আলীকদমে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট

Water Crisis

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):
পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। পানিশুন্যতা বিরাজ করছে উপজেলার আনাচে কানাছে স্থাপিত বেশীরভাগ রিংওয়েল ও টিউবওয়েলগুলোতে। দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দুর্গম এলাকার উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার চিত্র ভয়াবহ। প্রতিবছর শুষ্কমৌসুমে এ উপজেলায় পানীয় জলের সংকট থাকলেও সমাধানে সরকারী বেসরকারী কোন পর্যায়ে সমন্বিত কোন উদ্যোগের খবর নেই।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঝিরি-ছড়া ও ঝরণার পানি দিয়ে চলছে নিত্যদিনের কাজ কারবার। অন্যসব মৌসুমে ঝিরি-ছড়া ও ঝরনার পানি খাবারসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা গেলেও তীব্র তাপদাহে তা দুষিত হয়ে পড়েছে। খাবার পানির প্রকট সংকটে পড়েছে দুর্গমের বাসিন্দারা। পাহাড়ি এলাকার লোকজন বলছেন, দীর্ঘ খরায় ঝিরি-ছড়ার পানির উৎস বিলুপ্ত গেছে। তীব্র তাপদাহে পাখ-পাকালি ও বন্যপ্রাণীরা পানির উৎস খোঁজে ঝিরি-ছড়ায় নেমে আসছে। যারফলে পানির শেষ উৎসগুলো এখন দুষিত হয়ে পড়েছে।

শুধু দুর্গম এলাকায় নয়। উপজেলা সদর এলাকায়ও বহু পাড়ায় পানির সংকট চলছে। ১নম্বর আলীকদম ইউনিয়নের উত্তরপালং পাড়া, পূর্বপালং পাড়া, প্রভাত পাড়া, সিলেটি পাড়া ও আবুমাঝি পাড়া এবং ২ নম্বর চৈক্ষং ইউনিয়নের পূর্ণবাসন, বাঘেরঝিরি, যোগেন্দ্র পাড়া, তারাবনিয়া, রোয়াম্ভূ বশির সর্দার পাড়া ও নয়াপাড়া এলাকায় যেসব কুয়া, নলকূপ ও রিংওয়েল রয়েছে সেগুলো প্রায় আশিভাগই পানি মিলছে না। এছাড়াও প্রতিবছর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দিনদিন পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। যেখানে সামান্য পানি মেলে সেখানে কলসি নিয়ে ভীড় জমান মহিলারা। এক কলসি পানি পেলেই বুঝি স্বস্তি ফিরল মনে।

Alikadam water news Bandarban

তীব্র পানি সংকটে অতীষ্ট স্থানীয় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়নব ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ফেসবুক স্টাটাসে লিখেন- “পরিবার প্রতি ভাগে পাই দৈনিক দুই কলসি পানি। এই দুই কলসি পানিতে খাওয়া, রান্নাবান্না, থালাবাটি ধোয়া সব সামাল দিতে হয়। চাল ধোয়া পানি জমা করে রাখি থালাবাটি ধোয়ার জন্য। টয়লেট ও গোসলের জন্য প্রতি লিটার ১ টাকা করে পানি কিনে নিতে হয়। চাতকের মত তাকিয়ে থাকি কখন বৃহস্পতিবার আসবে! কখন বাড়ি (চকরিয়া, কক্সবাজার) যাব!! কখন মন ভরে গোসল করবো!!! চৈত্র ও বৈশাখ মাস না আসতেই এই অবস্থা! না পরে কি হয়! এখন একটাই উপায়, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা। সবাই একটু দোয়া করুন যেন খুব শ্রীঘ্রই বৃষ্টি হয়। আর যদি কারো মনে দয়া হয় তবে চাইলে পানি নিয়ে বেড়াতে আসতে পারেন। মন থেকে খুশি হব”।

স্থানীয় সুত্রগুলো বলেছে, উপজেলার পোয়ামূহুরী, কুরুকপাতা, দোছরী ও মাংগু এলাকায় শতাধিক পাহাড়ি পল্লীতে সহস্রাধিক পরিবার বসবাস করছে। সেখানে এখন নিরাপদ পানির উৎস বলতে নেই। গ্রীষ্ম মৌসুম আসতে না আসতে এসব ঝিরি-ছড়ার পানির উৎসও শুকিয়ে যায়। প্রতিবছরই পানির জন্য হাহাকার অবস্থা সৃষ্টি হয় দুর্গমের বাসিন্দাদের। যুগযুগ ধরে ঝিরি-ছড়ার পানি দিয়ে চললেও এখন তাও মিলছে না। দুষিত পানি পান করে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে উপজেলার দোছড়ি ও পানবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এতদিন যে সকল রিংওয়েল, কুপ কিংবা ঝিরি-ছড়া থেকে খাবার পানি পাওয়া যেত, এখন সেখানেও পানি মিলছে না। এক কলসি পানির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। প্রতিবছর এই মৌসুমে দুর্গম আদিবাসী পাড়ায় পানিবাহিত নানা রোগে শিকার হন পাড়ার লোকজন। বিশেষ করে জুমে আগুন দেয়ার পর পাহাড়ে ঝিরি-ছড়ার পানি শুকিয়ে যায়। দেড় মাসের বেশি সময়ের আগে জুমে আগুন দেওয়া হয়েছে। পানির শেষ উৎসও নেই এখন।

দোছরির স্বাধীন মনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এবছর দীর্ঘ খরায় পানির শেষ উৎসটুকুও নেই। দুর্গম কুরুকপাতা এলাকার বিদ্যামনি ত্রিপুরা বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর পানির সংকট বেড়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে এলাকায় উন্নয়মূলক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি কোনো কালে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী মনির আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

আলীকদম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন জানান, উপজেলার সবখানেই পানি সংকটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যেসব রিংওয়েল সরকারীভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেওয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কোনো প্রকল্প নেই বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন