আলীকদমে জব্দ করা পাথরের নিলাম অনুষ্ঠিত, বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধভাবে পাথর আহরণ

10884991_810466322357220_1774954109_n
আলীকদম প্রতিনিধি :

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণ কাজে কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাথর সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ, একাধিক হেডম্যান, কার্বারী ও ইউপি মেম্বারগণ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। সড়ক নির্মাণ কাজে অবৈধভাবে পাথর সরবরাহের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোতাকাব্বীর আহমেদ গত বছরের সেপ্টেম্বরে থিংকু পাড়া আর্মি ক্যাম্প এলাকায় ৪ হাজার ৪৬৯ ঘনফুট পাথর জব্দ করেন। বুধবার (১৪ জানুয়ারি) জব্দ করা এসব পাথর স্থানীয় ঠিকাদার ও পাথর ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য নিলামে এক লক্ষ ৪৫ হাজার ২৪২ টাকায় বিক্রি করা হয়।

জব্দ করা পাথরের প্রকাশ্য নিলামকালে ইউএনও মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, এ সম্পদ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাভূক্ত। জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় পাথরের পারমিট ইস্যু করে থাকেন। পারমিট ছাড়া পাথর আহরণের কোন সুযোগ নেই। যে কোন উন্নয়ন কাজে সরকার সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। সুতরাং রাস্তা উন্নয়নের অজুহাতে বে-আইনী পন্থায় পাথর আহরণ ও ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।

এদিকে থানচি সড়ক নির্মাণ কাজে অবৈধ পন্থায় পাথর আহরণ বন্ধ চেয়ে পৃথক দুইটি অভিযোগ গত বছরের ২০ অক্টোবর, ১৮ নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা প্রশাসক বরাবর দায়ের করা হয়েছে। এ অভিযোগপত্রে উপজেলার ২৮৭ নং তৈন, ২৮৮নং আলীকদম, ২৯০নং মাংগু ও ২৯১নং তৈনফা মৌজার হেডম্যান, পাড়া কার্বারী, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা স্বাক্ষর করেন।

অভিযোগে দাবি করা হয়, পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন ছড়া ও ঝিরির ভূগর্ভস্থ ও ভাসমান পাথর গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় ও বহিরাগত কতিপয় ঠিকাদার অবৈধভাবে আহরণ করছে। এসব পাথর আহরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। অবৈধ উপায়ে আহরিত পাথর আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয়রা পাথর উত্তোলনে বাঁধা দিলে সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে হয়রানী করার হুমকী দিচ্ছে।

আলীকদম উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো জানান, আলীকদম-থানচি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে পাথর আহরণের বিষয়ে ইতোপূর্বে উপজেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। অবৈধভাবে পাথর আহরণ বন্ধে দেরি করা হলে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারী রবিদয় তঞ্চঙ্গ্যা প্রু জানান, গত কয়েক মাস ধরে দেবতা ঝিরি, কাইন্দালা ঝিরি, মিয়ং ঝিরি, গুইসাপ ঝিরি, ফাতহ্ ঝিরি, গোদার ঝিরি, ব্যাঙ ঝিরি, কচ্ছপ ঝিরি, চম্পা ঝিরি, আলু ঝিরি, রংরাং ঝিরি ও দুছরি খাল হতে কতিপয় ব্যক্তি নির্বিচারে পাথর তুলছে। পাথর আহরণকারীদের আগ্রাসী তৎপরতায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

জানা গেছে, পাহাড়ি ও ছড়া ও ঝিরিতে থাকা পাথরের পারমিট ইস্যু করেন জেলা প্রশাসন। গত ডিসেম্বরে স্থানীয় একজন ঠিকাদারের নামে ২০ হাজার ঘনফুট পাথরের পারমিট অনুমোদন হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন আলীকদম-থানচি সড়কের ৭/৮ কিলোমিটার এলাকা থেকে ২২/২৩ কিলোমিটার এলাকার রাস্তার দু’পাশে মজুত করা হয়েছে শত শত ঘনফুট পাথর। মজুত করা এসব পাথরের বেশির ভাগেরই অনুমোদন নেই।

নির্মাণাধীন এ সড়কের ১০ কিলোমিটার এলাকায় পাথরের অবৈধ মজুদের অভিযোগে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ মোবাইল কোর্টের ৪ হাজার ৪৬৯ ঘনফুট পাথর জব্দ করেন।

বুধবার থিংকু পাড়া আর্মি ক্যাম্প এলাকায় জব্দ করা এসব পাথরের প্রকাশ্য নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার অবৈধ পাথর আহরণ বন্ধে উপস্থিত ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া পাথর তোলা হলে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

অভিযোগে আরো প্রকাশ, নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পানির উৎস নষ্টের আশংকা রয়েছে। পানির উৎস নষ্ট হলে স্থানীয় চাষাবাদ ব্যাহত হবে। এ এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হবে। পাথর আহরণের জন্য অনেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটা ও রাস্তা তৈরি করা যায় না।

জানতে চাইলে আলীকদম-থানচি সড়কের নির্মাণ কাজের ঠিকাদার আবুল কালাম বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার ঘনফুট পাথরের অনুমতিপত্র পেয়েছি। তবে নির্মাণ কাজে অনেকে পাথর দিলেও সবার অনুমতিপত্র আছে কিনা আমি জানিনা’।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন