্বদেশে ফেরত অনেকটা অনিশ্চিত ও অনিরাপদ।

তাই আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে অব্যাহত চাপ সৃষ্টির আহবান জানিয়েছেন তারা।

রোহিঙ্গা সংকটের ছয় বছরে এসে শনিবার (২৫ আগস্ট) উখিয়া টেকনাফের ক্যাম্পে ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের এমন দাবি জানিয়েছেন তারা।

সকাল ১০টা থেকে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যানারে আয়োজন করা হয় সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের।

২৫ আগস্টকে গণহত্যা দিবস মন্তব্য করে ব্যানার, পেস্টুন প্রদর্শনের পাশাপাশি গণহত্যার বিচারের দাবিতে নানা শ্লোগান ছিল এসব আয়োজনে। সমাবেশে অংশ গ্রহণকারি রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই ছিলেন সাদা পোষাক পরিহিত। যেসব পোষাকে ছিল নানা দাবি সহ শ্লোগান।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ৩৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৩-১৪ টি স্থানে পৃথকভাবে এক যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন সমাবেশ। সবচেয়ে বেশি বড় জমায়ত হয়েছে উখিয়ার কুতুপালংস্থ ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঠে।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই সমাবেশ ঘীরে লাখের বেশি রোহিঙ্গা নর-নারীর অংশগ্রহণ দেখা গেছে। যেখানে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দ্রæত শেষ করার দাবি জানিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। যে মোনাজাতে মিয়ানমারের ২০১৭ সালের নির্যাতন নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ বর্ণণা করে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন অংশ গ্রহণকারিরা। নিহতের জন্য দোয়া কামনা করে মিয়ানমারে বর্তমানে চলমান নির্যাতন বন্ধে সৃষ্টিকর্তার সহায়তা চান এবং বিশ্ববাসির সৃদৃষ্টি কামনা করেন। বাংলাদেশে আশ্রয় ও মানবিক সহযোগিতার জন্য কর্তৃজ্ঞ প্রকাশ করেন।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে গান পরিবেশন ছাড়া নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা বলেছেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গনহত্যার মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আরাকানে জাতিগত নিধন চালিয়ে গেছে। ২০১৭ সালের পর এ বছর আরাকানে রোহিঙ্গা জাতি দ্বিতীয় গনহত্যার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে রাখাইন ষ্টেটে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর দ্বিতীয় দফা গনহত্যা চালাচ্ছে।

তারা জানায়, দেশে ফিরে যাওয়ার জন্যে এই গণহত্যা দিবসটি পালন করছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা রেখে অনেকেই বলেন, এই দিনে মিয়ানমার জান্তা সরকার তাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এই দেশে আর কত বছর থাকবো? আর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের স্বদেশে ফিরতে চাই। মিয়ানমার আমাদের দেশ। অনতিবিলম্বে আমাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসন সফল করতে দেশটির পাশে থাকতে হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির বোর্ড সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন, মাস্টার রশিদ আহমদ মাস্টার রহমত উল্লাহ প্রমুখ।

ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হয়েছে। ক্যাম্পে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বৃষ্টির কারনে রোহিঙ্গারা দ্রæত কর্মসূচি শেষ করেছে। কর্মসূচিতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।’

কক্সবাজারের অতিরিক্তি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামসু-দৌজা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ‘জেনোসাইড ডে’ পালন করেছে। শান্তি পূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। সেখানে তাঁরা নিজ দেশে ফিরে যেতে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়া হবার ৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন। এর আগে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে প্রথম বড় সমাবেশ করা হয়, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিবুল্লাহ। পরে তিনি মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরসার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন