নানিয়ারচরের ১৪ মাইল ও খাইল্যাপাড়ায় সেনাক্যম্প স্থাপনের দাবি স্থানীয় নিরস্ত্র বাঙালীদের

naniarchar

মুজিবুর রহমান ভুইয়া, রাঙামাটির নানিয়াচর থেকে ফিরে- ৩ :

রাঙামাটির নানিয়ারচরের ১৪ মাইল ও ১৭ মাইল এলাকায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত আর নিরস্ত্র বাঙালীরা। তারা বলেন, এখানকার বাঙালীদের জান-মালের নিরাপত্তা বলতে অবশিষ্ট কিছুই নেই। এখানে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা না হলে একদিন এখান থেকে বাঙালীদের উচ্ছেদ হতে হবে। আর তখন এখানকার মানুষ তাদের ভিটে-মাটি ছেড়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

সম্প্রতি নানিয়ারচর ৩নং বুড়িঘাট ইউনিয়নের তরুণীকার্বারীপাড়া ও ২নং নানিয়ারচর ইউনিয়নের তৈচাকমার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আর দেশের ভূমি রক্ষায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালীরা।

গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে ও ৬ জানুয়ারি রাতে দুই দফায় স্থানীয় ও বহিরাগত পাহাড়ী সন্ত্রাসী কর্তৃক তাদের সৃজিত প্রায় ৭ লাখ আনারস ও অর্ধ লাখ সেগুন গাছ কেটে নেয়ার পর শুরু হয়েছে বাঙালীদের পাহাড় থেকে বিতাড়ণ করতে তাদের মালিকানাধীন ভূমি দখল সহ নানামুখী ষড়যন্ত্র। বাঙালিদের দাবি পাহাড়ী এসব ষড়যন্ত্রে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে উস্কানী দিয়ে যাচ্ছে কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও দেশী-বিদেশী এনজিও এবং দাতাগোষ্ঠী ।

10917595_809582409112278_1011673690_n

নিজেদের নিরাপত্তা দাবি করে স্থানীয় বাঙালী নারী শ্রমিক নুরজাহান বেগম বলেন, এক সময় শান্তিবাহিনী আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি স্বামীকে হারিয়ে জীবন-সংগ্রাম করে এ মাটি আঁকড়ে ধরে থেকেছি। এ মাটিতে শ্রম দিয়ে নিজের ভরণ-পোষণ চালিয়েছি। আমার রুটি-রুজির শেষ জায়গাটাও আজ পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা শেষ করে দিল। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করে ক্ষতিপুরণ দাবি করেন।

একইভাবে বাঙালীদের নিরাপত্তা ও ভূমি রক্ষার জন্য নানিয়ারচরের বগাছড়ি এলাকায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান অপর নারী শ্রমিক শান্তিবাহিনীর হাতে নিহত আমজাদ হোসেনের মেয়ে রানী বেগম। তিনি বলেন, একসময় এ মাটিতে শান্তিবাহিনী আমার বাবাকে হত্যা করেছে আর এখন তারা আমাদেরকে এই মাটি ছাড়া করতে চাইছে। তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আনারস বাগান ধ্বংস করে আমাদের রেকডীয় ভূমি দখল করে নিয়েছে। তাই আমাদের জানমাল ও নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হোক।

স্থানীয় মো: ইউনুছ আলী বলেন, পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা ভূমি দখল করে বাঙালীদের এখান থেকে উচ্ছেদ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বাগান ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি। স্বশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন বাঙালী এলাকায় তারা মহড়া দিচ্ছে। বাঙালীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। সেনা টহল থাকলেও তা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলে আমরা মনে করছিনা। তাই তিনি বাঙালীদের সৃজিত বাগান, জানমাল আর ভূমি রক্ষায় নানিয়ারচরের ১৪ মাইল ও খাইল্যাপাড়া এলাকায় পৃথক দুটি সেনা ক্যাম্প স্থাপনেরও দাবি জানান সরকারের কাছে।

ভূমি উদ্ধার কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমান এ প্রতবেদককে বলেন, পাহাড়ীরা ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বাঙালীদের আনারস ও সেগুন বাগান ধ্বংস করেছে। তাদের ছোট ছনের ছাউনির ৩/৪টা ঘর পুড়তে দেখেছি। অথচ তারা বেশি ক্ষতিপুরণের প্রত্যাশায় আঞ্চলিক দলের ক্যাডারদের উস্কানীতে নিজেদের বাদবাকী ঘরগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে যা শুধু আমরা নয়, প্রশাসনের লোকজনও দেখেছে। এখন ওরা বাঙালীদের ভূমিতে সরকারি টাকায় বাড়ি-ঘর নির্মাণের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি যেকোন মূল্যে বাঙালীদের ভূমি রক্ষা করা হবে জানিয়ে বাঙালীদের নিরপত্তা আর দেশের ভূমি রক্ষায় ১৪ মাইল ও খাইল্যাপাড়া এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান।

বাঙালীদের সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবিকে যৌক্তিক বলে মনে করেন নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। স্থানীয় বাঙালীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনার পরপরই সেনা ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে দাবি করে বলেন, সেখানে সেনাক্যাম্প স্থাপনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাঙালীদের মালিকানাধীন ভূমিতে সরকারি টাকায় পাহাড়ীদের পুনর্বাসন বা নতুন বাড়ি-ঘর নির্মাণের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বাঙালীদের ভূমিতে নয় পাহাড়ীদের ভূমিতেই তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন