আর কত বছর পর চালু হবে পানছড়ির ‘ভুতুড়ে’ ছাত্রাবাসটি?

HOSTEL N copyশাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

নির্মাণের চার বছর সময় পার হলেও চালু হচ্ছেনা খাগড়াছড়ি জেলাধীন পানছড়ি উপজেলাস্থ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসটি। ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ছাত্রাবাসের ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে আজো নিয়োগ হয় নি এবং কবে চালু হবে তাও কেউ জানাতে পারছে না। অনেক বে-রসকিরা রসিকতা করে ভবনটিকে ভুতুড়ে ভবনও বলে থাকে। তাই ভুতের ভয়ে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা আবাসন ভবনটির আশপাশ এলাকায় আসে না। তাদের ভয় কখন যে ভুতে ধরে। তাছাড়া বর্তমানে ভবনটির ভিতরে ধরেছে বড় বড় ফাটল। দীর্ঘ বছর বন্ধ থাকার কারণে মাকড়শার জাল ও উপচে পড়া গন্ধ যেন ভালো মানুষকেও রোগী বানিয়ে হাসপাতালে পাঠাবে। তাছাড়া নির্মাণের পর স্থাপন করা সোলার, জেনারেটর, ব্যাটারী, পানির ট্যাংক, সিলিং ফ্যান, বৈদ্যুতিক বাল্ব ও বাথ রুম সহ নানা সরঞ্জামাদি ব্যবহারের আগেই সব নষ্ট।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ এই ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করেছিল। ছাত্রাবাসটির নির্মাণ কাজ ২০১০ সালের জুন মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১১ সালের মার্চে। প্রায় ৩ মাস হাতে রেখেই ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ছাত্রাবাসটির নির্মাণ কাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।

ছাত্রাবাসটি চালু করা হলে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার শিক্ষা সুবিধা বঞ্চিত ৮০ জন দরিদ্র শিক্ষার্থী আবাসনের সুবিধা পাবে এমনটাই ধারণা ছিল উপজেলাবাসীর। এলাকাবাসীর অভিমত, এর ফলে দারিদ্রের কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেকটাই কমে যাবার কথা ছিল। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা আবাসন ভবনের বেহাল দশা দেখে ‘আল্লাহ, বুদ্ধ, ভগবান ও ইশ্বরের’ নাম নিয়ে দৌড়ে পালাবে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।

পানছড়ি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজিয়া বেগম জানান, ভবনটির বাহিরের অংশ চাকচিক্য দেখালেও ভিতরের অংশে কাজের মান ছিল নিম্ন মানের। তাই ভবনটির এই বেহাল দশা। বর্তমানে ভিতরের বড় বড় ফাটল ধরার কথাও তিনি নিশ্চিত করেন। তাছাড়া উদ্বোধনের সময়ও জিনিস পত্রাদি নষ্ট এবং অকেজো ছিল বলে জানান।

এ ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী মো: আনোয়ার হোসেন জানান, কুমিল্লার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ময়নামতি বিল্ডার্স নির্দিষ্ট সময়ের ৩ মাস আগেই নির্মাণ কাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন। ৮০ জন আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীর খাওয়া-দাওয়ার খরচ বহন, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সব কিছুই করার কথা ছিল পার্বত্য জেলা পরিষদের। কিন্তু কি কারণে এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেয় নি এবং কেন ছাত্রাবাসটি চালু করছেনা তা শুধুমাত্র জেলা পরিষদই জানে।

পানছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: মোশারফ হোসেন জানান, জেলা পরিষদে এ ব্যাপারে কয়েকবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে কিন্তু অদ্যবদি কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।

উল্লেখ্য যে, একই অর্থবছরে তিন পার্বত্য জেলায় মোট ১০টি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হলেও এর কোনোটিতেই এখন পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয় নি। ছাত্রাবাস পরিচালনার জন্য ০১ জন তত্ত্বাবধায়ক, ০১ জন অফিস সহকারী ও ০৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে। এই ছাত্রাবাসে ৪০ জন ছাত্র ও ৪০ জন ছাত্রী থাকার সুযোগ পাবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন