লকডাউনের ৬৬ দিনে মহেশখালীর ইউএনও‘র ক্লান্তিহীন যুদ্ধ

fec-image

কক্সবাজার জেলার একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জামিরুল ইসলাম বলেন, ৬৬ দিন পর গত রোববার সরকারি অফিস খুলছে। ভাবছিলাম, তাহলে সাধারণ ছুটির এই ৬৬ দিন কি করলাম। ভেবে পেলাম জীবনের অন্যতম ব্যস্ত একটা সময় কেটেছে এই সময়ে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কি করলাম এই দিনগুলোতে তার একটা সংক্ষিপ্ত তালিকাও করলাম।

জামিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় প্রত্যেক ইউএনও এরকম কাজ করেছেন । অনেকেই এসব রুটিন কাজের বাইরে গিয়ে ও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দারুণ সব কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের এই ক্লান্তিহীন যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

জামিরুল ইসলামের কাজের তালিকা তুলে ধরা হলো:

মোবাইল কোর্ট: এই সময়ে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে এবং সাথে অর্থদণ্ড আদায় করা হয়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি নির্দেশনা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি কারণে এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।

ত্রাণ বিতরণ: করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কারণে কর্মহীন, অসহায় হয়ে যাওয়া মানুষের জন্য দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কার্য সম্ভবত পরিচালিত হচ্ছে এখন। মহেশখালী উপজেলার সরকারি, বেসরকারি প্রায় ২০ হাজার পরিবারের ত্রাণ বিতরণ সরাসরি তত্বাবধান করেছি। অনেককে গোপনে রাতের আঁধারে খাবার পৌঁছে দেওয়া লেগেছে। লক্ষ্য রাখতে হয়েছে, যেন কর্মহীন ও অসহায় হয়ে যাওয়া কোন শ্রেণি পেশার মানুষ বাদ না পড়ে।

হোম কোয়ারেন্টিন: বিদেশ এবং দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আগত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে নিয়মিত অভিযান পরিচালন করতে হয়েছে। এক প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় অর্থদণ্ড করা হয়েছে।করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি এবং আশপাশ এলাকা লকডাউন করতে হয়েছে।

সরকারের ওএমএস ও হতদরিদ্রের জন্য ১০টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ এর উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়মিত মনিটর করতে হচ্ছে। মহেশখালী উপজেলার প্রায় ১৩হাজার ২৬২ পরিবারকে এই চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন ভাতা ভোগীরা যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে দ্রুত ভাতা পায়, তা নিশ্চিত করতে হয়েছে। মহেশখালী উপজেলায় প্রায় ১৩,০০০ ভাতাভোগী এ ভাতা পেয়েছেন।

বোরো ফসল যাতে বৃষ্টি বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কৃষি অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ধান কাটার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।

কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পান, সেজন্য সরকারি মূল্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যে মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের নির্বাচন করা এবং সঠিকভাবে ধান সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে কওমি মাদ্রাসা এবং মসজিদগুলোর জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দের অর্থ যথাযথভাবে বিতরণ করতে হচ্ছে । মহেশখালী উপজেলায় সবমিলিয়ে ৪৬৩টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৩,১৫,০০০ টাকা বরাদ্দ এসেছে যা সবার মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুসারে সব হাট-বাজার খোলা মাঠে স্থানান্তর করতে হয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। এই কার্যক্রমে লিফলেট, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ করতে হয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমে সব স্থরের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়েছে। নৌ বাহিনী, পুলিশ‘সহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে।

এই সংকটকালীন সময়েও সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে নিতে হয়েছে।

উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিভিন্ন এনজিওদের সমন্বয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে জীবাণুমুক্তকরণের কাজ করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে কর্মহীন ও অসহায় মানুষের জন্য ২,৫০০ টাকা পাঠানোর লক্ষ্যে খুব স্বল্প সময়ে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যতটুকু নির্ভুল করে তালিকা করা যায়, সে কাজ করা হয়েছে। এজন্য বেশ কয়েকটি নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে।

মহেশখালীর ইউএনও বলেন, তালিকা অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে। এরকম সম্পন্ন করা আরও অনেক কাজের তালিকা রয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সব সময় জনগণের সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউএনও, করোনাভাইরাস, মহেশখালী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন