অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ততায় ৭২ ঘন্টার হরতাল পালিত হলো রাঙামাটিতে
জেলা সংবাদদাতা, রাঙামাটি:
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া প্রস্তাবিত পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধন আইন বাতিলের দাবীতে রাঙ্গামাটিতে বাঙ্গালী সংগঠনের ডাকা ৭২ ঘন্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। পার্বত্য সম অধিকার আন্দোলনের কয়েকজন নেতা সোমবার হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষনা দিলেও অপর ৪টি বাঙ্গালী সংগঠন তা প্রত্যাখান করায় রাঙ্গামাটিতে মঙ্গলবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে ৭২ ঘন্টা হরতালের শেষদিন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার সড়ক পথে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। দোকান পাট খোলেনি। রাঙামাটি জেলার ছয়টি উপজেলার নৌ পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি শহরের অভ্যন্তরীণ ও দুর পাল্লার সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ ছিল। স্কুল, কলেজ ব্যাংক বীমা খোলা থাকলেও উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। সকাল থেকে হরতাল সমর্থনকারীরা শিমুলতলী, মানিকছড়ি. ভেদভেদী, বনরুপা, কাঠালতলী, রির্জাভ বাজার, তবলছড়িতে পিকেটিং করেছে। রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে মিছিল করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। আইন শৃংখলা রক্ষায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
এদিকে বহুল বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রী সভায় অনুমোদন দেয়ার প্রতিবাদে এবং সংশোধনী প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে রাঙামাটি সহ তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করায় জেলাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাঙালীদের বিভিন্ন সংগঠন। সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৭ মে তিন পার্বত্য জেলায় বহুল বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রী সভায় অনুমোদন দেয়ার প্রতিবাদে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের ডাকে গত রবিবার থেকে তিন পার্বত্য জেলায় টানা ৭২ ঘন্টার সর্বাত্মক হরতাল পালনের ঘোষনা দেয়া হয়।
আজ হরতালের শেষদিন পর্যন্ত স্বতঃর্ফুত ও শান্তিপূর্ণভাবে সর্বাত্মক হরতাল পালন করায় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, পরিবহন মালিক সমিতি, নৌ-যান মালিক সমিতি, ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ও প্রশাসনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা আহবায়ক বেগম নুরজাহান, পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মো: আলমগীর হোসাইন। নেতৃবৃন্দ আগামীতে সংগঠনের যে কোন কর্মসূচীতে স্বতঃর্ফুতভাবে অংশগ্রহণ করার আহবান জানান।
অন্যদিকে স্বতষ্ফুর্তভাবে হরতাল পালন করার জন্য পার্বত্যবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে অবিলম্বে পার্বত্য ভূমি কমিশন (সংশোধীত) আইন ২০১৩ইং এর মন্ত্রিসভার অনুমোদন বাতিল করা না হলে কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ।
গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,স্বাধীন বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম এর দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর বিরোধীতা উপেক্ষা করে একটি গোষ্ঠীকে খুশি করতে বর্তমান সরকার সংবিধান বহির্ভূত পার্বত্য ভূমি কমিশন (সংশোধীত) আইন ২০১৩ইং এর মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের সামিল। যা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপক্ষের শক্তি বীর বাঙ্গালী সমাজ কখনও মেনে নেবে না।
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউল আলম হুমায়ুন ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল জামান মনির হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান। গণমাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত প্রচার হওয়ার পর তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত দেয় স্থানীয় বাঙ্গালী সংগঠন গুলোর নেতৃবৃন্দ। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ৭২ঘন্টার হরতাল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল রাঙ্গামাটির স্থানীয় ৪টি বাঙ্গালী সংগঠন।